কামরুল আহসান : ক্রান্তীয় অঞ্চল বলতে গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলকে বুঝানো হয়। যেসব অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে এবং বছর জুড়ে তাপমাত্রার বিশেষ কোনো পরিবর্তন হয় না সেসব অঞ্চলকে ক্রান্তীয় অঞ্চল বলে। ক্রান্তীয় অঞ্চলে দুধরনের আবহাওয়া বিদ্যমান থাকে, শুষ্ক ও আর্দ্র। বাংলাদেশে ক্রান্তীয়-উপক্রান্তীয় আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চলের বিস্তৃতি সর্বাধিক। এর জন্য বাংলাদেশের জন্য একটা অত্যন্ত খারাপ সংবাদ আছে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন ক্রান্তীয় বনাঞ্চল এখন আর আগের মতো অক্সিজেন নির্গত করছে না। বরং ব্যাপারটা উল্টো হয়ে গেছে। অক্সিজেনের চেয়ে এখন গাছগুলো কার্বন ডাই-অক্সাইডই নিঃসরণ করছে বেশি। এটা নিঃসন্দেহেই একটা ভয়াবহ খবর। কারণ গাছ বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড টেনে নিয়ে তা সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে অক্সিজেনে রূপান্তর করে পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখে। শ্বাসের মাধ্যমে অক্সিজেন গ্রহণ করি আর প্রশ্বাসের মাধ্যমে কার্বন- ডাই অক্সাইড ত্যাগ করি, সেই কার্বন গাছ টেনে নিয়ে অক্সিজেনে রূপান্তর করে আমাদের বেঁচে থাকা নিশ্চিত করে।
কিন্তু, শিল্প বিপ্লবের পর থেকে কার্বন ভিত্তিক জ্বালানি দহনের ফলে বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের ঘনত্ব এতো দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে যে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সাথে সাথে জীবন জগতের জলবায়ুর উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে। বায়ুমন্ডলে কার্বনের পরিমাণ এখন এতোই বেড়ে গেছে যে গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের গাছগুলো এখন আর তা টেনে নিয়ে অক্সিজেন রূপান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারছে না। জার্নাল সায়েন্সে প্রকাশিত বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওডস হোল গবেষণাকেন্দ্রের প্রতিবেদনটিতে জানা যায় অক্সিজেন-কার্বন ডাই-অক্সাইড ভারসাম্য রক্ষার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য বনাঞ্চলগুলোর ক্ষমতা খুব দ্রুত হারে কমে আসছে। ২০০৩ সালের পর কী বিশাল সংখ্যক বনভূমি হারিয়েছে তা জানা গেছে কৃত্রিম উপগ্রহ মারফত প্রাপ্ত লেজার প্রযুক্তির ছবি থেকে। ড. অ্যালেসান্ড্রো ব্যাকিনি বলেছেন, আমরা যদি সত্যিই বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে চাই তাহলে বনাঞ্চলগুলো রক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই। পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণ যতোখানি সম্ভব দ্রুত কমাতে হবে। ক্রান্তীয় বনাঞ্চল এখন যতোখানি কার্বন টেনে নেয় তারচেয়ে বেশি নিঃসরণ করে। গবেষণায় দেখা গেছে ৪৩৭ টেরাগ্রাম কার্বন টেনে নিয়ে ৬৬২ টেরাগ্রাম কার্বন নির্গত করে ক্রান্তীয় বনাঞ্চল। নিঃসরণের পরিমাণ ল্যাটিন আমেরিকা থেকেই আসে ৬০ শতাংশ, ২৪ শতাংশ হয় আফ্রিকায় আর ১৬ শতাংশ আসে এশিয়া থেকে। গবেষক দলের আরো একজন বিজ্ঞানী ড. ওয়েন ওয়াকার জানিয়েছেন, গত কয়েক দশকে ঠিক কতোখানি বনভূমি ধ্বংস হয়েছে তার চিত্রায়ন করা সত্যিই কঠিন। বড় ও ছোট অনেক বনভূমিই ধ্বংস হয়েছে। অনেকে অনেক প্রয়োজনে কাঠ বা জ্বালানির জন্য গাছ কাটে, ছোট জায়গার ক্ষেত্রে সেটা ছোট বিষয় বটে, কিন্তু, তার প্রভাব পড়ে সমস্ত বৈশ্বিক উষ্ণতায়। তাই প্রতিটা গাছ কাটার ব্যাপারেই সাবধান থাকা উচিত। ইন্ডিপেন্ডেট