আশিক রহমান : বিএনপির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা আমি দেখি না। কারণ যদি দেখতাম গত দশ বছরে ক্ষমতার বাইরে থেকেও দলটি সমাজ নিয়ে চিন্তা করে, রাষ্ট্র পরিচালনার বাইরে থেকে কোনো পরিচ্ছন্ন ধারণা মানুষকে দিয়েছে, তাহলে আশা করার কারণ থাকতÑ আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন শিক্ষাবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।তিনি বলেন, মানুষের তো অনেক র্দুবলতা থাকে। কিন্তু একটি রাজনৈতিক দল যদি একটা কর্মসূচি বারবার জনগণের কাছে প্রচার করে যে আমরা এই কাজ করব ক্ষমতায় গেলে, তাহলে সেই কাজ কিছু হলেও করতে হয়। কিন্তু আধো-আধো কথা বলে ক্ষমতায় গেলে সে তো কোনো কমিটমেন্ট হলো না। তারা ভুলে যাবে, জনগণও ভুলে যাবে। এটাই স্বাভাবিক।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি সামনে এলেই দেশ গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করবে এমন মনে করার কোনো কারণ দেখি না আমি। তাদের কোনো চিন্তাভাবনা কিছুই তো নেই গণতন্ত্রের জন্য। ব্যক্তিগতভাবে বিবৃতি দিয়ে চিন্তা করলে তো হয় না। একটা চিন্তা বাস্তবায়িত করতে গেলে ক্রমাগতভাবে সেটা প্রচার করতে হয়।
অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ছয়দফা দিয়ে স্বায়ত্বশাসন, স্বাধীনতা এ নিয়ে আওয়ামী লীগ খুব দৃঢ়তার সঙ্গে তখন শেখ মুজিবের নেতৃত্বে প্রচার করেছিল। এখন গণতন্ত্রকে বুঝবার, গণতন্ত্রের জন্য কর্মসূচি নেওয়ার এবং সে রকম দৃঢ় চিত্তে কাজ করার মতো মেধা নেই, নেতৃত্বও নেই। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, বামপন্থীসহ সব রাজনেতিক দলের নৈতিক চেতনা নিম্নগামী। কোনো দলেরই নৈতিক চেতনা নেই।
তিনি বলেন, বাম দলগুলো কিছু করতে পারছে না। এটা নতুন নয়। ১৯২১ সালে এখানে কমিউনিস্ট পার্টি হয়েছে। তিরিশ-চল্লিশ বছরের ইতিহাস দেখলে দেখব তারা শুধু ভুগেছে। কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাস দেখলে দেখব যে, ষাটের দশক থেকে তারা কেবল ভেঙেছে। এবং কোনো পরিকল্পিত ওয়েতে আসতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, এখনকার আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক উপায়ে গঠিত হয় না। সব ক্ষমতা একজনের হাতে দিয়ে দেওয়া হয়, একজনই কমিটি গঠন করে। পার্লামেন্টের ভেতরে যিনি প্রধানমন্ত্রী থাকেন তার একচ্ছত্র ক্ষমতা। এই ক্ষমতা এভাবে থাকলে গণতন্ত্র হয় না। এগুলো পরিবর্তন করার সে রকম তাগিদও নেই। এ নিয়ে দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকীয়, টক শোতে ভাসা ভাসা কথা বলা হয়। একটা দলের ভেতরে নৈতিক অনুশীলনের মাধ্যমে কর্মসূচি ঘোষণার মধ্যে প্রচার করে পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করা হয়। সেটা হলে অতীতে কিছু কিছু পরিবর্তন হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা বেগম খালেদা জিয়ার ওপরে নির্ভরশীল। বিএনপির দলটার মোট চরিত্রই তাই। তাদের মধ্যে কোনো গণতান্ত্রিক মন নেই। একনায়কতান্ত্রিক ব্যবস্থার দ্বারা তারা ক্ষমতায় গিয়ে আগে যেমন কাজ করেছে, তার চেয়েও খারাপ কাজ করবে। এর মধ্যে তো আমি কোনো সুষ্ঠু ভালো রাজনীতি দেখি না। এই নেতারা খালেদা জিয়াকে দেবতা বানিয়েছে। সেই দেবীই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগও একই চরিত্রের। সমস্ত ক্ষমতা একজনের হাতে দাও। সেই একজন যা কিছু চালায় সেটা আমরা মেনে চলব। এবং আমাদের ঐক্য রক্ষা করতে হবে। তারপরও ঐক্য রক্ষা হচ্ছে না। স্বার্থের যে সমাধান করা দরকার এটা পারছে না।
তিনি বলেন, ছাত্রলীগ ছাত্রলীগের কর্মীকে মারছে। আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগকে মারছে। কাজেই রাজনীতি নিয়ে যারা খুব আশাবাদী যে আমরা খুব ভালো করব, আমি বলি রাজনীতির বর্তমান প্রক্রিয়া পরিবর্তন করলে, উন্নত রাজনীতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করলে অবশ্যই করা সম্ভব। এই নির্বাচন সর্বস্ব রাজনীতি দিয়ে ভালো কিছু হবে না। বাংলাদেশ করতে পারছে না। জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে পারছে না। ভবিষ্যতেও পারবে না। দুশ্চরিত্র রাজনৈতিক দল দিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে? নির্বাচন কোনো রকম হবে হয়তো। ২০১৪ সালের নির্বাচন হয়েছে না? এর আগেও নির্বাচন হয়েছে। একই ধারাবাহিকতায় নির্বাচন হতে পারে। তবে এই নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্র হয় না বা দেশের উন্নতিও হয় না।