শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রকাশিত : ২০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৯:৪৫ সকাল
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৯:৪৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দুই ধরনের প্রস্তুতি আওয়ামী লীগে

সাজিদ মাহমুদ : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনীতির মাঠে প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপিকে ঘিরে দুই ধরনের সম্ভাবনা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। প্রথমত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়, সেক্ষেত্রে মহাজোট বা নির্বাচনী জোটের পরিকল্পনা করছে আওয়ামী লীগ। এ ক্ষেত্রে জোটের পরিধি বৃদ্ধি না করলেও জাতীয় পার্টিসহ বেশ কিছু ছোট দলকে এ নির্বাচনী জোটে দেখা যেতে পারে।

তাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার বিষয়টি বিবেচনায় রাখছে শাসক দলের হাই-কমান্ড। দ্বিতীয়ত, যদি বিএনপি নির্বাচনে না আসে, সে ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ও প্রগতিশীল বাম ঘরানার দলগুলোসহ ২০ দলের ভেতর থাকা দলগুলোকে দলীয় ও জোটগতভাবে নির্বাচনে আনার চেষ্টা করা হবে আসন ভিত্তিক সমঝোতার ভিত্তিতে।

তবে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে জোট গঠনের বিষয়ে কোনো কিছুই এখনও চূড়ান্ত হয়নি। প্রাথমিকভাবে এ দুই ধরনের সম্ভাবনা মাথায় রেখে নির্বাচনী পরিকল্পনা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করছে আওয়ামী লীগের হাই-কমান্ড। আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় জোটের কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির অবস্থান দেখেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যেতে চায় শাসক দল। আগামী নির্বাচনে আসা, না আসা নিয়ে বিএনপির মধ্যে দুই ধরনের অবস্থান আছে; এটা সরকারের কাছে এরই মধ্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে। তবে, ইসির আইনের বাধ্যবাধকতার কারণে দলটিকে এবার নির্বাচনে আসতেই হবে এটাও মনে করেন সরকারি দলের নেতারা।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ আইনের (আরপিও) ৯০ (এইচ) (১) দফায় রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিলের নির্দেশনা রয়েছে। ওই দফার (ই) উপ-দফায় বলা হয়েছে, নিবন্ধিত কোনো রাজনৈতিক দল পর পর দুইবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে নিবন্ধন বাতিল হবে। অন্যদিকে বিএনপির একটি অংশ (যারা নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে) তাদের একজন সরকারের শরিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন সমঝোতার উদ্যোগ গ্রহণের জন্য। দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, কিছুদিন আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য সরকারের শরিক দলের একজন মন্ত্রীকে সমঝোতার উদ্যোগ গ্রহণে মধ্যস্থতা করার অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে ওই মন্ত্রী কি ধরনের সাড়া দিয়েছেন, সেটা জানা যায়নি।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ  বলেন, আমরা সব সম্ভাবনাকে বিবেচনায় নিয়েই আগামী নির্বাচনের পরিকল্পনা করছি। বিএনপি অংশগ্রহণ করলে কি হবে, আর বিএনপি অংশগ্রহণ না করলে কি হবে, সব সম্ভাবনা বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। তবে, আমি মনে করি বিএনপি এবার আর নির্বাচন বর্জনের মতো ভুল করবে না। তারা এবার নির্বাচনে আসবেই। এবার তারা নির্বাচন না করলে দল ধরে রাখতে পারবে না। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ ও এর জোট শরিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনকে বড় ধরনের ভুল হিসেবে দেখে তারা। তাছাড়া পরে আন্দোলনের নামে অবরোধ ডেকে জ্বালাও-পোড়াও করে মানুষ হত্যা করা ছিল বিএনপির দ্বিতীয় বড় ভুল। এ দুই কারণে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, দেশি-বিদেশি বন্ধুরাও বিএনপিকে পুরোপুরি সমর্থন দিতে পারছে না। বিএনপি নির্বাচনে আসবেÑ এমনটা ধরেই নির্বাচনের প্রায় এক বছর আগে থেকে শরিকদের সবাই নিজেদের মতো করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আওয়ামী লীগ বর্তমানে সম্ভাব্য প্রার্থীসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর জরিপ, সংগঠনকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করার জন্য দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসন করাসহ নির্বাচনী প্রচারণায় নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগামী বছরের শুরু থেকেই জোরেসোরে শুরু হয়ে যাবে। তারা মনে করেন দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারলে জয় অনেক সহজ হবে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, আমরা মনে করি সরকার প্রায় ৯ বছরে যে উন্নয়ন করেছে সেগুলো জনগণের সামনে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারলে আমরা এগিয়ে থাকব। তাছাড়া দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে যেসব সমস্যা হয়Ñ পাওয়া না পাওয়ার বেদনা থাকে, দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকে; এসব দূর করতে পারলেই ফল ভালো হবে। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে তাকে হারানোর মতো কেউ নেই। এসব সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কাজ চলছে। বিএনপি নির্বাচনে আসবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে নিয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হব।

অন্যদিকে ১৪ দলের শরিক দলের নেতারা বলছেন, ১৪ দলের শরিক দলগুলো নিজেদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনের জন্য কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছে। জোটের মূল দল আওয়ামী লীগের কাছে তারা যতগুলো আসন চাইবে, সে বিষয়ে সবাই নিজেদের মতো করে কাজ করছে। এবার ১৪ দলের শরিকরা শতাধিক আসন চাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে বলে একাধিক শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এবং বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, আমরা আমাদের মতো করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতবার আমরা সাতটি আসন পেয়েছিলাম; এবার আমরা কমপক্ষে ৫০টি আসন চাইবো। সেভাবে আমাদের প্রার্থীদের প্রস্তুতি নিতে বলেছি। এসব বিষয় নিয়ে শিগগিরই জোটনেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। শুধু নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। জোটনেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমাদের বৈঠক হওয়ার কথা আছে। সেখানে এসব বিষয়ে আলোচনার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ১৪ দল জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেবেÑ এমন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত আছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে, এটা আমরা বিশ্বাস করি। আমরা জোটগতভাবেই নির্বাচনে অংশ নেব। জোটের পরিধি না বাড়লেও অনেকের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হতে পারে।

জানা গেছে, এরই মধ্যে সাবেক বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার বিএনএ জোট, ইসলামী ফ্রন্টসহ কয়েকটি ছোট দল জোটগতভাবে নির্বাচন করার জন্য সরকারি দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে। এরই মধ্যে বিএনএ ও ইসলামী ফ্রন্ট ১৪ দলের সমন্বয়ক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে। বিএনএ জোটের প্রধান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেÑ এমন ঘোষণাও দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ করার পর। অন্যদিকে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচিতে যুগপৎভাবে অংশ নিলেও শরিক দলের অনেকের আপত্তির কারণে ইসলামী ফ্রন্টের ১৪ দলে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি ঝুলে গেছে। তবে, শরিক দলের পক্ষ থেকে ইসলামী ফ্রন্টকে ১৪ দলে না নিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মহাজোট বা নির্বাচনী জোটÑ যেটাই হোক, তাতে রাখার পরামর্শ দেয়া হয় বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা  বলেন, আমরা একসঙ্গে নির্বাচন করবÑ এটা চূড়ান্ত হয়ে গেছে। আমার ইচ্ছা ১৪ দলের সঙ্গে নির্বাচন করার বাকিটা কি সিদ্ধান্ত হয়, এটা আলাপ-আলোচনা করে বুঝব। জোটগতভাবে নির্বাচন করার বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে গুলশানের আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। আমি এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি। পাশাপাশি যেসব জায়গায় আমাদের প্রার্থীদের জয়ের সম্ভাবনা আছে, সেসব জায়গা নিয়েও আমরা কাজ শুরু করেছি। এখন পর্যন্ত তাদের জোট থেকে ১০ থেকে ১৫ জন প্রার্থী নিয়ে কাজ হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর তিনজন নেতার সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না এমনটা আওয়ামী লীগ মনে করছে না। এজন্য মহাজোট গঠন করে আমাদের নির্বাচনে অংশ নেয়ার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়া প্রয়োজনে মহাজোটের বাইরেও কোনো কোনো দলের সঙ্গে আসনভিত্তিক সমঝোতা হতে পারে। আলোকিত বাংলাদেশ।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়