শিরোনাম
◈ ইসরায়েলি হামলায় ৪৩৭ ফুটবলারসহ ৭৮৫ ফিলিস্তিনি ক্রীড়াবিদের মৃত্যু ◈ পশ্চিম তীরে দখলদার ইসরায়েলিদের সাথে তাদেরই সেনা জড়ালো সংঘর্ষে! (ভিডিও) ◈ আমদানি-রপ্তানিতে এনবিআরের নতুন নিয়ম: বাধ্যতামূলক অনলাইন সিএলপি দাখিল ◈ জুলাই স্মরণে শহীদ মিনারে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বলন (ভিডিও) ◈ জুলাই বিদ্রোহ: কোটা সংস্কার থেকে গণঅভ্যুত্থান ◈ ভারতের বাংলাদেশ সফর নিয়ে যা বললেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ◈ ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, ক্যাডার পদে মনোনয়ন পেলেন ১৬৯০ জন ◈ ১৮ জুলাই নতুন দিবস ঘোষণা ◈ ডিসি-এসপি কমিটি ও ইভিএম বাদ, ভোটকেন্দ্র স্থাপনে নতুন নীতিমালা জারি করলো ইসি ◈ বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স: কীভাবে পাবেন, কী কী শর্ত মানতে হবে?

প্রকাশিত : ২০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৯:৪১ সকাল
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৯:৪১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানিস্তর বছরে নামছে ৩ মিটার

//বিশুদ্ধ পানি বঞ্চিত দেশের অর্ধেক মানুষ//পরিবেশ বিপর্যয় ও ভূমিকম্পের আশঙ্কা//

ডেস্ক রিপোর্ট : নদী মেখলা বাংলাদেশে সুপেয় পানির বড় দুঃসময় ঘনিয়ে আসছে। চোখের সমুখে জালের মতো নদ-নদী,খাল,বিলে থৈ-থৈ করছে পানি। হাতের কাছে ‘ভরা কলস’, তবু তৃষ্ণা মেটানোর বিশুদ্ধ পানির সংকট। এক সময় পুকুর বা উপরিস্থ জলাধারের পানি ছিল সুপেয়। গ্রামীণ জনপদের মানুষ সেই পানিই পান করতেন। সেই দিন হরণ করেছে বিবিধ দূষণ।

সত্তরের দশকের শুরুতে কৃষি ও পানের জন্য দেশে প্রথম ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার শুরু হয়। এখন ভূ-গর্ভস্থ পানিই একমাত্র ভরসা। পাতালের অফুরন্ত জলাধার ক্রমাগত নামছে নিচে। রাজধানীসহ সারাদেশে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে প্রতিবছর দুই থেকে তিন মিটার নিচের দিকে চলে যাচ্ছে। দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ এখন বিশুদ্ধ পানি সুবিধার বাইরে। সরকারিভাবে নানা ধরনের উদ্যোগের কথা বলা হলেও কার্যকর বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের চিত্র তথৈবচ।

বিশেষজ্ঞরা আগামী দিনগুলোতে সুপেয় পানির ভয়াবহ সংকটের আশঙ্কা করছেন। ভূ-গর্ভের পানির ওপর মানুষের নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা না হলে ভবিষ্যতে সুপেয় পানি পাওয়া দুঃসাধ্য হবে। তারা বলছেন, সংকট আরও বাড়বে, কমবে না। পানির লেভেল চলে যেতে থাকবে। এতে পরিবেশ বিপর্যয় ও ভূমিকম্পের সম্ভাবনা তীব্র হবে।

বাংলাদেশে সাড়ে নয় কোটি মানুষ বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে পারছেন না বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ও ইউনিসেফের এক যৌথ গবেষণা জরিপ। ভয়ানক ঝুঁকিতে রয়েছে যশোর, চাঁদপুর, কুমিল্লা, সাতক্ষীরা, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেটসহ দেশের উপকূলীয় অঞ্চল, চর, পার্বত্য ও হাওর এলাকার দুর্গম জনপদের মানুষ। অপরিকল্পিতভাবে গভীর ও অগভীর নলকূপ দ্বারা পানি উত্তোলনের ফলে এমনটা হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। গৃহস্থালি কাজকর্ম, চাষাবাদ নানা প্রয়োজনে ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। দেশের উজানে পদ্মা ও তিস্তাসহ অভিন্ন ৫৪টি নদীতে ভারত কর্তৃক বাঁধ নির্মাণসহ নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানির চাহিদা বেড়েছে।

সেচ বিভাগের সূত্র মতে, ১২ বছরে রাজধানীর পাতাল পানির স্তর নেমেছে দ্বিগুণেরও বেশি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি সম্পদ প্রকৌশল বিভাগের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, পানির স্তর বছরে দুই থেকে তিন মিটার নিচে নামছে।

জাতিসংঘের সাবেক পানি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড.এস আই খানের মতে, বাংলাদেশে প্রায় ৫০ লাখ নলকূপ রয়েছে। এই নলকূপ থেকে সেচের জন্য, খাওয়ার জন্য ও শিল্পের জন্য পানি তোলা হয়ে থাকে। ফলে আমাদের পাতাল পানির লেভেল প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৫ মিটার নিচে নেমে যাচ্ছে। দেশে বৃষ্টির পরিমাণ দুই মিটার। তা থেকে ১ মিটার পানি রিচার্জ হয়। এ ছাড়া বর্ষার সময় নদীর কূল ছাপিয়ে পানি যখন ক্ষেত-খামার ও জলাভূমিতে ঢুকে যায়, সেখান থেকে বাকি চার মিটার পানি রিচার্জ হতো। কিন্তু বাঁধ দিয়ে পানি সরিয়ে নেওয়ার কারণে আমাদের পাতাল পানি রিচার্জ হচ্ছে না। ফলে পানির স্তর প্রতিবছর নিচে নেমে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) গবেষণায় দেখা যায়,ষাটের দশকে ৫০ ফুট নিচ থেকে গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি উঠানো যেত। কিন্তু এখন ১৬০ ফুট নিচ থেকে পানি তুলতে হয়। গবেষণায় আরো দেখানো হয়েছে, সাধারণত মাটির নিচ থেকে যে পানি উঠানো হয়, সেটি নদী, খালবিল ও মাটি থেকে পাওয়া। পানি উঠালে প্রাকৃতিকভাবেই আবার পানি চলে আসত। কিন্তু এখন আর ভূ-গর্ভে সেই পানি যায় না। এর কারণ সেচ ব্যবস্থা। বোরো মৌসুমে প্রতিবছর যে হারে পানি সেচের জন্য ভূ-গর্ভ থেকে তোলা হয়, সে পরিমাণ পানি মাটির নিচে যায় ন। সেচ বিভাগ সূত্র জানায়, ২০০৫ সালেও ঢাকা শহরে ১১০ ফুট নিচে পানি পাওয়া যেত। কিন্তু এখন পানির নাগাল পেতে দ্বিগুণ নিচে নামতে হয়। অর্থাত্ পানি পেতে এখন রাজধানীতে ২২০ ফুট নিচে যেতে হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ( হু) ও ইউনিসেফের জরিপে বলা হয়েছে, সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের বাংলাদেশে ৯৭ ভাগ মানুষের পানি প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা হলেও বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে না পারার কারণে এবং মৌসুম ভেদে পানি সঙ্কটের কারণে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিঘ্নিত হচ্ছে, শিল্পোন্নয়ন ও কৃষি কাজও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশের ৫৯ ভাগ মানুষ সুপেয় পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ কার্যক্রম পর্যালোচনা করে এ জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক সংস্থা দুটি। গত দু’বছর এ বিষয়ের ওপর তারা কাজ করেনি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অগ্রগতির হার বিবেচনায় দেখা গেছে উল্লিখিত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ ভাগ মানুষ বিশুদ্ধ পানির আওতায় এসেছে। সেই হিসাবে এখনো ৫০ ভাগ মানুষ এ সুবিধার বাইরে আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বলেছে,বিশুদ্ধ পানির অভাবে বাংলাদেশের মানুষ ঝুঁকির মধ্যে বাস করছেন।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে,আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে এনে বৃষ্টি, বন্যার পানি শোধনাগারে পরিশোধিত করে সরবরাহ করা হবে। তাহলে একদিকে যেমন ভূ-গর্ভস্থ পানির আধারকে রক্ষা করাও সম্ভব হবে। অপরদিকে অতিমাত্রায় ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন কমে আসবে এবং পানিতে আর্সেনিকের আগ্রাসনও অনেকাংশেই রোধ করা সম্ভব হবে। ইত্তেফাক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়