মতিনুজ্জামান মিটু : দেশি বিদেশি দর্শকদের দৃষ্টি কেড়েছে রাজধানীর মৎস্য ভবনের সামুদ্রিক প্রাণি যাদুঘর। মৎস্য অধিদপ্তরের বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ ক্যাপাসিটি বিল্ডিং প্রকল্পের আওতায় চলতি বছরেই যাত্রা শুরু করেছে গুরুত্বপূর্ণ এই যাদুঘর। আর. ভি. মীনসন্ধানী জাহাজের জরিপের নমুনাসহ ২১০ প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণি স্থান পেয়েছে যাদুঘরটিতে।
সামুদ্রিক মৎস্য বিশেষজ্ঞ ও জাতীয় পরামর্শক মন্মথ নাথ সরকার বলেন, ১০০০ এরও বেশি সামুদ্রিক প্রাণির নমুনা সংরক্ষণের পরিকল্পনা রয়েছে এখানে। মৎস্য ভবনের ১১তলায় স্থাপিত যাদুঘরটিকে আরো উন্নত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অচিরেই যাদুঘরটি দেশের অন্যতম সামুদ্রিক যাদুঘর হিসেবে গণ্য হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ বৈচিত্রময় জৈবিক সম্ভারে পরিপূর্ণ। এখানে যেমন রয়েছে কাঁটাযুক্ত মাছ তেমনি রয়েছে কোমলাস্থি মাছসহ চিংড়ি, কাঁকড়া, শিরোপদী, সামুক, ঝিনুক ও শৈবাল প্রজাতি। ইতিপূর্বে মৎস্য প্রজাতি যাদুঘরে সংরক্ষণ করে বৈজ্ঞানিকভাবে শ্রেনীবিন্যাসের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত করার কাজ অতি সামান্যই হয়েছে। আমরা সবাই জেনে আসছি বাংলাদেশে ৪৭৫ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ রয়েছে। ১৯৭০ সালে এফএও পাক-২২ নামে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (ইপিএফডিসি) এর একটি প্রকল্পের মাধ্যমে অনুসন্ধানমূলক জরিপ পরিচালনা করে। ওই জরিপ কাজের একটি বৈজ্ঞানিক রিপোর্টে ৪৭৫টি প্রজাতির মাছের নাম তালিকাভুক্ত করে একটি চেকলিষ্ট তৈরী করা হয়। কাজটি বাংলাদেশের সামুদ্রিক মাছের তালিকা তৈরীর প্রথম প্রয়াস এতে সন্দেহ নেই। তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে মৎস্য প্রজাতির সেই তালিকার নামগুলো হালনাগাদ এবং যুগপযোগী করা হয়নি। পরবর্তীতে মৎস্য অধিদপ্তরের সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা, ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন প্রকল্প (১৯৮৫-৯০) এর মাধ্যমে সামুদ্রিক জীববিজ্ঞান গবেষণাগার (মেরিন বায়োলজিকাল ল্যাবরেটরী) নামে একটি মৎস্য যাদুঘর কক্সবাজারে স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। পরবর্তীকালে নবগঠিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের কাছে ওই মেরিন বায়ালোজিকাল ল্যাবরেটরীর স্থাপনা হস্তান্তরের ফলে মৎস্য যাদুঘরটি পরিত্যাক্ত হয়। ফলে সামুদ্রিক মৎস্য যাদুঘর স্থাপনের বিষয়টি অধরা থেকে যায়।
মৎস্য অধিদপ্তরের বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ ক্যাপাসিটি বিল্ডিং প্রকল্প শুরু থেকেই সামুদ্রিক মৎস্য যাদুঘর স্থাপনের প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের উপকুলীয় এলাকা থেকে সংগ্রহ করা নমুনাগুলো বিজ্ঞানসম্মতভাবে সনাক্তকরণের পর উপযুক্ত পদ্ধতিতে দরকারি রাসায়নিকের সাহায্যে কাঁচের পাত্রে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়। আর. ভি. মীনসন্ধানী জাহাজের জরীপের ১৭৬টিসহ ২১০ প্রজাতির নমুনা সংরক্ষণ করা হয়েছে মৎস্য ভবনের সামুদ্রিক প্রাণি যাদুঘরে। মৎস্য বিজ্ঞানী, গবেষক, পরিকল্পনাবিদ ও ছাত্রছাত্রীসহ সাধারণ মানুষের সামুদ্রিক প্রাণির বৈচিত্রতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিতে সক্ষম হচ্ছে যাদুঘরটি।