আশিক রহমান : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন কখনো ফাঁস হয়নি। এটা একেবারে ধ্রুব সত্য। যেটা হয় ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি করা হয়। পরীক্ষায় নকল করা আর প্রশ্নফাঁস দুটি ভিন্ন জিনিস। জালিয়াতি আর প্রশ্নপত্র ফাঁসÑ দুটির অর্থ অনেকেই বোঝেন না। যার ফলে বিভ্রান্ত তৈরি হয়। একই কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে লিখে মানুষকে ধোঁকা দেন। প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা হানি করেনÑ আমাদের অর্থনীতিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান।
তিনি বলেন, জালিয়াতি বিভিন্ন কারণে হয়। কেউ অর্থ উপার্জনের জন্য করেন, কেউ পরীক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য করে থাকেন। কেউ রাজনৈতিক কারণেও করে থাকেন। যে সব চক্র এসব করে তাদের নেটওয়ার্ককে আমরা ধরে ফেলেছি। গোয়েন্দারা বের করছেন কী কারণে জালিয়াতি চক্র এসব অশুভ কাজ করে।
তিনি আরও বলেন, প্রশ্ন জালিয়াত চক্রকে ধরে গোয়েন্দাদের কাছে দেওয়া হয়েছে। এসব জালিয়াতি চক্রকে সামলানোর সামর্থ্য আমাদের রয়েছে। এবং এটি করে দেখিয়েছিও। ব্যর্থ নই, আমরা সফলতা দেখিয়েছি। এর মাধ্যমে আমরা পুরো জাতিকে সতর্ক করে দিতে পেরেছি। আশা করি আমাদের এই সাফল্যের ইতিবাচক প্রভাব দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও পড়বে। আমাদের সবাই যদি এরকম সচেতন থাকেন তাহলে কোথাও এ চক্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। যদি উঠে তাহলে আবারও কঠোরভাবে দমন করতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. আখতারুজ্জামান বলেন, বহু বহুত্ববাদী, উদারনৈতিক, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সমাজে একেক জনের আচরণ একেক রকম হয়। বিভিন্ন সময় নানারকম কথা হয়। একটি জায়গায় শক্ত জায়গা থেকে ওইটা দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। পরিসংখ্যানে একটা উদাহরণ দিয়ে সব মাপা হয়। এটাকে আমরা ভালো মাপক বলি না। তখন আমরা বলি স্যাম্পলে গ-গোল রয়েছে। স্যাম্পলে গণগোল থাকলে ওইভাবে সমাজ মূল্যায়ন করা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষকদেরও মূল্যায়ন করা যায় না।
তিনি বলেন, দুষ্টু লোকেরা খারাপ স্যাম্পলটা সামনে আনে। আনার কথাও। কারণ যে মানুষদের মধ্যে কোনো খুঁত নেই, তাদের মধ্যে যদি কখনো কোথাও খুঁত পাওয়া যায় তাহলে তা আপনাআপনি সামনে চলে আসে। অনাকাক্সিক্ষত, অনভিপ্রেত বিষয়গুলো বারবার নাড়া দিয়ে অন্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়–ক তা আমরা চাই না। শিক্ষা নিয়ে সুন্দরভাবে আমাদের সামনে এগোতে হবে। কিন্তু এটাকে পুঁজি করে পিছনের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা, এই ঘটনাগুলোকে উসকে দিয়ে (শিক্ষকদের মধ্যে অপ্রীতিকর আচরণ) বারবার অশালীন, অশোভনভাবে কোনো কিছুকে উপস্থাপন করা খুব ভালো সভ্যতার নিদর্শন নয়। সে কারণেই অপ্রীতিকর, অস্বস্তিকর, অনভিপ্রেত, অপমানজনক, অশোভনীয়, অবাঞ্ছিত, অনাকাক্সিক্ষত বিষয়গুলো এড়িয়ে গিয়ে ইতিবাচকভাবে এগোনোই আমাদের কাম্য।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে এই শিক্ষাবিদ বলেন, শিক্ষার ‘মান’ এমন একটি বিষয় যা বাটখারা দিয়ে মাপা যায় না। বহু মানের মানুষ বের হয়, আবার নি¤œমানেরও থাকে। আমাদের হাজার হাজার ছেলেমেয়ে রয়েছে যার মধ্যে অনেকেই অনেক উন্নত কোয়ালিটির। মধ্যম মানেরসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির থাকে। সবাই যেদিন একই মানের হয়ে উঠতে পারবে সেদিনই জাতির জনকের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, কাক্সিক্ষত মানের শিক্ষাব্যবস্থা জন্য আমাদের যে সব উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার তা হলো অবকাঠামোর উন্নয়ন। শ্রেণিকক্ষ। উপযুক্ত শিক্ষক। পর্যাপ্ত লাইব্রেরী সুবিধা। আবাসন সুবিধা। ক্যালরি ইনটেক। শিক্ষার্থীর কতটুকু বোধগম্যতা আছে তা নির্ভর করে শরীর, মন ও পরিবেশের ওপর। একজন মানুষ যখন সুস্থ পরিবেশে থাকে তখন তার চিন্তা জগতেও ভালো পরিবর্তন হয়।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার কাক্সিক্ষত মানে পৌঁছানোর চেষ্টা আমরা করব। সামনে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী আছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি সামনে রেখে আমরা কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। প্রয়োজনীয় সব উপাদান যেদিন শিক্ষার্থীদের নিশ্চিত করতে পারব, সেদিনই শিক্ষার মান নিয়ে বড় বড় কথা বলা যাবে। অন্যথায় যা হবে তা হলো বিভিন্ন ধরনের উসকানি, অশুভ তৎপরতায় প্রতিষ্ঠানকে হেয় করা হবে। এ জায়গা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে বলেও মনে করেন ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান।
আপনার মতামত লিখুন :