শিরোনাম
◈ রাতে বাংলামোটরে জুলাই পদযাত্রার গাড়িতে ককটেল হামলা (ভিডিও) ◈ যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক মোকাবেলায় বাংলাদেশের চার দফা কৌশল ◈ বিআরটিএর মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশন নিয়ে কঠোর নির্দেশনা ◈ সাবেক এমপি নাঈমুর রহমান দুর্জয় গ্রেপ্তার ◈ শ্রীলঙ্কার বিরু‌দ্ধে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং ধসে বাংলাদেশ হার‌লো ৭৭ রা‌নে ◈ ২০ বছরেও অধরা এমআই-৬'র ভেতরের রুশ গুপ্তচর! (ভিডিও) ◈ নারী ফুটবলের এই অর্জন গোটা জাতির জন্য গর্বের: প্রধান উপদেষ্টা ◈ প্রবাসীদের জন্য স্বস্তি: নতুন ব্যাগেজ রুলে মোবাইল ও স্বর্ণ আনার সুবিধা বাড়লো ◈ একযোগে ৩৩ ডেপুটি জেলারকে বদলি ◈ 'মধ্যপ্রাচ্যে সিলেট-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোকেরা ঘোষণা দিয়ে মারামারি করে' (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১৩ নভেম্বর, ২০১৭, ০৮:৩৪ সকাল
আপডেট : ১৩ নভেম্বর, ২০১৭, ০৮:৩৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

৩৬তম বিসিএসের অপেক্ষমাণেরা কবে চাকরি পাবে?

আলী ইমাম মজুমদার : এমন একটি অভিযোগ আছে যে দেশে সরকারি চাকরিতে প্রচুর পদ খালি আছে। এগুলোতে কাজ করার উপযুক্ত লোকেরও অভাব নেই। কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার কারণে পদগুলো সময়মতো পূরণ হয় না। যখন কিছু পদ পূরণ হয়, তখন আরও বেশি পদ শূন্য হয়। এ নিয়ে দেনদরবার, লেখালেখি অনেক হয়েছে। সচিব সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়গুলো ত্বরান্বিত করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু এই ব্যবস্থাপনায় কোনোভাবেই গতি আসছে না। চাকরিবিধির অনুপস্থিতি, অসম্পূর্ণতা কিংবা বৈপরীত্ব ক্ষেত্রবিশেষে বিঘ্নের কারণ। আর চাকরিবিধি প্রণয়ন কিংবা সংশোধনের প্রক্রিয়া দিনে দিনে দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এতে ক্ষতি হচ্ছে করদাতা জনগণের। বিভিন্ন পদ শূন্য থাকায় তারা ঈপ্সিত সেবা পাচ্ছে না। আর ক্ষতি চাকরিপ্রার্থীদের। তারা লেখাপড়া শেষ করে জীবনযুদ্ধে নেমেছে। মধ্যবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরাই এসব চাকরির বাজারে। তাদের বাবা-মায়ের অপেক্ষা, কবে সন্তান পাশে দাঁড়াবে। অন্ততপক্ষে সে তার নিজের ভার বহন করতে পারলেও তঁারা কিছুটা স্বস্তি পান। কিন্তু তা হচ্ছে না।

অথচ ব্যাপারটা এ রকম ছিল না।

এ দেশে চাকরির বাজারে প্রবেশে ইচ্ছুক তরুণসমাজের বিশাল অংশের স্বপ্ন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) একটি ক্যাডারে স্থান লাভ করা। বেতন-ভাতাদিসহ সুযোগ-সুবিধা ও যুগবাহিত মর্যাদা এই স্বপ্নের একটি প্রেরণা বটে। আবার অন্যান্য চাকরি, যেমন ব্যাংক কিংবা অন্য কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানেও নিয়োগের প্রক্রিয়া খুব সহজ নয়। একই রকম সুদীর্ঘ রাস্তা। অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগ-বাণিজ্য চলছে। অন্যদিকে প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতায় নষ্ট হচ্ছে জীবনের মূল্যবান সময়। তারুণ্যের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ। ৩৬তম বিসিএস প্রসঙ্গেও দেখা যাবে একই চিত্র। এর প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছিল ২০১৫ সালের ৩১ মে। আবেদন করে ২ লাখ ১১ হাজার ৩২৬ জন। সাত মাস পর অনুষ্ঠিত হয় প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। উত্তীর্ণ হয় ১৩ হাজার ৬৭৯ জন। এরও ৯ মাস পর ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে লিখিত পরীক্ষা হয়। আর মৌখিক পরীক্ষা এ বছর। সাকল্যে ৫ হাজার ৬৩১ জন চূড়ান্ত বাছাইয়ে টিকে আছে। তবে পাস করলেই বিসিএসে চাকরি মেলে না। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষায় প্রাধিকার ও মেধার সমন্বয় করে গত ২৪ অক্টোবর চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয় ২ হাজার ৩২৩ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য। এর মধ্যে সাধারণ ক্যাডারগুলোতে ৬৯৭ জন আর অন্যরা বিশেষায়িত পদে। যেহেতু প্রচুর নন-ক্যাডার সরকারি চাকরি খালি থাকে আর তাদের নিয়োগেও পিএসসির সুপারিশ আবশ্যক, তাই গত কয়েক বছর অবশিষ্টদের যতজনকে সম্ভব নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। উদ্যোগটি ভালো। এভাবে ৩৬তম বিসিএসে অপেক্ষমাণ রয়ে গেছে ৩ হাজার ৩০৮ জন।

এই পরীক্ষার প্রক্রিয়া দ্রুত করতে অনেক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বছরের পরীক্ষা বছরেই হওয়ার কথা। আগে তা–ই হতো। ভারত ও পাকিস্তানে এখনো তা–ই হয়। কিন্তু আমরা পারছি না। বিজ্ঞপ্তি জারির পর প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার জন্য যথাক্রমে সাত ও আট মাস সময় কেন লাগবে, তা বোধগম্য নয়। গোটা প্রক্রিয়া ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশ পর্যন্ত লেগেছে সোয়া দুই বছর। তারপরও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পুলিশি প্রতিবেদনের জন্য নয় মাস থেকে এক বছর সময় নেয়। অথচ সেটা দুই মাসে সম্ভব। নিকট অতীতেও তা হয়েছে।

অন্যদিকে নন-ক্যাডাররা এখনো সম্পূর্ণ অনিশ্চয়তায়। মন্ত্রণালয়গুলো আগেভাগে চাহিদাপত্র দিয়ে রাখলে ক্যাডারের পরপরই নন-ক্যাডারের বিষয়গুলো সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) নিষ্পত্তি করতে পারে। এখানেও বাছাই হবে প্রাধিকার ও মেধার বিবেচনায়। সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্তে একটি অবিবেচনাপ্রসূত নিয়ম আছে, কোনো পদে প্রাধিকারধারী প্রার্থী না পাওয়া গেলে তা শূন্য থাকবে। যেখানে প্রাধিকার কোটার সংখ্যাই প্রশ্নবিদ্ধ, সেখানে যোগ্য প্রার্থী থাকলেও প্রাধিকার না থাকায় খালি থাকবে সরকারি পদ। উল্লেখ্য, পিএসসির উদ্যোগে ৩৫ ও ৩৬তম বিসিএসকে এ নিয়ম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একটু গোড়া থেকে টানলে দেখা যাবে, এবারের প্রশাসন, পররাষ্ট্র ও পুলিশ ক্যাডারের জন্য সুপারিশ পেয়েছে যথাক্রমে ২৯২, ২০ ও ১১৭ জন প্রার্থী। এই সুপারিশের তালিকায় ক্যাডার তিনটিতে থাকার কথা যথাক্রমে ১৬০, ১১ ও ৬৪ জন প্রাধিকারসম্পন্ন প্রার্থী। ধারণা অমূলক নয় যে প্রাধিকারধারীদের বড় অংশ সম্মিলিত মেধাতালিকায় ওপরের দিকে ছিল না। মেধাভিত্তিক নিয়োগ হলে নিয়োগ পেত না এসব ক্যাডারে। কেউ কেউ চলে যেত নন-ক্যাডার পদে।

যা–ই হোক, নন-ক্যাডার পদের জন্য নির্ধারিত প্রার্থীরাও কঠিন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সব ধাপ সাফল্যের সঙ্গে অতিক্রম করেছে। তবে মনোনীত হলেই কেউ কেউ হয়তোবা নন-ক্যাডার বা বিশেষভাবে দ্বিতীয় শ্রেণির পদে চাকরি করবে না। কিন্তু অনেকেই করবে, এটা নিশ্চিত। সরকারি চাকরির বয়স চলে গেছে অনেকের। ৩৫তম বিসিএসে কিন্তু সবাই সুপারিশ পেয়েছিল। অনেকে নিয়োগ মেনে নিয়েছিল। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তার অধীন অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরের বিশেষায়িত পদ না হলে পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগযোগ্য শূন্য পদগুলোর বিবরণ ও যথাযথ নিয়োগবিধি পিএসসিতে দ্রুত পাঠানো দরকার। তারাও দ্রুততার সঙ্গে এ বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করতে পারে। এমনিতেই তো আড়াই বছর গেল। তারপর তাদের সুপারিশ পেলেও স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পুলিশি প্রতিবেদন—এগুলোর জন্য সময় নেবে। মানুষের জীবন তো একটা। কর্মজীবন খুব দীর্ঘ নয়। এর কতটুকু কর্মপ্রাপ্তির জন্য ব্যয় করা যায়, তা ভাবনায় নিলে দ্রুততার দাবির যুক্তি উপলব্ধি করা যাবে। বিশেষায়িত ক্যাডারগুলোর জন্য একটি পৃথক পিএসসি করার প্রস্তাব কেউ ছুঁয়েও দেখছে না। একটিমাত্র পিএসসি তাদের সামর্থ্য অনুসারে কাজ করছে। সুতরাং সরকারের চাহিদা অনুসারে শূন্য পদ পূরণের জন্য তাদেরও ক্ষিপ্রতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো অফিসার পদে বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতায় ব্যাংকার্স রিক্রুটমেন্ট কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে। বলা বাহুল্য, এই কমিটির কার্যত এই কর্মকাণ্ড সম্পাদনের সামর্থ্য নেই। তারা আউটসোর্স করে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। ওরাও মূল কাজের বাইরে এসব কাজে অধিক উৎসাহী বলে জানা যায়। পক্ষান্তরে পিএসসি সরকারের কর্মকর্তা পর্যায়ে জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া করার জন্য সংবিধানের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত একটি প্রতিষ্ঠান। হয়তোবা ব্যাংকের নিয়োগবিধিতে তাদের চাকরির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কিছু চাহিদা অন্তর্ভুক্ত করা আছে, যা বিসিএস সাধারণ ক্যাডার থেকে ভিন্ন।

তবে ইচ্ছা করলে বিধান পাল্টানো যায়। ব্যাংকের চাকরির ধরন কিছুটা পৃথক। তেমনি পৃথক পুলিশ বা পররাষ্ট্র ক্যাডারেও। তারা তো নিয়োগ-পরবর্তী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেগুলো রপ্ত করে নেয়। বিবেচনা করলে ব্যাংকের ক্ষেত্রেও এমনটা করা যায়। ১৯৭৭ সালে বিসিএসে যারা নিয়োগ পেয়েছিল, তাদের পাশাপাশি একই পরীক্ষা থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে বেশ কিছু কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। তখনো ব্যাংকগুলো স্বায়ত্তশাসিত ছিল। এই কর্মকর্তাদের কেউ কেউ তো বেশ সফল হয়েছেন। একজন দীর্ঘ সময় সফল ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন একটি বড় ব্যাংকে। বিসিএস পরীক্ষা থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে নিয়োগের বিপক্ষে হয়তো অনেক যুক্তি থাকবে। তবে পক্ষে যে কথাগুলো বলা হলো আর অতীত নজির উপেক্ষা করার মতো নয়। বিষয়টি নিয়ে ভাবা চলে।

সার কথা হলো, সরকারি সংস্থায় পদ সৃজন করা হয় জনস্বার্থ বিবেচনায়। এটা শূন্য পড়ে থাকা জনস্বার্থের অন্তরায়। এগুলো পূরণের ব্যবস্থার সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট, তাদের উচিত বিধিবিধানগুলো যথাযথভাবে প্রণয়ন ও সময়োপযোগী সংশোধনের ব্যবস্থা করা। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের তৎপরতায় এটা ত্বরান্বিত হতে পারে। বিসিএস পরীক্ষার্থীদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সূচনা থেকে ফলাফল প্রণয়ন ও চাকরিতে সুপারিশ করার এখতিয়ার একমাত্র পিএসসির। তাদের ৩৬তম বিসিএসের নন-ক্যাডার পদগুলোতে নিয়োগের প্রক্রিয়া জনস্বার্থে দ্রুত করা দরকার। পাশাপাশি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ অন্য সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা সুপারিশ পাওয়ার পর সম্ভাব্য স্বল্প সময়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পুলিশি প্রতিবেদনপ্রাপ্তির ব্যবস্থা নিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে পারে। আশা করব, সবাই মিলে দীর্ঘসূত্রতা কাটিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করবে।

আলী ইমাম মজুমদার: সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

majumderali1950@gmail.com। প্রথম আলো

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়