শিরোনাম
◈ শ্রীলঙ্কার কা‌ছে আফগা‌নিস্তান হে‌রে যাওয়ায় সুপার ফো‌রে খেলার সু‌যোগ পে‌লো বাংলাদেশ ◈ বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে টিউলিপের মিথ্যাচার, নতুন সংকটে স্টারমার: ডেইলি এক্সপ্রেসের রিপোর্ট ◈ শুধু অতীতের নয়, বর্তমানের দুর্নীতি থামাতেও নজর দিতে হবে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ◈ বাংলাদেশ ও চীন সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বকে এগিয়ে নিতে একসাথে এগিয়ে যাবে : প্রধান উপদেষ্টা  ◈ সাফ চ‌্যা‌ম্পিয়নশী‌পে নেপালকে ৪-০ গো‌লে হারা‌লো বাংলাদেশ ◈ শ্রীলঙ্কার প্রতি বাংলা‌দে‌শের সমর্থন, চোখ এড়ায়নি লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের ◈ আফগানিস্তান-শ্রীলংকা ম্যাচের ফল যেমন হলে লাভ বাংলাদেশের ◈ নির্বাচনী দায়িত্বে অপরাধের সাজা বাড়ছে: অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন ◈ দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত সম্পূর্ণভাবে পৃথক করলো সরকার ◈ কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার পক্ষে নয় বিএনপি : সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ১২ নভেম্বর, ২০১৭, ০৪:১৬ সকাল
আপডেট : ১২ নভেম্বর, ২০১৭, ০৪:১৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভেজাল খাদ্যদ্রব্য বন্ধ করা হউক

মো. ওসমান গনি : ভেজাল খাদ্যদ্রব্য মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কিন্তু আমাদের দেশে এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ লোক তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের জন্য আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শণ অহরহ ভেজাল খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করে কালো টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছে। পক্ষান্তরে আমাদের দেশের লাখ লাখ মানুষ স্বাস্থ্য সমস্যাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অতিকষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করছে। আমাদের দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে খোলা ও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সয়াবিন ও সরিষার তেলের প্রায় ৯৫ শতাংশই নিম্নমানের। ঘি শতভাগ নিম্নমানের। রাজধানীর স্কুল-কলেজের সামনে বিক্রি হওয়া ঝালমুড়ি, ডালপুরি, ফুসকা ও আচারের ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশেই উপস্থিত রয়েছে ই-কোলাই। নুডলস ও সেমাইয়ে রয়েছে নির্দিষ্টমাত্রার চেয়ে কম প্রোটিন। ফুলকপি, বেগুন, সিম, কাঁচামরিচ ও টমেটোর ১৫০টি নমুনার মধ্যে ৪৫টিতেই রয়েছে বিভিন্ন প্রকার পেস্টিসাইডের উপস্থিতি। এই ভয়ঙ্কর তথ্য বেরিয়ে এসেছে ‘মনিটারিং অ্যান্ড কমোডিটিজ ফর কেমিক্যাল কণ্টামিনেশন অ্যান্ড মাইক্রোরায়োলজিক্যাল অ্যাট এনএফএসএল এন অ্যাপ্রাইজাল অব ফুড সেফটি সার্ভে ইন বাংলাদেশ-সেকেন্ড রাউন্ড’ শীর্ষক এক জরিপে। ৪৬৫টি নমুনার গুণগত মান পরীক্ষা করে এই তথ্য মিলেছে। জরিপের এই ফলাফলে সঙ্গতকারণেই, ‘আমরা কি খাচ্ছি,’ এমন একটি প্রশ্নের মুখোমুখী এসে দাঁড়িয়েছি আমরা সবাই। এর আগেও পরীক্ষায় দেখা গেছে, বাজারে বিক্রি হওয়া খোলা ও বিভিন্ন ব্যান্ডের ভোজ্যতেল মানসম্পন্ন নয়। চটকদার বিজ্ঞাপন ও প্রচারণার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। নানারকম ভেজাল ও নকল ভোজ্যতেলে বাজার সয়লাব। ঘি’র ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য। ঘি নামে যা বিক্রি হচ্ছে, তা মোটেও ঘি নয়। অথচ এই নকল-ভেজাল ভোজ্য তেল ও ঘি উচ্চ দামে খরিদ করে ক্রেতারা প্রতারিত ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উদ্বেগের সবচেয়ে বড় কারণ, এই সব নকল-ভেজাল ভোজ্যতেল ও ঘি খেয়ে মানুষ নানারকম দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। চিকিৎসা ও রোগ নিরাময়ের জন্যে আয়-উপার্জনের একটা বড় অংশ তাদের ব্যয় করতে হচ্ছে। একইভাবে বলা যায়, রাজধানীর স্কুল-কলেজের সামনে ঝালমুড়ি, ভেলপুরি, ফুসকা, আচার প্রভৃতির নামে যা কিছু বিক্রি হচ্ছে, তাও নিম্নমানের, অস্বাস্থ্যকর, বিভিন্ন পরীক্ষায় তা প্রমাণিত হয়েছে। নুডলস, সেমাইয়ের মানও যথাযথ নয়। এসবের প্রতি শিশুদের বিশেষ টান আছে এবং এগুলো বাছবিচার না করে তারা খাচ্ছে। এতে তারা ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে নিক্ষিপ্ত। তারা বিভিন্ন প্রকার রোগে আক্রান্ত হয়ে জীবনীশক্তি হারাচ্ছে। বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, হাতে-নাতে প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও নকল-ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য এবং খাবার বিক্রির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। মাঝে-মধ্যে নকল-ভেজালবিরোধী অভিযান হতে দেখা যায় বটে, তবে তা নকল-ভেজাল রোধে কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। তরিতরকারি ও শাক-সবজি উৎপাদনে ক্ষতিকর পেস্টিসাইডের ব্যবহার নতুন নয়। সেইসঙ্গে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারও চলছে। কৃষকরা সচেতনে-অসচেতনে এসব ব্যবহার করছে ফসল রক্ষা ও উৎপাদন বাড়ানোর জন্য। তারা আর্থিকভাবে কিছুটা লাভবান হলেও মারাত্মক ক্ষতির শিকার হচ্ছে জনস্বাস্থ।
নকল-ভেজাল ও নিম্নমানের খাদ্যপণ্য বিক্রীর দায়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও কোনো ব্যবস্থা নেই। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে অবনতমানের কোনো খাদ্য পণ্য বিক্রি হতে দেখা যায় না। তারা এ ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক ও সাবধান। পণ্যের উৎপাদক, বাজারজাতকারী ও বিক্রেতা কেউই কোনো অনৈতিক পন্থা অনুসরণ করে না। ওইসব দেশে কোনো কারণে পণ্যের অবনতমান সনাক্ত হলে বা ধরা পড়লে কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হয়। আমাদের দেশে খাদ্য পণ্যের মানের এই অবনতি অত্যন্ত, দুর্ভাগ্যজনক ও উদ্বেগজনক। এতে জনস্বাস্থ্য শোচনীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দুর্বল ও রোগাক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। কথায় বলে, সবল মানুষ সবল জাতির পরিচায়ক। আর সবল জাতি উন্নত জাতির পরিচায়ক। নকল-ভেজালও নিম্নমানের খাদ্যগ্রহণের ফলে মানুষের উৎপাদনশীলতা ও সৃজনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে। দুর্বল ও রোগাক্রান্ত মানুষ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝাস্বরূপ। তাদের চিকিৎসার জন্য যা ব্যয় করতে হচ্ছে তা কার্যত অপচয়ের শামিল। আমরা লক্ষ্য করছি, রোগ-ব্যাধির প্রকোপ ক্রমাগত বাড়ছে।
মানসম্পন্ন খাদ্যপণ্যের নিশ্চয়তা বিধান করা গেলে যেমন জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধিত হবে তেমনি রোগব্যাধির প্রকোপ কমবে এবং চিকিৎসা খাতের ব্যয়ও হ্রাস পাবে। এমতাবস্থায়, যে কোনো মূল্য নকল-ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্যের দৌরাত্ম্য থেকে দেশ-জাতিকে মুক্ত করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। খাদ্যপণ্যের মানের ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়