শক্তি-সামর্থ্যে বাংলাদেশের মেয়েদের থেকে বেশ এগিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া। তার প্রমাণ ভিয়েনতিয়ানের নিউ লাওস জাতীয় স্টেডিয়ামে দিয়েছে জাতীয় দলের র্যাংকিং হিসেবে ৮৩ ধাপ এগিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া। বাংলাদেশকে ৬-১ ব্যবধানে হারিয়ে ‘এইচ’ গ্রুপের সেরা হয়ে অনূর্ধ্ব-২০ নারী এশিয়া কাপের মূল পর্ব নিশ্চিত করেছে তারা।
আর ‘যদি-কিন্তু’ সমীকরণের ওপর তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
কেননা আট গ্রুপের রানার্সআপদের মধ্যে যারা শীর্ষ তিনে থাকবে তারা মূল পর্বে খেলার সুযোগ পাবে। ম্যাচ শেষে প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শীর্ষ তিন দলের মধ্যেই আছে বাংলাদেশ। ৬ পয়েন্ট নিয়ে পর্যায়ক্রমে শীর্ষে থাকা তিন দল হচ্ছে-জর্ডান, চাইনিজ তাইপে ও বাংলাদেশ। জর্ডানের +১১ গোল ব্যবধানের বিপরীতে চাইনিজ তাইপে ও বাংলাদেশের হচ্ছে- +৭ এবং +৫।
বাংলাদেশের সামনে আজ সরাসরি মূল পর্বে খেলার সুযোগ ছিল। সেজন্য আজ প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ড্র করলেই হতো। তবে বাংলাদেশ যেন ড্র নয়, জয়ে স্বপ্ন পূরণ করতে চেয়েছিল। কিন্তু সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বিশাল ব্যবধানে হেরে।
দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে খেলতে নেমে শুরুটা অবশ্য ভালোই করেছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় মিনিটে যেমন এগিয়ে যাওয়ার দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু স্বপ্না রানীর দুর্দান্ত অ্যাসিস্টকে কাজে লাগাতে পারেননি মোসাম্মৎ সাগরিকা। দক্ষিণ কোরিয়ার গোলরক্ষক উই হাইয়েবিনকে একা পেয়ে পরাস্ত করতে পারেননি বাংলাদেশি ফরোয়ার্ড।
আসলে সতীর্থর পাস ধরে গোলমুখের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় বলে টাচটা জোরাল হওয়ায় গোলরক্ষক ধরে ফেলেন।
সে যাত্রায় না পারলেও ১৫ মিনিটে ঠিকই গোল উদযাপনে মাতে বাংলাদেশের মেয়েরা। বাঁ প্রান্ত থেকে শান্তি মার্ডি গোলে শট নিলে ড্রাইভ দিয়ে কোনো রকমে বাঁচান গোলরক্ষক হাইয়েবিন। তবে তার হাতে লেগে বল দিক পরির্বতন করলেও ফাঁকায় দাঁড়ানো তৃষ্ণা পেয়ে যান। পরে ফাঁকা পোস্টে গোল করতে ভুল করেননি সর্বশেষ পূর্ব তিমুরের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করা এই ফরোয়ার্ড।
লিডটা বেশিক্ষণ অবশ্য ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। ১৯ মিনিটের সময় সমতায় ফেরে দক্ষিণ কোরিয়া। তাদের হয়ে সমতাসূচক গোলটি করেন ফরোয়ার্ড লি হাইয়ুন। সমতায় ফেরার পর আক্রমণের ধার বাড়াতে থাকেন তারা। তবে বাংলাদেশের রক্ষণভাগ ও গোলরক্ষক স্বপ্না রানী মন্ডলের কাছে ব্যর্থ হয় দক্ষিণ কোরিয়া। ২৩ মিনিটে যেমন গোলবার ছেড়ে বেরিয়ে এসে নিশ্চিত গোল ঠেকিয়ে দেন স্বপ্না।
বিরতির আগে আরেকটি নিশ্চিত গোল সেভ করে বাংলাদেশকে রক্ষা করেন স্বপ্না। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের ষষ্ঠ মিনিটে সুইপারের ভূমিকায় প্রতিপক্ষের লিড নেওয়া আটকিয়ে দেন বাংলাদেশি গোলরক্ষক। এরপর আর কোনো গোল না হলে দুই দল ১-১ সমতায় প্রথমার্ধ শেষ করে।
বিরতির পরেও নিজের বীরত্ব দেখান স্বপ্না। ৪৭ মিনিটে কর্নারের বিনিময়ে বাংলাদেশকে গোল হজম করা থেকে বাঁচান তিনি। তবে ফিরতি মিনিটে জাল অক্ষত রাখতে পারেননি তিনি। দক্ষিণ কোরিয়াকে ২-১ গোলের লিড এনে দেন অধিনায়ক চো হাইইয়ং। ১২ মিনিট পর দলকে আরেকবার আনন্দে ভাসান দক্ষিণ কোরিয়ার অধিনায়ক। হাই লাইন্স ডিফেন্সে খেলা বাংলাদেশের অফসাইড ফাঁদকে ফাঁকি দিয়ে ৬০ মিনিটে বক্সের মধ্যে সতীর্থর লং পাস ধরে স্বপ্নাকে পরাস্ত করেন হাইইয়ং।
৩-১ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে পরে আর ম্যাচে ফেরা হয়নি বাংলাদেশের। উল্টো রক্ষণভাগ সামলাতেই ব্যতিব্যস্ত ছিলেন আফঈদা খন্দকার-জয়নব রিতারা। আর তিন কাঠির নিচে সব সময়ই সজাগ থাকতেই হয়েছে গোলরক্ষক স্বপ্নাকে। ৭২ মিনিটে ডান দিকে ঝাপিয়ে পড়ে নিশ্চিত গোল বাঁচান তারই প্রমাণ। ৮২ মিনিটে কর্নারের বিনিময়ে আরেকবার গোল হজম করা থেকে বাংলাদেশকে বাঁচান তিনি।
পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশের বিপদ আরো বাড়ে ৮৫ মিনিটে নবীরণ খাতুন ডি বক্সে ফাউল করলে। তাতে পেনাল্টি পায় দক্ষিণ কোরিয়া। তা থেকে সফল স্পটকিকে নিজের হ্যাটট্রিকও পূর্ণ করেন অধিনায়ক হাইইয়ং। হ্যাটট্রিক করেই থামেননি তিনি। ৯০ মিনিটে ফাঁকা গোলবারে হেডে গোল করে চতুর্থ গোলটি পান তিনি। আর বাংলাদেশের কফিনে শেষ পেরেক মারেন জিন হাইরিন। ডি বক্স থেকে মাটি কামড়ানো এক শটে।