মনিরুল ইসলাম: “ড্রাফট টেলিকম নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং রিফর্ম পলিসি ২০২৫” নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। দলটি মনে করে, জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি নীতিমালা তাড়াহুড়ো করে চূড়ান্ত করা অনুচিত।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, নীতিমালার লক্ষ্য—লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া সহজ করা, প্রযুক্তিগত অগ্রগতিকে উৎসাহিত করা এবং গ্রামীণ জনগণের ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি—নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। তবে, খসড়া বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে এতে এমন কিছু ধারা রয়েছে যা বড় মোবাইল অপারেটরদের অনুকূলে এবং ছোট ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান (SME) ও স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
তিনি বলেন, সরকার যেন এই নীতিমালা চূড়ান্ত করার আগে পূর্ণাঙ্গ আর্থিক ও সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন করে এবং SME, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও ভোক্তা সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে।
নীতিমালার বিরূপ প্রভাব নিয়ে তিন দফা আশঙ্কা তুলে ধরেছে বিএনপি:
১. সম্ভাব্য সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ
বাজারে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের ঝুঁকি: একাধিক সেবাখাতে মালিকানা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের মাধ্যমে বড় মোবাইল অপারেটরদের একচেটিয়া প্রভাব বিস্তারের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা প্রতিযোগিতার পরিবেশকে দুর্বল করবে।
SME খাতের সংকট: ডি-রেগুলেশনের ফলে ছোট ও মাঝারি অপারেটর, বিশেষত স্থানীয় আইএসপি ও টেলিকম উদ্যোক্তারা পরিষ্কার নির্দেশনা না থাকায় আর্থিক ও কাঠামোগত সংকটে পড়তে পারেন।
বিদেশি মালিকানার অস্পষ্ট নীতিমালা: বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মালিকানা সীমার বিষয়ে অনির্দিষ্টতা বাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে।
২. নীতিগত অস্পষ্টতা
ক্রস-ওনারশিপ সংক্রান্ত ফাঁকফোকর: উল্লম্ব ও সমান্তরাল মালিকানা বিষয়ে সুস্পষ্ট বিধান না থাকায় বাজারে অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হতে পারে।
সার্ভিস সীমা ও প্রযুক্তি বিষয়ক দ্ব্যর্থতা: মোবাইল অপারেটরদের ফাইবার-ভিত্তিক সংযোগে সীমাবদ্ধতা না থাকায় বিরোধের সম্ভাবনা থাকছে। এছাড়া স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড ও নতুন ডিজিটাল সেবা নিয়ে নির্দেশনার অনুপস্থিতি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে পারে।
৩. বড় অপারেটরদের প্রতি নীতিগত পক্ষপাত
লাইসেন্স ব্যবস্থায় অসমতা: একীভূত লাইসেন্সিং ব্যবস্থা এবং স্পেকট্রাম নির্ভরতা বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে রাখবে, যেখানে SME-দের জন্য মান বজায় রেখে দেশব্যাপী সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
বড় কোম্পানির অবকাঠামোগত আধিপত্য: এন্টারপ্রাইজ ব্রডব্যান্ড খাতে বড় কোম্পানিকে প্রবেশাধিকার দিলে প্রতিযোগিতা হ্রাস পেয়ে একচেটিয়াবাদ সৃষ্টি হবে, যা জাতীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
সহযোগিতামূলক ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার আহ্বান
বিএনপি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট সব অংশীজন—SME, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, গ্রাহক সংগঠন—এবং আর্থ-সামাজিক প্রভাব বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এই জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা চূড়ান্ত করা হোক। বিশেষ করে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে একতরফাভাবে তড়িঘড়ি করে নীতি গ্রহণকে দলটি অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করে।
বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, “নীতিমালায় বিদ্যমান অপারেটরদের সুবিধা নিশ্চিত করে একটি পক্ষপাতদুষ্ট ও অস্পষ্ট কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে, যা ডিজিটাল সমতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।”
বিএনপির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, এই নীতিমালার মাধ্যমে ডিজিটাল অবকাঠামোর ওপর বৃহৎ কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, যা বাজারে ভারসাম্য নষ্ট করে দেবে এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের টিকে থাকা কঠিন করে তুলবে।