শিরোনাম
◈ এইচএসসির উত্তরপত্র আপাতত বোর্ডে না পাঠানোর নির্দেশ ◈ হত্যা চেষ্টার স্থলে ফিরে যাওয়ার সংকল্প ট্রাম্পের  ◈ দেশকে পঙ্গু করে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতে এ সহিংসতা : প্রধানমন্ত্রী ◈ খান ইউনুসে চলছে প্রচণ্ড লড়াই : আটকা পড়েছে প্রায় ২ লাখ ফিলিস্তিনি ◈ দেশের ৮ জেলায় দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের শঙ্কা ◈ বাংলাদেশ নিয়ে আমার বক্তব্য বিকৃত করেছে বিজেপি: মমতা ব্যানার্জি ◈ ভালোবাসার শহর প্যারিসে বৃষ্টিভেজা রাতে শুরু হলো অলিম্পিকস ২০২৪ ◈ সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী আজ ◈ কারফিউ আরো শিথিলের সিদ্ধান্ত হবে আজ, জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ একদফা দাবিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক বিএনপির

প্রকাশিত : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ০২:৪৫ রাত
আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ০২:৪৫ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

খুলেই ভূত দেখার মতো চমকে উঠলাম, মিলন নয়, নন্দিনী

আহসান হাবিব

আহসান হাবিব: [১] সারারাত ধরে বাথরুমের কল থেকে টুপটুপ পানি পড়ছে। রাত যত বাড়ছে, শব্দটা আরো জোরে শুনতে পাচ্ছি। এটাচড বাথরুম হওয়াই শব্দটা ক্রমে বাড়তে বাড়তে এক সময় মনে হলো কে যেন আমার কানে হাতুড়ি পেটাচ্ছে।অনেকবার চেষ্টা করলাম কলটা বন্ধ করতে। হলো না। যতই টাইট দিই, ফোঁটা ফোঁটা পানি পড়া বন্ধ হয় না। অগত্যা শুয়ে পড়লাম। শীতটা বেশ জাঁকিয়া বসেছে। এই মুহূর্তে তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটা এবছর ঢাকায় সর্বনিম্ন। ফ্যান চালাবার জো নেই। ফ্যানটা চালিয়ে দিলে শব্দটা হয়তো শোনা যেতো না। এদিকে ফ্যানটাও একটা বাড়তি শব্দ করে। এখন সেটা থেকে বাঁচোয়া। কি করা যায়? স্যানিটারি মিস্ত্রি মিলনকে এতো রাতে পাওয়া যাবে না। সকাল না হওয়া পর্যন্ত আমাকে এই অবিরাম টুপটুপ শব্দ শুনে যেতে হবে। বরং মিলনকে একটা ফোন করে রাখি যাতে সক্কাল সক্কাল সে চলে আসে। হ্যালো? আমি অবিনাশ। বস। কি হয়েছে বস? বাথরুমের কল থেকে পানি পড়ছে। ওকে, আমি ভোরেই চলে আসবো। ওকে, একদম ভোরে চলে আসবা। ঠিকাছে বস। মিলন আমাকে বস বলে ডাকে, হয়তো সবাইকেই ডাকে, বিজনেস পলিসি। বহুবার সে আমার বাসায় এসে বিভিন্ন স্যানিটারি খুত সারিয়ে গেছে। স্বস্তি পেলাম। মনে হলো টুপটুপ শব্দটা হঠাৎ একটু কমে গেলো। ভাল্লাগছে।

[২] কিন্তু ঘুম আসছে না। ইদানিং ঠিকমত ঘুম আসতে চায় না। রাত দুটো আড়াইটা বেজে যায়, চোখে ঘুম আসার কোন লক্ষণ দেখা যায় না। অথচ ঘরে কোন আলো জ্বলে না, সামান্য একটা সবুজ ডিমলাইট জ্বলে। ঘরে কোন টিভিও নেই। স্ক্রিন বলতে এক চিলতে মোবাইল ফোন। অবশ্য মোবাইল ফোনে আমি আসক্ত হয়ে পড়ছি বলে মনে হচ্ছে। যতক্ষণ না চোখে ঘুমের ভাব আসছে, ফেসবুক দেখে যাচ্ছি। কি দেখছি কিছুই বুঝছি না, কিন্তু দেখে যাচ্ছি। স্ক্রল করেই চলেছি। একদিকে এটা দেখার হার বাড়ছে, ওদিকে ঘুম আসতে দেরি হচ্ছে। এর মধ্যে এমন হয়েছে কোন কোনদিন ভোর হয়ে আসছে, চোখে কোন ঘুম নেই। উঠে পড়ছি। মর্নিং ওয়াকে বেরিয়ে পড়ছি। শরীর টলছে, তবু হাঁটছি। আশ্চর্য!  এই শীতেও কোকিলের ডাক শুনতে পাই প্রায়ই। যখন চন্দ্রিমা থেকে বেরিয়ে আসি, সূর্য উঠে পড়ে, তখন দূরের কোন গাছের আবডাল থেকে ডেকে ওঠে কোকিল। আমার আশ্চর্য লাগে। কোকিল তো বসন্তে ডাকে, এখন কেন? তাহলে কি বিশেষ কোন কোকিল নিদারুণ বিরহে ভুগে? হয়তো। হঠাৎ একটা গানের কলি মাথায় আসে। 'এখনো কোকিল ডাকে/এখনো ফাগুন জাগে'। এই লাইন দুটি মোবাইলের নোটবুকে টুকে ফেলি। 

আমিও কি কোকিলের মত? নইলে কেন আমি এখনো নন্দিনীকে ভুলতে পারছি না। শীত গ্রীষ্ম বর্ষা শরৎ হেমন্ত শীতে নন্দিনীর নাম ডেকে চলেছি, মনে মনে? কত বছর হলো নন্দিনী আমাকে ছেড়ে গেছে? পাঁচ বছর। অথচ মনে হয় এই তো সেদিন আমি আর নন্দিনী হুডখোলা একই রিকশায় ঘুরে বেড়াচ্ছি পুরো শহর! নন্দিনীর কথা মনে এলো। তার মুখশ্রীটা ভেসে উঠলো। সবুজ বাতির আলোয় তাকিয়ে দেখছি ছাদ, ছাদও সবুজাভ লাগছে। লাল রঙের পর্দাও সবুজ আলোয় কেমন একটা রং ধারণ করেছে, ভাল লাগছে। এই মুহূর্তে ঘরটাকে দারুণ লাগছে। এই ঘর যেন এক স্মৃতির আর্কাইভ। এখানে ওখানে সবখানে ছড়ানো ছিটানো স্মৃতির ফসিল। কেউ দেখে না, কেবল আমিই দেখি। একটা ছায়ামূর্তিও দেখতে পাই, নন্দিনীর। মাঝেমাঝে তার সাথে কথাও বলি। যেন কোন নাটকের একক সংলাপ। আজ মনে হয় ঘুম আসবে না। কি করি? কোন বই পড়বো? কোন সিনেমা দেখবো ইউটিউবে? না, ইচ্ছা করছে না। নন্দিনীকে ফোন করবো? ভেতর থেকে কে যেন জোরে জোরে বলে উঠলো 'না, কস্মিনকালেও না'। আমার এই জোর দেখে মনে হলো আমি এখনো নন্দিনীর উপর অভিমান করে আছি। নন্দিনী কি আমাকে মনে করে আমার মত? কে জানে! একটা ঘুমের বড়ি খেলে কেমন হয়? আমি আবার সব ধরণের ওষুধ বাসায় রাখি। মনে পড়ছে ডিসোপ্যান নামের একটা ঘুমের বড়ি ওষুধের বাক্সে আছে। কিন্তু এটাও ইচ্ছা করলো না। ঘুমের কেন, যে কোন ওষুধ খেতে আমার ভীষণ অনীহা। তবে প্রয়োজনে সব খেতে রাজি। এই যে ঘুম আসছে না, আমি কি না ঘুমিয়েই কাটিয়ে দেবো একটা রাত? ওদিকে অবিরাম টুপটুপ করে পানি পড়েই চলেছে। শব্দটাও ক্রমে বাড়ছে। আমি যেন অবশেসড হয়ে পড়ছি। আমার সমস্ত শ্রবণেন্দ্রিয় যেন ওদিকেই নিবদ্ধ। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিই ঘুম আসুক কিংবা না, কিছুই করবো না, লাল কম্বলের নীচে মটকা মেরে শুয়ে থাকবো।

[৩] একফোঁটা ঘুম এলো না। চারদিক থেকে মাইকে অজস্র আজান ভেসে উঠলো। এখানে পাখির ডাক শোনা বিরল বিষয়। কেবল চন্দ্রিমায় গেলে পাখির ডাক শুনি। চন্দ্রিমা আমার ভাল লাগে। শত শত বৃক্ষ, পাশে একটা হ্রদ। এই শীতে যদিও পানি নেই। একটা ছোট্ট রেখা এখনো দেখা যায়। তাকে ঘিরে শানবাঁধানো বসবার জায়গা। মাঝেমাঝে বসি। বর্ষায় বকুল ফুলের মালা কিনি। ফুলও কুড়াই। মনে পড়ছে একবার অেেনক বকুল কুড়িয়ে একটা খামে ভরে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম নন্দিনীর কাছে। নন্দিনী সেটা পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েছিল। বকুলের কথা কি মনে আছে নন্দিনীর? কে জানে! বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লাম। চোখ জ্বলছে। শরীরও টলছে সামান্য। আজ চন্দ্রিমায় যাবো না ভাবছি। কারণ মিলন আসবে। মিলন কখন আসে ঠিক নেই। এসে আমাকে না পেলে কাজটা বিলম্ব হবে। কলের টুপটুপ থেকে আমাকে রেহাই পেতে হবে। ফ্রেস হয়ে চা বানাতে রান্নাঘরে ঢুকলাম। পানি গরম করতে দিয়ে একটা টোস্ট বের করে আনলাম বয়াম থেকে। ফ্রিজ থেকে একটা স্নিকার্স চকোলেটও বের করলাম। চকোলেট খেলে দারুণ চনমন করে ওঠে দেহমন। লাল চা বানিয়ে ড্রইংরুমে বসতে যাবো এমন সময় হঠাৎ হাত থেকে চায়ের কাপটা পড়ে গেলো। মেঝেয় পড়ে শত শত টুকরো হয়ে গেলো মাটির কাপটা। সারাঘরে ছড়িয়ে পড়লো লাল রঙের চা। আমি থ' বনে গেলাম। মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে গেলো। কেন এমন হলো? আমি কি আনমনা হয়ে আছি, নাকি আমার শরীরে যথেষ্ট বল নেই? হতে পারে ঘুমহীন একটা শরীর টলমল করতে পারে, যদিও আমার সেরকম কিছু মনে হচ্ছে না। এরিমধ্যে আমি স্নিকার্স এবং টোস্ট খেয়েছি।

তাহলে? মেজাজ যে সামান্য তিরিক্ষি তা ঠিক। কিন্তু চায়ের কাপ হাত থেকে পড়ে যাওয়াই আমার মেজাজ সত্যি সত্যি তিরিক্ষি হয়ে উঠলো। কাপের টুকরোগুলি কুড়াতে লাগলাম। বড় বড়গুলো হাত দিয়ে কুড়িয়ে ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে ফেললাম। মেঝেটা মুছে ফেললাম পুরনো গেঞ্জির ন্যাকড়া দিয়ে। পরিষ্কার লাগছে। মন ভাল হতে শুরু করে। আবার চা বানাতে হবে। তবে এখন নয়, একটু পরে। বরং মিলন আসুক, একসঙ্গে চা খাবো। চেয়ারে গুটিসুটি মেরে বসে পড়লাম। দরজার ফাঁক দিয়ে পেপার দিয়ে গেছে। সেটা কুড়িয়ে আনলাম। চোখ বুলাচ্ছি পেপারে। একটা সংবাদে চোখ আটকে গেলো: ভারতরত্ন বিশ্বখ্যাত সেতারবাদক রবিশঙ্কর আর নেই! বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে পড়লাম যেন। মনে হলো পৃথিবী থেকে সব সুর হারিয়ে গেলো। পেপারটা রেখে দিলাম। মনটা বিষন্ন হয়ে গেলো। চোখ বুজে এসেছিল। দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে জেগে উঠলাম হকচকিয়ে। নিশ্চয় মিলন। দরজা খুললাম, খুলেই ভূত দেখার মতো চমকে উঠলাম, মিলন নয়, নন্দিনী। 
 লেখক: ঔপন্যাসিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়