মঞ্জুরে খোদা টরিক: ইসরায়েল যুদ্ধের কোনো নিয়মনীতিই মানছে না। জাতিসংঘ পরিচালিত আশ্রয় শিবির, স্কুল, হাসপাতাল, লোকালয় সর্বত্রই হামলা করছ। তাদের এ পর্যন্ত আক্রমনে ১৩ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত। তারমধ্যে ৯ হাজারই শিশু। গাজাকে বলা হচ্ছে শিশুদের কবরস্থান। টেলিভিশনের খবরে চোখ রাখা যায় নাÑ রক্ত, লাশ, ধ্বংস, কষ্ট নিষ্ঠুরতা দেখে। গাজায় ৪০ দিনের এই হত্যা প্রায় ২ বছরের ইউক্রেনের যুদ্ধের সমান। বাইডেন নাকি ফিলিস্তিনে গণহত্যা ও হামলা বন্ধ করতে বলেছেন, না হলে নাকি ইসরায়েলিদের ভিসা সুবিধা বাতিল করবেন! কিন্তু মার্কিন দেশে ভ্রমণযোগ্য ইসরায়েলিদের তো কোনো ভিসা লাগে না। তাহলে কেন এই লোক দেখানো হুমকি? ফিলিস্তিনিদের হত্যার সকল যন্ত্রপাতি পাঠাচ্ছেন, আবার বলছেন হামলা বন্ধ করতে?? কিন্তু নেতানিয়াহু শুনছেন না। নিতানিয়াহু কি ফ্রাঙ্কেন বনে গেলেন? নাকি এটা বাইডেনের উপরে গাছ কেটে নিচে পানি ঢালার নীতি? মার্কিন সরকারের একটা অনেক পুরনো নীতি।
বাইডেনের নিষ্ঠুর-অমানবিক নীতির কারণে প্রশাসনের প্রায় ৬ শতাধিক কর্মকর্তা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। যা অতীতে দেখা যায়নি। গার্ডিয়েনের এক নিবন্ধে সাইমন টিসডাল বলেছেন, শুধু তার দেশে নয় বিশ্বেও বাইডেনের সুনাম ব্যাপক ভাবে নষ্ট হয়েছে। সামনের বছর নির্বাচন। নির্বাচনের সব জরিপেই তিনি ট্রাম্পের থেকে কিছুটা পিছিয়ে আছেন। তিনিও সুবিধার নন। কিন্তু এই নির্বাচন মাথায় রেখে একটু ভোল পাল্টাতেই হয়, মানবিক চেহারা দেখাতে হয়। সেই কারণেই এই সব স্ট্যান্ডবাজি নয় কি?
ফিলিস্তিনে হামলায় ইসরায়েলকে একচ্ছত্র সমর্থন দিয়ে যাওয়ায় মিত্রদেশগুলো মধ্যে যেমন বিভাজন, দ্বিমত বাড়ছে। নিজ দেশেও তার জনপ্রিয়তা তলানিতে গিয়ে ঠেকছে। জনমত জপির বলছে, আমেরিকার ৬৪ ভাগ মানুষে ইসরায়েল নিয়ে বাইডেনের বাড়াবাড়িকে সমর্থন করছেন না। তার মধ্যে সে দেশে প্রায় ৪০ লাখ মুসলমান আছে। ভোটের হিসেবে তারা প্রায় ২০ শতাংশ। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতিতে মার্কিনিদের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ছে। ইউক্রেন যুদ্ধে প্রযোজনা করে সেখানে সুবিধা করতে পারেননি। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে তারা সমর্থন হারাচ্ছেন। সেখানে চীন-রাশিয়ার প্রভাব বাড়ছে। ইউরোপের দেশগুলোও মার্কিননীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ন্যাটোর মধ্যে বিভক্তি তৈরী হয়েছে। ন্যাটোর প্রধান তুরষ্ক ইসরায়েলকে হুমকি দিয়ে চলেছে। আফ্রিকাতে তাদের অবস্থান তলানিতে গেছে, ল্যাতিন আমেরিকার দেশে দেশে মার্কিন বিরোধিদের উত্থান স্পষ্ট।
বিশ্বের দেশে যখন মানবতাবিরোধী মার্কিন সরকারের সাম্রাজ্যবাদী নীতির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে উঠছে। তখন বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল তাদের সহায়তায় দেশে অবাধ নির্বাচন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছেন, সেটা খুব হতাশার। অবাধ, গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচনও আমিও চাই। সেজন্য চলমান নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনকে সমর্থন করি। কিন্তু মার্কিন নির্ভরতা ও তাদের ছকে দৌড়ঝাপ সন্দেহ তৈরি করে ও সমর্থন করতে পারি না। জাতিসংঘ ও বিশ্বের সকল মানবাধিকার সংগঠন বলছে, ইসরায়েল ক্রমাগত গাজায় যুদ্ধাপরাধ করে চলেছে। ফিলিস্তিনে গণহত্যা ও দখলদারিত্ব বন্ধ হোক। ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধের বিচার চাই। বিশ^ মানবতা জেগে উঠুক। লেখক, গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
আপনার মতামত লিখুন :