সংগৃহীত: দুঃখ কাকে বলে এর প্রায় সবই কবিগুরু পেয়েছিলেন একজীবনে। স্ত্রী মারা গেলেন কবির ৪১ বছর বয়সে। কবির ছিলো তিন মেয়ে, দুই ছেলে। রথীন্দ্রনাথ, শমীন্দ্রনাথ আর বেলা, রাণী ও অতশী। স্ত্রীর পর অসুস্থ হয়ে মারা গেলেন রাণী। এরপর কলেরায় মারা গেলো ছোট ছেলে শমী। পুত্রশোকে কবি লেখলেন, ‘আজ জোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে’। কবির মনে হলো এই জোৎস্নায় কবি বনে গেলে হবে না। বরং তাঁকে জেগে থাকতে হবে, যদি বাবার কথা মনে পড়ে শমীর। যদি এসে কবিকে না পায়? তিনি লিখলেন, ‘আমারে যে জাগতে হবে, কী জানি সে আসবে কবে/যদি আমায় পড়ে তাহার মনে’।
রাণীর জামাইকে পাঠিয়েছিলেন কবি বিলেতে ডাক্তারি পড়তে, না পড়েই ফেরত আসলো। বড় মেয়ের জামাইকে পাঠিয়েছিলেন বিলেতে, ব্যারিস্টারি পড়তে, না পড়েই ফেরেত আসলো। ছোট মেয়ে অতশীর জামাইকেও আমেরিকায় কৃষিবিদ্যার ওপর পড়াশোনা করতে। লোভী এই লোক কবিকে বারবার টাকা চেয়ে চিঠি দিতো। কবি লিখলেন, ‘জমিদারী থেকে যে টাকা পাই, সবটাই তোমাকে পাঠাই’। দেশে ফেরার কিছুদিন পর ছোট মেয়েটাও মারা গেলো। সবচাইতে কষ্টের মৃত্যু হয় বড় মেয়ের। বড় জামাই বিলেত থেকে ফেরার পর ছোট জামাইর সঙ্গে ঝগড়া লেগে কবির বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। মেয়ে বেলা হয়ে পড়েন অসুস্থ। অসুস্থ এই মেয়েকে দেখতে কবিগুরু প্রতিদিন গাড়ি করে মেয়ের বাড়ি যেতেন। কবিকে যত রকম অপমান করার এই জামাই করতেন। কবির সামনে টেবিলে পা তুলে সিগারেট খেতেন। তবু কবি প্রতিদিনই যেতেন মেয়েকে দেখতে। একদিন কবি যাচ্ছেন, মাঝপথেই শুনলেন বেলা মারা গেছে। কবি শেষ দেখা দেখতে আর গেলেন না। মাঝপথ থেকেই ফেরত চলে আসলেন। হৈমন্তীর গল্প যেন কবির মেয়েরই গল্প।
শোক কতটা গভীর হলে কবির কলম দিয়ে বের হলো, ‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে। তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে’। কবির মৃত্যু হলো অতিমাত্রায় কষ্ট সহ্য করে, প্রশ্রাবের প্রদাহে। কী কারণে যেন কবির বড় ছেলে রথীন্দ্রনাথের কাছ থেকে শেষ বিদায়টাও পাননি। দূর সম্পর্কের এক নাতনি ছিলো কবির শেষ বিদায়ের ক্ষণে। কবি জমিদার ছিলেন এসব গল্প সবাই জানে। কবির দুঃখের এই জীবনের কথা ক’জন জানেন? প্রথম যৌবনে যে গান লিখলেন, এইটাই যেন কবির শেষ জীবনে সত্যি হয়ে গেলো, ‘আমিই শুধু রইনু বাকি। যা ছিলো তা গেলো চলে, রইলো যা তা কেবল ফাঁকি’। " চঈ ঋই টসধ ঈযড়ফিযঁৎু.