অজয় দাশগুপ্ত: তাঁর কনিষ্ঠ ভাগ্নি ফাহমিদা খাতুন। পাকিস্তান আমলে রবীন্দ্রনাথের গান গেয়ে চিত্তজয়ী শিল্পী। সুরে, তালে, গায়কীতে অসাধারণ। তাঁকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপন করা পরে টিভির জন্য সাক্ষাৎকার বা আলাপচারিতার সুযোগ হয়েছিলো আমার। তিনি বলেছিলেন, একাত্তরে পাক বাহিনী ও তাদের দালালেরা ফাহমিদা খাতুন ও তাঁর বড় এই আপাকে খুঁজছিলো। তাদের ভাষায় মা কালীর গান গায় এরা। তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে গাওয়া গাদ্দার টিপ পরা নারীদের খুঁজে পায়নি বলে সম্ভ্রম সহ জানে বেঁচে গেছিলেন তাঁরা। কী আশ্চর্য। সেই সোনার মন্দির শব্দের জন্য ‘বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি’ কবিতাটি এখন পাঠ্য বই থেকে না কি উধাও, তাও এই ‘সোনার বাংলা’ আমলে। যাঁর কথা লিখছি, তাঁকে সবাই চেনেন। বাংলা ও বাঙালির বাতিঘর তিনি। পতি ওয়াহিদুল হক ও অন্যান্যদের নিয়ে যে মহীরুহ গড়ে তুলেছেন সেই ছায়ানট এখনো শিল্প সংস্কৃতি’র ছায়াবৃক্ষ।
সমালোচনার অভাব নেই বঙ্গদেশে। বাঙালি এই কাজে নম্বর ওয়ান। তাদের অনেকে তাঁর ব্যক্তিত্ব ও রুচির জন্য তাঁকে অনুদার মনে করেন। অথচ এই তথাকথিত উদার আর সুবিধাবাদের কারণেই এখন অপ সংস্কৃতিও টাউট বাটপারদের রমরমা। ‘রবীন্দ্রসংগীতের ভাবসম্পদ’ এই নামে তাঁর যে গ্রন্থটি তা শান্তি নিকেতন বিশ্বভারতীও পাঠ্য করে নিয়েছে। এমন করে রবীন্দ্রনাথকে কেউ চিনেছেন বলে মনে হয় না। যাঁরা রবীন্দ্রনাথের গান গেয়ে সেলিব্রিটি বা শীর্ষে তাঁদের অনেকের কাছে রবীন্দ্র সঙ্গীত পণ্য। এঁর কাছে জীবন সুধা।
টিপ পরে অপমান মেনে নেয়া এই সমাজ ও বদলে যাওয়া বাঙালির জননী স্বরূপা নারী তিনি। এখনো আছেন এখনো নিঃশ্বাস ও কথায় সমৃদ্ধ করেন। গেল পহেলা বৈশাখে তাঁর সকাল বেলার ভাষণ শুনে মনে হয়েছিলো, আকাশ পাড়ের ডাক শুনেছি। শুভ জন্মদিন সনজীদা খাতুন। শতায়ু হন আপনি।
লেখক : ছড়াকার