কামরুল আহসান: সমাজ থাকলে সেখানে ‘মত’ থাকবে। ‘মত’ থাকে না জঙ্গলে। মত থাকলে ভিন্নমতও থাকবে। এটা শুধু শিক্ষাদীক্ষা রুচিবোধের ব্যাপার না। মানুষের মস্তিষ্কের গঠনজনিত কারণেই ভিন্নমত আসে। তাছাড়া ভাষাগত সীমাবদ্ধতা ও পার্থক্য তো আছেই। আরো আছে নানারকম আচার-সংস্কৃতির ব্যবধান। তাই মানুষ যে ভিন্নমত পোষণ করে তার চেয়েও আশ্চর্য ব্যাপার অসংখ্য- অজস্র ব্যাপার নিয়ে মানুষ আাবার একমতও হয়। একই রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিশ্বাসের তলে আশ্রয় নেয় কোটি কোটি মানুষ। সেটা নেয় একই স্বার্থে, বৃহত্তর ক্ষেত্রে, প্রতীকী ব্যাপার হিসেবে অনেকক্ষেত্রে নামমাত্র। কারণ, দেখা যায় একই বিশ্বাসের অধীন থাকা সত্বেও আবার নানা কারণে মতান্তর দেখা দেয়।
তাই মতান্তর মানবজীবের একটা মৌলিক বৈশিষ্ট্য। এমন কি, মজার ব্যাপার, নিজের সাথেও তো মানুষের দ্বিধা- দ্বন্দ্ব ঘটে, ঘটে কারণ মানুষের মস্তিষ্ক ডুয়েল, দুইভাগে বিভক্ত। আবেগ আর যুক্তি তো একসাথে কাজ করে না। আবেগের বশবর্তী হয়ে অনেকে তো আত্মহননেরও সিদ্ধান্ত নেয়। কে বা কারা নেয় নেয় সেটা বড় কথা না, নেয় কোনো না কোনো মস্তিষ্ক। তার মানে মানুষের মস্তিষ্কের মধ্যেই বড় ধরণের কোনো ত্রুটি রয়েছে। কিন্তু সেটা অন্য ব্যাপার। মনস্তত্ত্ব আর সমাজবিদ্যা এক সাথে চর্চা হয় না। এই যে একাডেমিক ক্ষেত্রেও বিষয়ের পার্থক্য এটাও তো মানুষের মাঝে ব্যবধান সৃষ্টি করেছে। আপনি কি মনে করেন দর্শন আর মার্কেটিংয়ের ছাত্রকে একসাথে মেলানো সম্ভব? বিষয়ের কারণেই এখানে মতান্তর হবে।
আধুনিক বুর্জোয়া ব্যবস্থার একটা প্রধান বিষয় এখানে মতামত প্রকাশকে মোটামুটি একটা সহনশীল পর্যায় নিয়ে এসেছে। নিয়ে এসেছে বাজারব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার সার্থেই। বেশি ক্যাচাল হলে তো বাজারের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হবে। বাংলাদেশে যে ভিন্নমতকে সহ্য করা হয় না এর কারণ এর চরিত্র এখনো রয়ে গেছে সামন্তসমাজের মতো। এই রাষ্ট্রের প্রধান থেকে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের হর্তাকর্তার ভাবসাব সামন্তপ্রভুর মতো। এখানে ভিন্নমতকে গ্রহণ করা হবে না সেটাই স্বভাবিক। আন্দোলন-সংগ্রাম করে দুএকটা মতকে হয়তো প্রতিষ্ঠা করা যাবে, কিন্তু তাতে সামগ্রিক চিত্র খুব একটা বদলাবে বলে মনে হয় না। লেখক ও সাংবাদিক