শিরোনাম
◈ বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক হবে গঠনমূলক ও ভবিষ্যতমুখী: হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা ◈ এলডিসি থেকে উত্তরণ: আরও তিন বছরের সময় চাইছে বাংলাদেশ ◈ জাপানে জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেসব সিদ্ধান্ত নিল অন্তর্বর্তী সরকার ◈ ১৭ বিয়ের ঘটনায় মামলা, সেই বন কর্মকর্তা বরখাস্ত ◈ বিএনপি নেতাকে না পেয়ে স্ত্রীকে কু.পিয়ে হ.ত্যা ◈ বাংলা‌দেশ হারা‌লো আফগানিস্তানকে, তা‌কি‌য়ে রই‌লো শ্রীলঙ্কার দিকে  ◈ রোজার আগে নির্বাচন দিয়ে পুরোনো কাজে ফিরবেন প্রধান উপদেষ্টা ◈ ঋণের চাপে আত্মহত্যা, ঋণ করেই চল্লিশা : যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ ◈ একযোগে এনবিআরের ৫৫৫ কর্মকর্তাকে বদলি ◈ আবারও রেকর্ড গড়ল স্বর্ণের দাম, ভরিতে বেড়েছে ৩ হাজার ৬৭৫ টাকা

প্রকাশিত : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০১:৫৮ রাত
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০১:৫৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মাদ্রাসার হুজুররাই শুধু ধর্ষণ করে না, করে সমাজের আরও অনেক মানুষ

মনজুরুল হক

মনজুরুল হক: আমি সাধারণত মাদ্রাসা হুজুরদের ধর্ষণ-বলাৎকারের মতো নিকৃষ্ট বিষয় নিয়ে লিখি না। ঘেন্না লাগে। আমি না লিখলে কী হবে? আমার টাইমলাইনজুড়ে শত শত ছবি আর লেখা। না পড়ে যাবো কোথায়? অন্যান্য কেসের সঙ্গে যাত্রবাড়ীর মারকাজুত তাহফিজ ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসার পার্থক্য-এবার জনসাধারণ দুই মোল্লাকে গণপিটুনি দিয়েছে। অর্থাৎ আইন হাতে তুলে নিয়েছে। কেন নিয়েছে? কারণ প্রচলিত আইনে ধর্ষকের বিচারের দীর্ঘসূত্রতা এবং বিচারহীনতা। হাইকোর্ট অনেক আগেই ‘টু-ফিঙ্গার টেস্ট’ বাতিল করেছে, তার পরও পুলিশ যথারীতি ওই টেস্ট ছাড়া চার্জশিট দেয় না। ওই পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের মত। আইনে বাতিল, তার পরও পুলিশ বাড়ি গিয়ে হাজির। টাকা না দিলে রিপোর্ট আটকে রাখে। মাদ্রাসার হুজুররাই শুধু ধর্ষণ করে না, করে সমাজের আরও অনেক শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাহলে মাদ্রাসার নাম এতো ওঠে কেন? কারণ মাদ্রাসার হুজুররা এই কুৎসিত ঘটনাটি ধর্ম এবং ধর্মগ্রন্থ ব্যবহার করে করে। 

অর্থাৎ ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থ তাদের অনেকের কাছে স্রেফ একটা প্রতিরক্ষা টুলস। ধর্ষণ করার পরে ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে ভিকটিমকে শপথ করায়, কাউকে বলবি না, বললে তোর গুনাহ হবে’ বা আরও মজবুত কোনো শপথ। গরিব মানুষ সব জেনে-বুঝেও কেন তার সন্তানকে মাদ্রাসায় পড়তে দেয় তার পেছনে অনেক ধরনের ডিসকোর্স আছে। অনেক বিস্তৃত লিখতে হয়। সেদিকে যাচ্ছি না। মাদ্রাসা শিক্ষকরা কেন এত ধর্ষকামী সেটা সংক্ষেপে বলা দরকার। কেউ কেউ বলেন-হুজুররা বাড়িতে বউ রেখে কর্মস্থলে সিঙ্গেল থাকে। তাই যৌন উত্তেজনা প্রশমনে পায়ূকামে লিপ্ত হয়। এই যুক্তি সত্য হলে তো পুলিশ, বিজিবি, সেনা, আনসার অঞ্চলে ধর্ষণের মহামারি হওয়ার কথা। সেখানে হয় না, কারণ শাস্তির ভয়। চাকরি চলে যাওয়ার চেয়ে দু-চার বছর জেল বড় শাস্তি নয়। তারা চাকরি ডিসমিস হওয়ার ভয়ে ভীত থাকে। তার পরও সেখানে ধর্ষণ হয়। অর্থাৎ যারা দীর্ঘদিন সিঙ্গেল থাকে এবং প্রশাসনিক কিছু ক্ষমতা আছে সেখানে ধর্ষণ ঘটে। মাদ্রাসা শিক্ষককে সেই ভয় খুব একটা নেই, কারণ তারা একধরনের সামজিক লেজিটিমেসি পায়। হুজুর মানুষ, সর্বজন শ্রদ্ধেয়। সবচেয়ে বেশি যে সাহস পায় তা হলো আইনের অসহায়ত্ব। ধর্ষণ প্রমাণে দীর্ঘসূত্রতা। সর্বোপরি সমাজের তথাকথিত ‘মাথা’দের ক্লিনচিট এবং আইনের দীর্ঘসূত্রতার কাভারে তারা ধর্ষণ করার সময় ভয় পায় না। বা ভাবিত হয় না। কিন্তু এ্যাট দ্য সেইম টাইম একজন সিঙ্গেল সৈনিক আর মাদ্রাসা হুজুরের মধ্যে হুজুরই কেন যৌনতাড়নায় বেশি ভোগে? কেন সে পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য এবং অবদমিত যৌনতা মেটাতে ধর্ষণ করে? কারণ হুজুরের সারাদিনের কর্মকাণ্ড, কথাবার্তা, ওয়াজ-নসিয়তের সিংহ ভাগই নারী নিয়ে, নারীদেহ নিয়ে, সংঙ্গম নিয়ে, নারীকে ভোগ করা নিয়ে। এটা তাত্ত্বিক দিক। আর ব্যবহারিক দিক-হুজুর প্রতিবার প্রস্রাব করার পর ঢিলা-কুলুক নিয়ে ৪০ কদম হাঁটার নামে যে যৌনাঙ্গ ছানাছানি করে তাতেও সে বারে বারে যৌনতাড়িত হয়। তখন নারী না পেয়ে সহজলভ্য দরিদ্র দাসসুলভ বালক পায়, এবং নির্ভয়ে বলাৎকার করে। এটা অবাস্তব যে পুলিশ জনে জনে পাহারা দিয়ে ধর্ষণ ঠেকাবে। ধর্ষণের মত নিকৃষ্ট নোংরা, অমানবিক ঘটনা ঠেকাবার উপায় কী? সেটা সমাজ বিজ্ঞানি আর রাষ্ট্র নেতাদের খুঁজে বের করা দায়িত্ব। আমরা যেটা বলতে চাই-

[১]  জঘন্য অমানবিক ‘টু-ফিঙ্গার টেস্ট’ বন্ধ করতে হবে।

[২] যে কেউ ধর্ষিত বা ধর্ষিতা হয়েছে মর্মে অভিযোগ করলে সেটা আমলে নিতে হবে।

[৩] ‘ধর্ষণের আলামত’ টার্মটা বাতিল করতে হবে।

[৪] পুলিশকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করতে বাধ্য হতে হবে।

[৫] ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করতে হবে।

[৬] ধর্ষণকাণ্ডে ভিকটিম নারী-পুরুষ যেই হোক তাকে সামাজিক মর্যাদাসহ নিরাপত্তা দিতে হবে।

[৭] ধর্ষণের পর দুই পক্ষের অভিভাবকরা রাজি থাকলেও ধর্ষক-ধর্ষিতর বিয়ে নিষিদ্ধ করতে হবে।

[৮] ধর্ষক যত বড় কেউ কেটা হোক, অভিযুক্ত হলেই তাকে চাকরিচ্যুত করতে হবে। ছাত্র হলে ছাত্রত্ব বাতিল, ব্যবসায়ী হলে প্রতিষ্ঠান সিল-গালা করতে হবে।

[৯] আদালতে ধর্ষিতাকে দুঁদে আইনজীবীর আইনগত আক্রমণ বন্ধ করতে হবে। [১০] ধর্ষিতার অভিভাবকের সামর্থ না থাকলে আদালতকে স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করতে হবে।

পুনঃশ্চ- ২০১৬ সালে পার্বতীপুরে ৫ বছরের একটি শিশুর যৌনাঙ্গ ব্লেড দিয়ে কেটে বড় করে সাইফুল নামের যে হারামজাদা সারাদিন-রাত বারে বারে ধর্ষণ করেছিল তার যাবজ্জীন কারাদণ্ড হয়েছে। এই নর্দমার কীটকে খুব কম শাস্তি দেওয়া হয়েছে। নেট ঘাটলে ৪/৫ বছরের শিশু থেকে ৬০/৭০ বছরের বৃদ্ধাকেও ধর্ষণের ছবি-খবর পাওয়া যায়। পৃথিবীর সব দেশেই কম-বেশি ধর্ষণ ঘটে, তবে বাংলাদেশের মত এমন মহামারির মত ধর্ষণ ঘটনা আর কোথাও ঘাটে না। বাংলাদেশের ধর্ষণবিরোধী আইন, আইনের ব্যবহার, আইনের ফাঁক-ফোকড়েই ধর্ষণলিপ্সা মিশে আছে। বাংলাদেশের পুরুষাকার মানেই যেন ‘ধর্ষণবান্ধব’ বাতাবরণ। বাংলাদেশের প্রশাসন ‘চায়’ বলেই নির্বিঘ্নে ধর্ষণ হতে পারে। হচ্ছেও। আমরা এর বিহীত চাই।

লেখক: ফ্রিল্যান্স জার্নালিস্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়