নাদেরা সুলতানা নদী: এটা কিন্তু অনেকটাই পরিষ্কার কে বা কারা বাংলাদেশের মেয়েদের শুধু ফুটবল খেলা কেন একেবারেই সামনে আসতে দিতে চান না আর! দেখতে চান না কোনো রূপেই টানটান করে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো মেয়েদের সমাজের কোনো স্থানেই। কে বা কারা চাইছেন, নারী যেন কাপড়ের আড়ালে নিজেদের পুরো ঢেকে শুধু সংসার দায়িত্ব, সন্তান-সন্ততি পালনের মতো কাজেই আবার ফিরে যান আমরা বোধহয় অনেকেই সেটা অনুধাবন করতে পারছি, দেখছিও তা অসহায় দৃষ্টিতে। কেন বলছি এই কথা আজ, এই যে আমাদের সাহসী কিছু মেয়ে ভীষণ বৈরী একসময়ে ফুটবলের মতো একটা খেলায়, নিজেদের দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করেছে এটা যে নিছক একটা জয় নয়, এই সময়ের বাংলাদেশে ধর্মান্ধ এক জনগোষ্ঠীর স্বাভাবিক জীবন বিরোধী ধর্ম দর্শনের বিরুদ্ধে একটা ছুঁড়ে দেয়া চ্যালেঞ্জের জবাব, এটা বোধ হয় বলার অপেক্ষা রাখে না।
যে বা যারা স্বপ্ন দেখেন সভ্য সুন্দর উদার এবং স্বাভাবিক এক বাংলাদেশের। যারা মনে করেন ‘আমার এ দেশ সব মানুষের’ তাঁরা খুব স্বাভাবিকভাবেই মেয়েদেরও দেখতে চান সুস্থ এবং মানবিক এক জীবন ধারায়। যে মেয়ে জীবনে আছে, আকাশ, বাতাস, নীল সবুজ, বৃষ্টি ছুঁয়ে যাওয়া রিনিক ঝিনিক হাসির ধারা... কাজল চোখে শিশির মাখা অনুভবে বন্ধুর হাতে হাত রেখে নির্ভয়ে হেঁটে যাওয়া। আছে বেনী দুলানো সুখী কিশোরীর পথচলা, শাড়ি পরা তরুণীর প্রেমিকের হাত ধরে খোলা চুলে রিক্সায় ঘুরে চলার স্বাভাবিক স্বাধীনতা। আজ সারাদিন ফেসবুকের নিউজ ফিড ভেসে যাচ্ছে আমাদের লাল সবুজ মেয়েদের জয়ের গল্প গাঁথার উচ্ছ্বাসময় নানান ছবির। যা বলে শুরু করেছিলাম, এই পোস্টটি যারা পড়ছেন তাঁদের কাছে আমার একান্ত একটা ভাবনা শেয়ার করি এই প্রসঙ্গেই।
আমি জানি, মেয়েদের এই জয় ধর্মান্ধদের বিরুদ্ধেও যারা আমাদের মেয়েদের বন্দী করে দিতে চায়, তাদের মানসিকতার বিরুদ্ধে। আমরা যারা বলি তাদের বলে যেতেই হবে এই শেকল ভাঙতে হলে... তারপরও আমার আশংকা হচ্ছিলো আমাদের ফুটবল টিমের মেয়েদের ছবি ব্যবহার করে সরাসরি সেই মৌলবাদীদের আঘাত করা হচ্ছে, মিডিয়াতে এমন ছবিতে আমরা না আবার এই মেয়েগুলোকে কোন বড় বিপদের মাঝে ফেলে দেই। আমরা তো এটা ভালো করেই জানি, যে বা যারা ধর্মান্ধ তারা কী ভীষণ এক পেশে, অন্ধ এবং তাদের যারা চোখ বুজে সমর্থন করে কী ভীষণ কম জানা মোটা বুদ্ধির তারা কোথাও কোন মেয়েকে শারীরিক, মানসিক বা সাইবার বুলিইং করতে হলে কতোটা নিষ্ঠুরতার সাথে ঝাঁপিয়ে পড়ে তা আমাদের অজানা নেই।
আজ মেয়েগুলোকে সাফল্য ছুঁয়ে আছে আমাদের মধ্যমণি হয়ে উঠে আসছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কাল বা পরশু আমরা অনেকেই আর খোঁজ নেবনা, নেবার সময় হবেনা কোন মিডিয়ারও... তাই কেউ যেন নিজেদের অজান্তেই তাদের যুদ্ধটাকে আরো কঠিন না করে দেই। আপাতত সাফল্যটা, কাল ছাদ খোলা গাড়িতে উদযাপন করুক সোনা মেয়েরা...। কথা যখন শুরু হয়েছে, আমাদের বলতে হবে, বলতেই হবে...(আমি যতদিন বেঁচে আছি বলে তো যাবোই)। মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :