রাখাল রাহা: ছেলেরা শোনো, প্রতিটা মেয়েরই মাসে মাসে যে মাসিক হয়, তা তোমার মায়েরও হয়ে থাকে। আর হয়ে থাকে বলেই তুমি জন্ম নিয়েছো, জগতে এসেছো। এ না হলে তুমি এই সুন্দর পৃথিবীতে আসতে পারতে না। আজ তোমার সামনে যত মেয়ে দেখো, তাদের সবারই একটা বয়সে এটা হয়ে থাকে, যাতে তোমারই মতো আরেকটা সুন্দর ছেলে বা মেয়ে পৃথিবীতে আসতে পারে। আর এভাবেই অনাদিকাল থেকে মানুষের পৃথিবীটাকে টিকিয়ে রাখতে তোমার মায়ের মতো প্রতিটি মেয়ে মাসে মাসে কষ্ট করে চলেছে। কী হয় মেয়েদের মাসিকের সময়? তাদের যোনিপথ থেকে একধরনের পাতলা রক্ত বের হয়। কেন হয়? এটা শরীর-বিজ্ঞানের বিষয়। তোমরা বড়ো হয়ে নিশ্চয় সেসব পড়বে-জানবে। এখন শুধু এটুকু জানো, তোমার বাবা তোমার মাকে খুব ভালোবাসে। ভালোবাসারই আরেক রূপ কাম, মিলন, সঙ্গম। তোমার মায়ের মাসিকের পর কোনো এক অলৌকিক মুহূর্তে যখন তোমার বাবার সাথে তার মিলন হয়, তখন তুমি তাদের সেই ভালোবাসায় ভর করে মায়ের গর্ভে ছোট্ট ভ্রুণ আকারে তৈরি হও।
এরপর তোমার বাবা আর তোমার জন্য তেমন কিছুই করে না। শুধু মা তোমাকে দিনে দিনে তার পেটের মধ্যে একটু একটু করে বড়ো করে। বড়ো কষ্টের সেই বড়ো করা। আর তুমি যখন দশ মাস ধরে বড়ো হয়ে তোমার মায়ের যোনিপথ দিয়ে বেরিয়ে আসো, তখনকার যে কষ্ট তা কোনো ছেলে কখনো অনুভব করতে পারবে না। তোমার বাবাও না, তুমিও না। এবার তোমার সামনের মেয়েটার দিকে তাকাও। সে তোমারই জন্য বড়ো হচ্ছে, যেমনভাবে তোমার মা বড়ো হয়েছিল তোমার বাবার জন্য। সে তোমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্যই বড়ো হচ্ছে, যেমনভাবে তোমার মা তোমার বাবার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য বড়ো হয়েছিল। তুমিও তাই। এটাই পৃথিবীর ভালোবাসার চক্র। এই ভালোবাসার জন্য, ভালোবাসাময় পৃথিবী তৈরির জন্যই তুমি শিশু থেকে এখন কিশোর হয়েছো, কিশোর থেকে একদিন যুবক হবে। এটাকেই তোমার বাবা-মা বলেন, তোমার মানুষ হওয়া। কিন্তু তুমি যদি অমানুষ হও, ভালোবাসাটাই হারিয়ে ফেলো, তাহলে পৃথিবীর কোনো মেয়েই তোমার নয়, তুমি তাকে পেয়েও তার নও।
আজ দেশ-বিদেশের নানা অশুভ শক্তি চাইছে তুমি যেন অমানুষই হও। চাইছে, তোমার কোনো ভক্তি-ভালোবাসা না থাক, তুমি শুধু মেয়েদের শরীর দেখবে, ভাববে সব মেয়েই তোমার ভোগের জন্য, আর তুমি প্রেম-ভক্তিহীন কামে সারাক্ষণ ডুবে থাকো। কারণ ভালোবাসা তাদের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর, ভক্তি তাদের জন্য আরো ক্ষতিকর। কারণ ভালোবাসা বলে, আমি তোমার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করবো। প্রয়োজনে ভালোবাসা বলে, ‘একটি ফুলকে’ বাঁচানোর জন্য যুদ্ধও করবো। আর ভক্তি বলে, জগতে আর কিছু নয়, শুধু ‘সহজ মানুষ ভজে যাও’ দিব্যজ্ঞান দিয়ে। সেই ভক্তি আর ভালোবাসার যে মানুষ আমরা এই ভূখণ্ডের ছিলাম, তার শিক্ষা নেওয়াই তোমার বড়ো হওয়া। সেই মানুষ, সেই ভূখণ্ড, সেই নদী-মাঠ-প্রকৃতি ফিরিয়ে আনার শিক্ষা নেওয়াই তোমার বড়ো হওয়া। তুমি আজ বড়ো হও, বাবা। (রাখাল রাহা, ১০ জুলাই ২০১৮)
নোট: সকল বাবা-মায়ের জন্য, যাদের কিশোর সন্তান রয়েছে। আমাদের পাঠ্যবইয়ে বা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পে বা ধর্মীয় উপদেশে যেভাবে প্রজনন ও নারী-শরীরের বর্ণনা-ব্যাখা হাজির করা হয়, তা যে জন্য এই আয়োজন নিজের শরীরকে জানা, নারীর প্রতি শ্রদ্ধা তাকেই আরো ক্ষতিগ্রস্ত করে চলেছে। এর অনেকগুলোই ইচ্ছাকৃত বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে।