অপরাহ্ণ সুসমিতো: আমাদের ম্যাক্রো ইকোনোমিক থিওরি পড়াতেন ড. শাকের। স্যারকে হাসতে দেখিনি। হাঁ করে বোঝার চেষ্টা করি। সুজিতকে জিজ্ঞেস করি: মাথায় ঢোকে কিছু? সুজিত হচ্ছে হাত বাড়ানো বন্ধুর মতো। একদিন বাসে আমার কানের সামনে মুখ নিয়ে বলে, তুমি অপরাহ্ণ সুসমিতো? তোমার গল্প পড়লাম করিডোরে। আমি সুজিত রায়। আচ্ছা গল্পের মেয়েটা কি অমুক? আমি ফেলুদার মতো রহস্যের হাসি দিয়ে বললাম তুমি সত্যজিৎ-এর কিছু হও? সুজিত প্রেমে পড়ার মতো একটা হাসি দেয়। সুজিত আমাদের শাহজালাল হলে চলে আসে শহরে ওর দাদুর আস্তানা ছেড়ে। আমাদের রাতের দিনের বেসুমার আড্ডা বেড়ে যেতে থাকে। শাহজালাল হলের পেছন দিয়ে কাটা পাহাড়। বাস যাবার জন্য পাহাড় কাটা হয়েছিল কিন্তু যে কারণেই হোক আমাদের দেশের অন্যান্য প্রজেক্ট এর মতো দশা। থেমে আছে রাস্তা। কিন্তু আমরা তো থেমে থাকতে পারি না। শামসুন নাহার (নতুন শাখা) হলে যাবার কোণা রাস্তা অবিলম্বে আবিস্কার হলো। আমার গল্প ছাপা হওয়া কপিটা সুজিতের কাছে ছিলো, সুজিতকে বললাম , কই দেখাও কপিটা। আমাকে মাহবুব আলী দেয়নি সৌজন্য সংখ্যা..
সুজিত বললো ইশরাতের কাছে আছে। কাঞ্চনের কাছেও আছে। কাঞ্চন শহরে থাকে। তার মানে আবার ইশরাত। বিকেলে অত:পর আমরা সেই পাহাড় কাটা পথ ধরি। শামসুন নাহারে যাবার দ্রুতগামী পুলসেরাত। বিকেলের দলে জমা হয়, আজিম,গৌতম,সুজিত ও মুকুট। মুকুটকে নেয়ার বুদ্ধি মুকুট ও ইশরাত দুজনেই একে অন্যকে আগে থেকেই চেনে। ওরা একই শহর, ব্রাহ্মনবাড়িয়া থেকে উচ্চ-মাধ্যমিক। শহিদ মিনারের কাছে এসে আমার মন এত ভালো হয়ে যায়। সন্ধ্যাটুকু বাগানের ঢল মনে হলো। এত বড় স্তম্ভ শহিদ মিনারের! কতো ছেলে মেয়ে। কাকলীর ধ্বনি। শহিদ মিনারের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া সড়কটাকে করিডোর করিডোর মনে লাগে। শহিদ মিনার নিয়ে আলাদা একটা ভয় মেশানো ছিল, ভয়টা মুহূর্তে উড়ে যায়। সুজিত মুকুটকে বলে, মুকুট গান করো মুকুট সুজিতকে এক ধমক দেয়, ফাইজলামি পাইছো?
মেয়েদের হলের সামনে করি গান আর ইশরাত ভাবব আমরা সবাই তারে দেখতে আইছি। পারতাম না। গৌতম, আজিম মুকুটের ধমকের স্টাইল দেখে হো হো করে হেসে ওঠে। এত প্রাণের হাসি। মেয়েদের হলে যাবার তরুণ শিহরিত হাসি। আমার মাথায় একটা অসভ্য পংক্তি ঘূর্ণন দিয়ে ওঠে। বৃষ্টির ডানা নেই জল হয়ে আকাশ থেকে পড়ে। পাখিদের ডানা আছে, মুক্ত হয়ে ভূমি থেকে ওড়ে। মাথার উপর দিয়ে কোথায় যেন যায় কতগুলো বিকাল পাখি। নাম জানি না। শহিদ মিনারের এক কোণায় মুকুল, অন্য কোণায় সভ্য কাঞ্চন, মাঝখানে কতোগুলো মেয়ে। মুকুল আর কাঞ্চনের একটা দারুণ ভ্যারিয়েশন আছে, মুকুল অনেক লম্বা। মুকুল আমাদের দেখিয়ে ৫৫৫ সিগারেট ধরায়। কাঞ্চন সিগারেট খায় না, লাজুক কিংবা চোরা হাসি দিয়ে বসে থাকে, ভাবখানা আমি নিজে আসিনি,মুকুল ধইরা নিয়া আসছে। দেখাদেখি আমাদের আজিমও সিগারেট ধরালো ফস করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিকাল নামে দলবলে। আমি মুগ্ধতা নিয়ে সন্ধ্যা দেখি, অপেক্ষা করি রাত নামার।
আপনার মতামত লিখুন :