আহসান হাবিব: [১] মানুষ তার নিজের দুর্বলতা কী করে প্রকাশ এবং ঢেকে রাখতে হয়, সম্ভবত এই শিল্পটি এখনো খুব ভালো করে রপ্ত করতে পারেনি। বরং তারা অন্যের দুর্বলতাগুলি খুঁচিয়ে বের করার পারদর্শিতা দেখিয়েছে। অথচ উচিত হচ্ছে নিজের দিকে তাকানো, নিজের দুর্বলতা সবলতাকে চিহ্নিত করে তার উন্নয়ন করা। কিন্তু হায়, মানুষ করে ঠিক তার উল্টা।
[২] প্রকৃতি থেকে মানুষ আলাদা তার সৃজনশীলতার জন্য। বিজ্ঞান এবং বিবিধ শিল্পে মানুষ তার সাক্ষর রেখেছে। প্রকৃতি যেভাবে তার ক্ষত সারায়, বিজ্ঞান সারায় আরো নিখুঁতভাবে। প্রকৃতি যেভাবে নিজেকে প্রকাশ করে এবং তাতে যে সৌন্দর্য ফুটে থাকে, একজন শিল্পীর আঁকা একটি পেইন্টিং তার চেয়ে বেশি সৌন্দর্য ধরে। এর কারণ প্রকৃতির সৌন্দর্য একরৈখিক কিন্তু একজন শিল্পীর বহুরৈখিক। এই বহুরৈখিকতার কারণ সে প্রকৃতিকে হুবহু না এঁকে তাতে যোগ করে নিজস্ব ভাবনা। এই ভাবনাটাই তাকে প্রকৃতি থেকে আলাদা করে এবং নতুন মাত্রা যোগ করে। এই নতুনত্বই মানুষকে মুগ্ধ করে। মানুষ যখন দুর্ঘটনার শিকার হয়, দেহ ক্ষতাক্ত হয়, তখন বিজ্ঞান যেভাবে তাকে সারায়, তা প্রকৃতির চেয়ে উন্নততর। অথচ মানুষ এই সারাবার যে প্রক্রিয়া বা মেথড প্রয়োগ করছে তা প্রকৃতি থেকেই প্রাপ্ত। মানুষ এবং প্রকৃতির মধ্যের এই দ্বন্দ্বের মিমাংসার স্বরূপটাই তার বিকাশকে ত্বরান্বিত করে। কিন্তু শিল্পী হয়ে ওঠা চারটেখানি কথা নয়। এই হয়ে ওঠা ক্রমাগত নিজের দুর্বলতা এবং সবলতাকে চিহ্নিত করার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়।
[৩] মানুষ কেন অন্যের দুর্বলতা নিয়ে এতো উচ্চকিত? কারণ, তার নিজের দুর্বলতা প্রবল। তাকে আড়াল কিংবা ঢাকতে গিয়েই এই অনধিকার চর্চার আশ্রয় নেয় সে। এই সত্য যখন তার সামনে তুলে ধরা হয়, তখন সে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তখন সে নিজেকে ধরাপড়া একজন বালকের মত মনে হয় কিন্তু তার প্রকাশ হয় রাগী যুবকের মত। আমরা আমাদের নিজেদের দুর্বলতাগুলি যত শনাক্ত করতে পারবো, তাকে অতিক্রম করার চেষ্টা করবো, তত আমরা সবল হয়ে উঠবো। এটাই নিজের সঙ্গে নিজের দ্বন্দ্বের মিমাংসার বৈজ্ঞানিক পথ।