শিরোনাম
◈ ভালোবাসার শহর প্যারিসে বৃষ্টিভেজা রাতে শুরু হলো অলিম্পিকস ২০২৪ ◈ সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী আজ ◈ কারফিউ আরো শিথিলের সিদ্ধান্ত হবে আজ, জানালেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ একদফা দাবিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক বিএনপির ◈ শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে শ্রীলঙ্কা  ◈ ডিবি হেফাজতে কোটা আন্দোলনের ৩ সমন্বয়ক ◈ কোটা আন্দোলন: ঢামেকে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীসহ তিন জনের মৃত্যু ◈ হেলিকপ্টার দিয়ে মানুষ হত্যার জবাব জনগণ একদিন আদায় করে নেবে: মির্জা ফখরুল ◈ প্রতিটি হামলার ঘটনার বিচার হবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ সাম্প্রতিক সহিংসতায় আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেবে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত : ০৪ এপ্রিল, ২০২৪, ০৫:১৯ সকাল
আপডেট : ০৪ এপ্রিল, ২০২৪, ০৫:১৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভিয়েতনামে বিস্ময়: এমন মানুষও পৃথিবী আছে?

মাসুদ রানা

মাসুদ রানা: আমি যে-অভিজ্ঞতা পেলাম ভিয়েতনামের সায়গন তথা হো চি মিনে, তা গোটা জীবনেও পাইনি। তাই ভাবছি ফেইসবুক বন্ধুদের সাথে সহভাগ করি। লণ্ডন থেকে সিঙ্গাপুরে তিন রাত থেকে, আজ ভিয়েতনামের হো চি মিনে দ্বিতীয় দিবস। এ-পর্যন্ত সমস্ত খরচ ডেবিট কার্ড দিয়েই করেছি, কোথাও নগদ কারেন্সির প্রয়োজন হয়নি, এমনকি ট্যাক্সি ভাড়া মেটাতেও না। আমি কোনো দেশে গেলে, তার মিউজিয়াম না দেখে পারি না। সূর্য সার্চ করে জানালো হো চি মিনে আছ ওয়ার মিউজিয়াম, আর ন্যাশনাল মিউজিয়াম হ্যানয়ে। তাই, ঠিক হলো আমরা দু’দিন পর হ্যানয় যাবো, আর আজ দেখবো ওয়ার মিউজিয়াম।

ট্যাক্সিতে মিউজিয়ামের গেইটে গিয়ে জানলাম, টিকিট কিনতে ক্যাশ কারেন্সি লাগবে। ক্যাশ তো নেই। সুতরাং খুঁজে বের করলাম একটা এ্যাটিএম বা ক্যাশ মেশিন, যা ছিলো একটু উঁচুতে বানানো একটি ব্যাঙ্ক বিল্ডিংয়ের কাছে, রাস্তার পাশে। হতাশ হলাম, মেশিনটি না আমার, না সূর্যের কার্ডে ক্যাশ দিলো। আমাদের দু’জনেরই ন্যাটওয়েস্ট ব্যাংকের ডেবিট কার্ড। দুবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার পর গেলাম ব্যাংকে। ব্যাংকে ঢুকে কাউণ্টার এ্যাপ্রৌচের প্রায় সাথে সাথেই একজন অফিসার জিজ্ঞেস করলেন আমরা কী চাই। বললাম, টাকা তুলতে চাই মাস্টারকার্ড দিয়ে। 

ভদ্রলোক তার ভাষায় সহকর্মিনীর সাথে আলাপ করে জানালেন যে আমাদের এ্যাকাউণ্ট না থাকলে টাকা তোলা সম্ভব নয়। ভদ্রলোক আমাদের সাহায্য করতে চাইছেন। তিনি নিজে ব্যাংক থেকে বেরিয়ে আমাদের সাথে ঐ ক্যাশ মেশিনে গিয়ে গাইড করলেন। তবুও কাজ হলো না। তরুণ ম্যানেজার জিজ্ঞেস করলেন কতো টাকার প্রয়োজন এবং কেনো। বললাম, মিউজিয়ামের টিকিট কিনবো ৪০,০০০ ভিয়েতনামী টাকা ডং দরকার। তিনি বললেন আচ্ছা ব্যাংকে চলুন। ভাবলাম তিনি হয়তো তার ম্যানেজারিয়্যাল ক্যাপাসিটিতে কিছু একটা করবেন- অর্থাৎ, টাকা তোলার একটা ব্যবস্থা করবেন। ম্যানাজার আমাদেরকে ব্যাংকের ভেতরে আমন্ত্রণ না করে একাই দ্রুত ভেতরে গেলেন। সূর্যও কোথাও গেলো। আমি ব্যাংকের বাইরে কিন্তু বিল্ডিংয়ের ভেতরেই লবিতে অপেক্ষা করতে থাকলাম। 

কিছুক্ষণের মধ্যেই ম্যানাজার এলেন হাতে একটি খাম নিয়ে, এবং বোমাটি ফাটালেন ঠিক তখনই। বোমাটি এমন যে, আবেগে আমার চোখ সজল-প্রায় হয়ে এলো। কী ভাবছেন পাঠক? ম্যানেজার খামটি খুলে সেখান থেকে একট নৌটের খানিকটা বের করে ভাঙ্গা ইংরেজিতে বললেন ‘দেখুন, বেশি পারছি না। এখানে ৫০,০০০ ডং আছে। তাতে আপনাদের টিকিটের দাম হয়ে যাবে। দয়াকরে এটি আমার গিফট হিসেবে নিন।’ ঘটনাটি আমার কল্পনারও অতীত বলে বিস্ময়ে রূপতঃ আকাশ থেকে পড়লাম। বললাম, কী বলছেন আপনি! আমি টাকা উপহার নেবো আপনার কাছ থেকে? মানে, আপনি আমাকে টাকা উপহার দেবেন? আমি এক বিদেশী। আপনি আমাকে চেনেন না, কেনো আপনি আমাকে টাকা উপহার দেবেন? বিনয়ের সাথে ম্যানেজারটি বললেন, ‘আপনারা আমাদের ওয়ার মিউজিয়াম দেখতে এসে টাকা না থাকার কারণে ফিরে যাবেন? এটি কেমন লাগে! তাই এই ক্ষুদ্র উপহার। দয়াকরে নিন।’ 

ইতোমধ্যে সূর্য ফিরে এসেছে। আমি ওকে সংক্ষেপে বিষয়টি বললাম। সূর্য ধন্যবাদ জানিয়ে বললো ওর এইচএসবিসি কার্ড গ্রহণ করেছে ক্যাশ মেশিনটি। আমার ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লো যেনো। কিন্তু ম্যানেজার যেনো হতাশ হলেন। আমি তার কাঁধ স্পর্শ করে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে বললাম, ‘ইয়াংম্যান, আমি জীবনে বহুদেশ ঘুরেছি, বহু মানুষের। সাথে পরিচিত হয়েছি, কিন্তু আপনার মতো মানুষ কোথাও পাইনি! ইউ আর জাস্ট এ্যা রীয়েল হিউম্যান! থ্যাং ইউ সো মাচ!’ আরও বললাম, ‘আমার ছেলে জন্মেছে ইংল্যাণ্ডে, কিন্তু আমি বাংলায়, এখন বাংলাদেশ। আমার স্কুলজীবনে আমি মিছিল করেছি ভিয়েতনামের পক্ষে ও এ্যামেরিক্যান সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে। আমার মনে হচ্ছে আজ তার প্যেমেণ্ট পেলাম, যা কখনও আশাই করিনি।’ দারুণ এক মানবিক শান্তি নিয়ে ভিয়েতনামের ওয়ার মিউজিয়ামে ঢুকলাম। ০২/০৪/২০২৪। হো চি মিন, ভিয়েতনাম

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়