মনিরুল ইসলাম: পদ্মা সেতু নির্মাণের পরতে পরতে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যরা। বুধবার রাতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এ অভিযোগ করেন তারা।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণের কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গোটা জাতির পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানিয়ে ১৪৭ বিধিতে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনা হয়। আলোচনায় অংশ নেন বিএনপির সংসদীয় দলের নেতা মো. হারুনুর রশীদ ও সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা।
এ সময় মো. হারুনুর রশীদ বলেন, পদ্মা সেতু সত্যিই বড় অর্জন। পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করেনি, এটা তো আমাদের কোন দোষ নেই। কেন অর্থায়ন করেনি? সারা বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দফায় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে কেন? এ ব্যাপারে স্বচ্ছতা থাকা প্রয়োজন। ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিএনপির কথায় বিশ্বব্যাংক টাকা বন্ধ করে দেয়, এ কথা সত্য নয়। পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়ন করেছে, কি করেনি, সে দায়দায়িত্ব আমাদের না। বিশ্বব্যাংক আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এখনও বাংলাদেশের অনেক উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক।
তিনি বলেন, প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যমুনা সেতু নির্মাণে প্রায় ৩২০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল। আমরা সেই সেতু মাত্র দুই বছরে নির্মাণ সম্পন্ন করেছিলাম। অথচ ২০১৩ সালে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু দফায় দফায় সময় বাড়ানো হয়েছে। একইসঙ্গে দফায় দফায় ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে। এটা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন। এই বিষয়গুলোর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা দরকার।
এর আগে বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে যে ব্যয় হয়েছে তাতে এটাকে গোল্ডেন ব্রিজ বলা যেতে পারে। এমনই গোল্ডেন সেতু, যার পরতে পরতে দুর্নীতির চিত্র। পদ্মা সেতু নিয়ে সরকার হরিলুট করেছে, সেজন্যই বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ নেয়নি। পদ্মা সেতু নির্মাণে ৫ হাজার কোটি টাকা খরচ পড়েছে পার কিলোমিটার। এক পদ্মা সেতুর ব্যয়ে ভারতে ১০টি বড় সেতু নির্মাণ করা সম্ভব, লুটপাট কাকে বলে।
তাঁর এমন বক্তব্যের সময় প্রতিবাদে ফেটে পড়ে সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা। এরপরও বক্তব্য অব্যাহত রাখেন রুমিন ফারহানা। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর মূল পরিকল্পনা করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালে। সেই সময় ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্প পাস হয়। শুরুতে যখন পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয় তখন রেল সেতুর কথা পরিকল্পনা ছিল না, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে রেল সংযুক্ত করেন। কিস্তু দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে সরে যায়। এরপর দফায় দফায় বাড়ানো হয় পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয়। কয়েক দফা বেড়ে নির্মাণ ব্যয় ৩০ হাজার কোটি টাকায় পৌছায়।
তিনি আরও বলেন, ভারত, মালয়েশিয়া, চীন ও জাপানের সঙ্গে তুলনা করলে এই খরচ অনেক বেশি। কারণ ভারতের ৯ কিলোমিটারের ভূপেন হাজারিকা সেতু নির্মাণের খরচ হয় ১১০০ কোটি রুপি। অর্থাৎ একটা পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় দিয়ে ভারতের ত্রিশটা ভূপেন হাজারিকা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব।