পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান দুঃখ করে বলেছেন যে, একটি সুন্দর জিনিসকে কিভাবে অসুন্দর করতে হয় তা শিখতে হলে বাংলাদেশে আসতে হবে।
পরিবেশকর্মী রিজওয়ানা হাসান বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের অব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ ধ্বংসের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বিভিন্ন ঘটনা ও উদাহরণের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো তুলে ধরেছেন।
আজ শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরে আয়োজিত “রোড টু গ্রিন ম্যানিফেস্টো” শীর্ষক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পরিবেশ উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, পরিবেশ রক্ষা এখন আর শুধু নীতির বিষয় নয়, এটি মানবিক দায়িত্ব। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সুস্থ, নিরাপদ, বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়ে তুলতেই হবে।
গাজীপুরে ৮৮ একর বনভূমি দখলের পর তা উচ্ছেদ করতে গিয়ে নানান রকমের চাপ ও অসহযোগিতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। দরিদ্র মানুষের দোহাই দিয়ে দখলকৃত বনভূমি থেকে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রাখার চেষ্টার তীব্র সমালোচনা করেছেন রিজওয়ানা হাসান।
সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, “আমাদের সত্য বলতে হবে—জলবায়ু পরিবর্তন, নদী দখল, বন উজাড়, পাহাড় নিধনের যে ভয়াবহতা সামনে আসছে, তা থেকে রক্ষা পেতে হলে পরিবেশকে আর উপেক্ষা করা যাবে না।
সিলেটের জাফলং-এর মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর একটি স্থান পাথর উত্তোলনের কারণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, দেশের মোট পাথরের চাহিদার মাত্র ৬% এই উত্তোলন থেকে মেটানো হয়, বাকি ৯৪% আমদানি করতে হয়। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কেন আমরা ভিয়েতনাম বা অন্যান্য দেশের মতো ইকোট্যুরিজমকে গুরুত্ব না দিয়ে পাথর উত্তোলন করে পরিবেশ ধ্বংস করছি।
একজন ডিসি সরকারকে জানিয়েছিলেন যে পাথর উত্তোলনের চেয়ে ইকোট্যুরিজম থেকে অনেক বেশি আয় করা সম্ভব। রিজওয়ানা হাসান পাথর শ্রমিকদের কাজকে 'শোষণ' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, কারণ তারা সারাদিন পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে পাথর তোলে।
জাফলং-এ পাথর উত্তোলন বন্ধের বিষয়ে রাজনৈতিক ঐক্যের অভাব দেখা গেছে। রিজওয়ানা হাসান ৪ বছর পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখতে পারলেও এখন উপদেষ্টা হিসেবে তা বন্ধ রাখতে পারেননি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, পরিবেশ মন্ত্রণালয় বাজেটে বরাবরই উপেক্ষিত, অথচ রাজধানীর বায়ুদূষণ, জলাশয় সংকট, খাদ্য ও পানির নিরাপত্তা—সবকিছুর সাথে এই মন্ত্রণালয় সরাসরি যুক্ত। বেইজিং যেমন পাঁচ বছরে বায়ুর মান ৩৭% উন্নত করেছে, আমাদেরও তেমনি বিনিয়োগ করতে হবে।