শিরোনাম
◈ 'মৌসুম যেমনই হোক, বন্ধুত্ব থাকবে', ভারত-মালদ্বীপ সম্পর্কের ‘বরফ গলছে! (ভিডিও) ◈ এশিয়া কাপে তিনবার মুখোমুখি হতে পারে ভারত ও পাকিস্তান ◈ শাহজালালে যাত্রীর সঙ্গে ঢুকতে পারবেন ২ জন, আজ থেকে কার্যকর ◈ মাইলস্টোন স্কুলের দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের জরুরি চিকিৎসা সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ◈ জামায়াতের সমাবেশে খরচের পরিমাণ যা জানা গেল ◈ চাঁদাবাজির খবর দেখে আশপাশের সবাই এত অবাক হওয়ার ভান করছেন বিষয়টা কিছুটা হাস্যকর বটে: উমামা ফাতেমা ◈ বাংলা‌দেশ এবার সি‌রিজ খেল‌তে চায় নেপাল অথবা নেদারল্যান্ডসের সাথে ◈ নতুন মেরুকরণের পথে দেশের রাজনীতি ◈ শ্বাসরুদ্ধকর ম‌্যা‌চে দ‌ক্ষিণ  আফ্রিকাকে হা‌রি‌য়ে চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ড ◈ ৯ সে‌প্টেম্বর এশিয়া কাপ শুরু, বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ১১ সেপ্টেম্বর

প্রকাশিত : ২৬ জুলাই, ২০২৫, ০৫:৪৬ বিকাল
আপডেট : ২৭ জুলাই, ২০২৫, ১২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: গত ১১ মাসে মামলা ১৬০১, চার্জশিট ১২

ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন।। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় বিভিন্ন ঘটনায় সারাদেশে দায়ের করা ১৬০১টি মামলার মধ্যে ১২টি মামলায় চার্জশিট দেয়া হয়েছে৷ এর মধ্যে হত্যা মামলা ৩টি এবং অন্যান্য ধারায় মামলা ৯টি৷ পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে এ তথ্য৷

চার্জশিট দেয়া তিনটি হত্যা মামলার সবগুলোই শেরপুর জেলার৷ অন্যান্য ধারার ৯টি মামলার মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার তিনটি, সিরাজগঞ্জ জেলার দুইটি এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের দুইটি৷

পুলিশ সদর দপ্তরের এআআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পুলিশ সদর দপ্তরের মনিটরিং-এর মাধ্যমে মামলাগুলোর তদন্ত চলছে৷ অনেক মামলারই তদন্তে অগ্রগতি আছে৷’’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হতাহতের ঘটনায় এখন পর্যন্ত সারা দেশে এক হাজার ৬০১টি মামলা হয়েছে৷ পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এসব মধ্যে ৬৩৭টি হত্যা মামলা৷ বেশির ভাগ মামলা হয়েছে গত বছরের ১৯ জুলাই এবং ৪ ও ৫ আগস্টের হতাহতের ঘটনায়৷ এসব মামলাগুলোতেই সবচেয়ে বেশি তদারকি পুলিশ সদর দপ্তরের৷ ৬০ থেকে ৭০টি হত্যা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে আছে৷ পর্যায়ক্রমে এসব মামলার প্রতিবেদন দেয়া হবে বলে জানায় পুলিশ সদর দপ্তর৷

২০২৪ সালের ১৮ জুলাই আজিমপুর স্টাফ কোয়ার্টারে নিহত হন স্কুল ছাত্র খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ৷ ওই ঘটনায় তার বাবা কামরুল হাসান লালবাগ থানায় ৫২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন৷ কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র ১৭ জন গ্রেপ্তার হয়েছে বলেন জানান তিনি৷ তার অভিযোগ, ‘‘এহাজারভুক্ত অনেক আসামি এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ তারা আমাকেই বলছে চেষ্টা করে লাভ নাই, পুলিশ আমাদের গ্রেপ্তার করবে না৷’’

তিনি চরম অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘পুলিশ আসামিদের কাছ থেকে টাকা খেয়ে এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করছে না, অজ্ঞাত আসামিদের গ্রেপ্তার করছে৷ আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও দেখা করেছি৷ আসামিদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত চার্জশিট দেয়ার অনুরোধ করেছি৷’’

মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ নিহত হন ১৯ জুলাই উত্তরায়, পেশায় ছিলেন গাড়ি চালক৷ তার স্ত্রী ফারজানা বেগম জানান ওই ঘটনায় আসাদুল্লাহর মা বাদী হয়ে মামলা করেছেন৷  ফারজানা বলেন, ‘‘মামলায় কতজন আসামি, কেউ গ্রেপ্তার হয়েছে কী না তার কিছুই আমি জানি না৷ আমার শ্বাশুরিও জানে না৷ তার সাথে কথা বললে তিনি কিছু বলতে পারেন না৷ পুলিশও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে না৷ আসলে এই মামলার ব্যাপারে আমরা কোনো খবর এখন আর রাখি না৷’’

৪ আগস্ট মুন্সিগঞ্জ সদরে নিহত হন সজল মিয়া৷ তার ভাই সেলিম রায়হান বলেন, ‘‘আমি বাদী হয়ে ৩০১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছি৷ প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ আমি ছবি দেখে দেখে সব আসামিকে চিহ্নিত করেছি৷ মোট ১০৪ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও এরইমধ্যে ৯৪ জন জামিনে বের হয়ে এসেছে৷ তারপরও আমি তদন্তে সন্তুষ্ট৷ পুলিশ চার্জশিট দেবে কবে জানি না৷’’

এই মামলাগুলো নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিমাসেই মনিটরিং সেলের মিটিং হচ্ছে৷ মামলাগুলোর তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন সেখানে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়৷ পুলিশ সদর দপ্তর ছাড়াও রেঞ্জ ডিআইজি অফিসের একজন অতিরিক্ত ডিআইজি মামলাগুলো মনিটরিং করেন বলে জানান ঢাকা রেঞ্জর ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক৷

শেরপুর জেলার পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম জানান, ‘‘আমরা কঠোর মনিটরিং-এর মাধ্যমে চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠছি৷ লাশ দাফনের সময় যারা ছিলেন তাদের সাক্ষ্য নিয়ে ময়না তদন্তের জটিলতা কাটাতে পারছি৷ ঘটনাস্থল ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মাধ্যমে নিশ্চিত হচ্ছি৷ এছাড়া ভিডিও ফুটেজ আমাদের বেশ সহায়তা করছে৷ আমরা ভিডিও ফুটেজগুলো সংগ্রহ করে আসামি চিহ্নিত, ঘটনাস্থল চিহ্নিত এবং কীভাবে নিহত হয়েছে তা নিশ্চিত হতে পারছি৷ আর আমার জেলায়  একজন সলিসিটার নিয়োগ করা হয়েছে মামলাগুলোর জন্য৷ তিনি তদন্তের আইনগত দিক দেখছেন৷ আমরা কীভাবে এগোবো তার পরামর্শ দিচ্ছেন৷ এছাড়া পুলিশ সদর দপ্তর মনিটরিং করছে৷ আইজিপি সাহেব সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলছেন৷’’

ভুয়া আসামি বা জড়িত নয় এমন আসামিদের মামলা থেকে বাদ দিতে এরইমধ্যে সিআরপিসির ১৭৩ ধারা সংশোধন করা হয়েছে৷ এর ফলে মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পাওয়া সহজ হবে৷ আর তা হলো তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি তদন্ত পর্যায়ে কাউকে নিরপরাধ মনে করেন তাহলে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাকে তা লিখিতভাবে জানাবেন৷ তিনি সেটা আদালতে পাঠালে আদালত তাকে মামলা থেকে রেহাই দিতে পারবেন৷ আবার পরে দায়ী মনে করলে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন৷

পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘‘এতে সুবিধা হলো যারা অপরাধী নন তাদের আগেই রহাই দেয়া যাবে৷ আসামির সংখ্যা কমে আসবে, তদন্ত সহজ হবে৷’’

তবে সিআরপিসির এই সংশোধন দরকার ছিলো না বলে মনে করেন সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান৷ তিনি মনে করেন, চার্জশিটেই নিরাপরাধ ব্যক্তিদের বাদ দেয়ার সুযোগ ছিলো৷ এখন যেটা হবে তদন্ত শেষে, আগে রেহাই পাওয়াদের আবার আসামি করা হতে পারে৷ তিনি বলেন, ‘‘পুলিশে অনেক গ্যাপ তৈরি হয়েছে৷ দক্ষ তদন্ত কর্মকর্তার অভাব দেখা দিয়েছে, এটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ৷ আর ময়না তদন্ত সংক্রান্ত জটিলতা দক্ষ তদন্ত কর্মকর্তারা সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহের মাধ্যমে এড়াতে পারেন৷’’

এদিকে মামলাগুলোর বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে করা হবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ কিন্তু মামলার চার্জশিট না হলে বিচার শুরু সম্ভব হচ্ছে না৷
খান সাঈদ হাসান বলেন, ‘‘মামলার তদন্ত শেষ করতে কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়াতে হবে৷ প্রয়োজনে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া যেতে পারে৷ আর অবকাঠামোগত সুবিধাও বাড়াতে হবে৷ তা না হলে কতদিনে তদন্ত শেষ হবে সেটাই প্রশ্ন৷’’

তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার(মিডিয়া) মো. তালেবুর রহমান বলেন, ‘‘ওই মামলাগুলো সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে৷ প্রতিটি পর্যায়ে মটিরিং করা হচ্ছে৷’’

পুলিশ সদর দপ্তরের এআআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, ‘‘আন্তরিকতায় কোনো ঘাটতি নেই৷ মামলার দ্রুত তদন্ত শেষ এবং নিরাপরাধ যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকেও জোর দেয়া হচ্ছে৷ পুলিশ ছাড়াও সিআইডি, ডিবি, পিআইবি মামলাগুলোর তদন্ত করছে৷’’

তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় আগেই নির্দেশ দিয়েছে গত ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত ‘জুলাই গণ-অভুত্থান’সংশ্লিষ্ট ঘটনার জন্য কোনো মামলা, গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না৷ এই গণ-অভ্যুত্থানকে সাফল্যমন্ডিত করতে ছাত্র-জনতা সক্রিয়ভাবে আন্দোলনের মাঠে থেকে কাজ করেছেন৷ ফলে পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব মতে ৪৪ জন পুলিশ কর্মকর্তা হত্যার তদন্তের কী হবে তা এখনো স্থগিত আছে৷

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়