দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূলবর্তী অঞ্চলে খাদ্যের তীব্র সংকটে ৬০ হাজারেরও বেশি পেঙ্গুইনের মৃত্যু হয়েছে বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফ্রিকান পেঙ্গুইনের প্রধান খাবার সার্ডিন মাছ আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়ায় এ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
গবেষণা অনুযায়ী, ২০০৪ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে আফ্রিকান পেঙ্গুইনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজননস্থল—ডাসেন দ্বীপ ও রবিন আইল্যান্ডে পেঙ্গুইনের সংখ্যা ৯৫ শতাংশেরও বেশি কমে যায়। বিশেষ করে পালক পরিবর্তনের (মোল্টিং) সময়ে পর্যাপ্ত খাদ্য না পাওয়ায় এই মৃত্যুহার বেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং অতিমাত্রায় মাছ আহরণকে এ গণহ্রাসের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা।
ওস্ট্রিচ: জার্নাল অব আফ্রিকান ওরনিথোলজি-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বলা হয়, এ বিপর্যয় বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। ইউনিভার্সিটি অব এক্সেটারের সেন্টার ফর ইকোলজি অ্যান্ড কনজারভেশনের শিক্ষক ড. রিচার্ড শার্লি জানান, ‘অন্যান্য স্থানেও একইভাবে পেঙ্গুইন কমে যাচ্ছে।’
গত ৩০ বছরে আফ্রিকান পেঙ্গুইন প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গেছে।
আফ্রিকান পেঙ্গুইনরা প্রতিবছর পুরনো পালক ফেলে নতুন পালক গজায়, যাতে তাদের শরীরের তাপরোধ ও জলরোধী ক্ষমতা বজায় থাকে। তবে প্রায় ২১ দিনের এই মোল্টিং পর্বে তাদের স্থলে অবস্থান করতে হয় এবং এ প্রক্রিয়ার জন্য আগে থেকেই শরীরে পর্যাপ্ত চর্বির মজুদ থাকা জরুরি।
ড. শার্লি বলেন, ‘মোল্টিংয়ের আগে বা পরে যদি পর্যাপ্ত খাদ্য না পায়, তাহলে তারা উপবাসের সময়টায় টিকতে পারে না। আমরা হয়ত অনেক পেঙ্গুইনের মৃতদেহ ভেসে থাকতে দেখি না, কারণ তারা সমুদ্রেই মারা যায়।’
গবেষণায় আরও বলা হয়, ২০০৪ সালের পর থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে সার্ডিন মাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। এই সার্ডিনই আফ্রিকান পেঙ্গুইনের প্রধান খাদ্য। উপকূলীয় পানির তাপমাত্রা ও লবণাক্ততার পরিবর্তনে মাছের ডিম ছাড়া কমে গেছে, কিন্তু মাছ শিকার বেড়েছে।
২০২৪ সালে আফ্রিকান পেঙ্গুইনকে ‘অতিসংকটাপন্ন’ প্রজাতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়, এবং বর্তমানে প্রজননক্ষম জোড়ার সংখ্যা ১০ হাজারেরও কম।
সূত্র: ইত্তেফাক