শিরোনাম
◈ চাঁদাবাজির খবর দেখে আশপাশের সবাই এত অবাক হওয়ার ভান করছেন বিষয়টা কিছুটা হাস্যকর বটে: উমামা ফাতেমা ◈ বাংলা‌দেশ এবার সি‌রিজ খেল‌তে চায় নেপাল অথবা নেদারল্যান্ডসের সাথে ◈ নতুন মেরুকরণের পথে দেশের রাজনীতি ◈ শ্বাসরুদ্ধকর ম‌্যা‌চে দ‌ক্ষিণ  আফ্রিকাকে হা‌রি‌য়ে চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ড ◈ ৯ সে‌প্টেম্বর এশিয়া কাপ শুরু, বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ১১ সেপ্টেম্বর ◈ চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমার পূর্বাভাস এডিবির: রফতানি-উৎপাদনে ধীরগতির প্রভাব ◈ দেশে ভালো কোনো প্রতিষ্ঠান নেই, ব্যাংক খাতের ৮০% অর্থ নিয়ে গেছে: অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ◈ চাঁদাবাজির অভিযোগে আটক পাঁচ নেতাকে স্থায়ী বহিষ্কার ◈ ওজন কমাতে র‍্যাব কর্মকর্তাকে যে উপদেশ দিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (ভিডিও) ◈ চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে বড় ইভেন্টে ঝুঁকি, ভারতের সেই মাঠ থেকে সরে যেতে পারে বিশ্বকাপ

প্রকাশিত : ২৬ জুলাই, ২০২৫, ০১:৪০ রাত
আপডেট : ২৭ জুলাই, ২০২৫, ১০:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পাকিস্তানে কেন বাঘ আর সিংহ পোষার হিড়িক?

পাকিস্তানের অন্যতম বড় শহর লাহোরের উপকণ্ঠে একটি ফার্মহাউসের চারপাশে弥漫 হওয়া অদ্ভুত গন্ধই বলে দেয়, এখানে সাধারণ কিছু নেই। ভেতরে প্রবেশ করলেই সেই রহস্যের জট খোলে। ২৬টি সিংহ, বাঘ এবং তাদের শাবকদের বিশাল এক সংসারের সঙ্গে বাস করেন তাদের মালিক মি. ফায়াজ।

বৃষ্টিভেজা কাদামাটির ওপর দাঁড়িয়ে তিনি জানান, "পশুরা এখানে বেশ আরামেই আছে। আমাকে দেখলেই কাছে চলে আসে, খাবার খায়। ওরা আক্রমণাত্মক নয়।" কিন্তু তার কথা শেষ হতে না হতেই খাঁচায় বন্দী একটি সিংহ গর্জন করে ওঠে। মি. ফায়াজ তখন বলেন, "ও একটু আক্রমণাত্মক, ওর প্রকৃতিটাই এমন।"

ক্ষমতা প্রদর্শনের প্রতীক থেকে সামাজিক উদ্বেগ

সাধারণত মানুষ কুকুর বা বিড়াল পুষলেও পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে সিংহ, বাঘ বা চিতার মতো 'বিগ ক্যাটস' পোষা একটি পুরনো চল। এটি কেবল শখ নয়, বরং ক্ষমতা, সামাজিক প্রতিপত্তি এবং এমনকি রাজনৈতিক আনুগত্যেরও প্রতীক। ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের নির্বাচনী প্রতীকও বাঘ।

সাম্প্রতিক সময়ে টিকটক ও ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক মাধ্যমের দৌলতে এই প্রবণতা আরও বেড়েছে। এখন বিয়ের অনুষ্ঠানেও বাঘ-সিংহ ভাড়া করে নিয়ে আসার ঘটনা ঘটছে।

তবে এই শখের বিপজ্জনক দিকটি সামনে আসে সপ্তাহ দুয়েক আগে, যখন লাহোরে এক ব্যক্তির পোষা সিংহ পাঁচিল টপকে রাস্তায় বেরিয়ে এক নারী ও তার দুই সন্তানের ওপর হামলা করে। এই ঘটনার পর জনমনে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয় এবং সরকার অবৈধভাবে বাঘ-সিংহ পালনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান শুরু করে।

সরকারি পদক্ষেপ ও নতুন আইন

৩৮ বছর বয়সী মি. ফায়াজ গত ১০ বছর ধরে সিংহ-শাবক ও প্রজননक्षम সিংহ-সিংহীর জোড়া বিক্রি করছেন এবং তাকে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় সিংহ বিক্রেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নতুন আইনের প্রভাব এখন তার মতো আরও অনেকের ওপর পড়ছে।

পাকিস্তানের নতুন নিয়ম অনুযায়ী:

  • প্রতিটি বন্যপ্রাণীর নিবন্ধনের জন্য মালিককে এককালীন ৫০ হাজার পাকিস্তানি রুপি দিতে হবে।

  • একটি ফার্মে সর্বোচ্চ দুটি প্রজাতির মাত্র ১০টি পশু রাখা যাবে।

  • আইন ভঙ্গ করলে দুই লাখ রুপি পর্যন্ত জরিমানা এবং গুরুতর ক্ষেত্রে সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

এই আইনের আওতায় বনবিভাগের কর্মকর্তারা সম্প্রতি লাহোরের একটি ফার্মহাউসে অভিযান চালান। সেখানে একটি নোংরা খাঁচায় পাঁচটি সিংহ-শাবক বন্দী অবস্থায় পাওয়া যায়, কিন্তু তাদের মা-বাবা উধাও। ফার্মহাউসের মালিকও পলাতক। কর্মকর্তারা সন্দেহ করছেন, অভিযানের খবর পেয়ে শাবকগুলোর মা-বাবাকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া শাবকগুলোকে বর্তমানে লাহোরের একটি সরকারি চিড়িয়াখানায় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

সমস্যার গভীরতা ও চ্যালেঞ্জ

বনবিভাগের কর্মকর্তারা মনে করেন, এই অভিযানগুলো অবৈধ পশু-বাণিজ্যের বিশালতার তুলনায় "সমুদ্রের বুকে এক বিন্দু জল" মাত্র। বন্যপ্রাণ ও উদ্যান বিভাগের মহাপরিচালক মুবিন ইলাহি বিবিসিকে বলেন, "শুধুমাত্র পাঞ্জাব প্রদেশেই কয়েকশ unregistered বন্যপ্রাণী রয়েছে। সব জায়গায় তদন্ত শেষ করতে অন্তত ছয় মাস সময় লাগবে।"

তিনি আরও একটি গুরুতর সমস্যার কথা উল্লেখ করেন। "পাকিস্তানে এখন ইন-ব্রিডিং (কাছাকাছি দুটি ভিন্ন প্রজাতির মধ্যে প্রজনন) একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে জন্ম নেওয়া পশুদের নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। অনেক ক্ষেত্রে এদের মেরে ফেলা ছাড়া উপায় থাকে না।"

ভবিষ্যৎ ও প্রাণী অধিকার কর্মীদের দাবি

এদিকে, মি. ফায়াজের ফার্মহাউসের খাঁচাগুলোর আয়তন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কর্মকর্তারা বলছেন, এটি মানসম্মত নয় এবং ফার্মটিকে চিড়িয়াখানায় রূপান্তর করা উচিত। মি. ফায়াজ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তিন মাস সময় চেয়েছেন।

তবে প্রাণী অধিকার সংগঠনগুলো আরও দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের দাবি জানাচ্ছে। এমনই এক কর্মী আলতামাস সৈয়দ বলেন, "আমরা দীর্ঘদিন ধরে চিড়িয়াখানার পরিবর্তে অভয়ারণ্য তৈরির দাবি জানিয়ে আসছি।" তারা চান ব্যক্তিগত মালিকানার বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট নীতি তৈরি হোক এবং প্রাণীগুলোর জন্য একটি সুসংগঠিত ও স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করা হোক, কোনো তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নয়।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়