ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে ব্যস্ত রেখে গত শুক্রবার ভোররাতে দেশটির সামরিক ও পারমাণবিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায় ইসরায়েল। এই ঘটনায় গ্লোবাল সাউথের বড় দেশগুলো ইসরায়েলের নিন্দা জানিয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ভারত। সরাসরি ইসরায়েলের নিন্দা জানাতে রাজি নয় নয়াদিল্লি।
ফিলিস্তিন প্রশ্নেও ভারতকে একই রকম অবস্থান নিতে দেখা যায়। অথচ দেশটি একসময় স্বধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার ছিল। ৭ আগস্টের হামলার পর ইসরায়েলের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
সর্বশেষ গত শুক্রবার ইসরালি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন মোদি। অন্যদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এই দুই ফোনালাপে ইরানের পক্ষে থাকার কোনো ইঙ্গিত দেননি নয়াদিল্লির নেতারা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হতে পারে ভারত এমন কিছু করতে বা বলতে চায় না যাতে ইসরায়েল মনোক্ষুণ্ন হয়।
এ ব্যাপারে ভারত তার অবস্থান তুলে ধরে 'ভারসাম্যমূলক' একটি বিবৃতি দিয়েছেন। দেশটি বলেছে, 'পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে উভয় পক্ষকে অনুরোধ করছে ভারত। বিদ্যমান কূটনৈতিক চ্যানেলগুলো ব্যবহার করে চলমান উত্তেজনার প্রশমন এবং মূল সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করা উচিত। ভারত উভয় দেশের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে এবং সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত।'
শনিবার ইসরায়েলের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সাংহাই কোঅপারেশন অরগানাইজেশন। চীন, ভারত, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, পাকিস্তান, রাশিয়া, তাজিকিস্তান, ইরান, বেলারুশ ও উজবেকিস্তান এর সদস্য। বিবৃতিতে বলা হয়, 'জ্বালানি ও পরিবহন অবকাঠামোসহ বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলের আগ্রাসন, যার ফলে বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, তা আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ সনদের ঘোরতর লঙ্ঘন।'
তবে ভারত জানিয়ে দেয় এই বিবৃতির সঙ্গে তারা একমত নয়। এ ব্যাপারে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, 'বিবৃতি সংক্রান্ত আলোচনায় ভারত অংশ নেয়নি। বিষয়টি নিয়ে আমরা আমাদের নিজস্ব অবস্থান স্পষ্ট করেছি এবং তা অপরিবর্তিত রয়েছে। আমরা উত্তেজনা প্রশমনের জন্য আলোচনা ও কূটনীতির পথ ব্যবহারের আহ্বান জানাই এবং সে লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগ নেওয়া অপরিহার্য।'
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ভারতের 'সামগ্রিক অবস্থান' জোটের অন্য সদস্য দেশগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এর আগের দিনই গাজায় নিঃশর্ত যুদ্ধবিরিতি নিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এক প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে ভারত। স্পেনের উপস্থাপন করা এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ১৪৯টি দেশ।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থনের বিনিময়ে কী পেয়েছে বা কী পেতে যাচ্ছে ভারত? ইসরায়েল কী দিয়েছে বা দিতে যাচ্ছে ভারতকে?
শুক্রবার সন্ধ্যায় টুইটার হ্যান্ডেল থেকে একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)। এই ম্যাপে পুরো কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অংশ হিসেবে দেখানো হয়। এ নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে আপত্তি জানায় ভারত। পরে অবশ্য ভারতীয় গণমাধ্যম জানায় যে বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছে আইডিএফ।
কাশ্মীরের ভারত-নিয়ন্ত্রিত অংশের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুক হামলার পর পাকিস্তানে বেসামরিক বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। কিন্তু পর্যটকদের হত্যার ঘটনায় সারা পৃথিবী থেকে ভারত সহানুভূতি পেলেও পাকিস্তানে হামলায় সেভাবে সমর্থন পায়নি। আফগানিস্তানের তালেবান শাসকদের কথা বাদ দিলে একমাত্র ইসরায়েলই তখন ভারতকে সমর্থন দেয়। পাকিস্তানে হামলায় ফ্রান্সের তৈরি রাফাল ও রাশিয়ার যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি ইসরায়েলের তৈরি হারপ ড্রোন ব্যবহার করে ভারত। অন্যদিকে চীন, তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশ সরাসরি পাকিস্তানকে সমর্থন জানায়।
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে সম্প্রতি আরেকটি কাজ করেছে ভারত। হামাস ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর দেশটিতে কর্মরত বিদেশি শ্রমিকদের বড় একটি অংশ তাদের নিজ দেশে ফিরে যায়। এতে কর্মী সংকটে পড়ে তেল আবিব। ওই পরিস্থিতিতে অন্য কোনো দেশ ইসরায়েলে কর্মী পাঠাতেও আগ্রহী ছিল না। টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, শুধুমাত্র ২০২৩ সালেই ১৬ হাজার ভারতীয় শ্রমিক যায় ইসরায়েলে। পরের বছরগুলোতে ক্রমান্বয়ে ভারতীয় কর্মী বাড়ানোর কথাও জানানো হয় প্রতিবেদনে।
এর বিপরিত চিত্র দেখা যাচ্ছে ইরানের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্কে। ২০১৪ সালের পর ভারতের সাথে ইরানের বাণিজ্যের চিত্র অনেকটাই বদলে গেছে। ঘটনাক্রমে ওই বছরই ভারতে ক্ষমতায় আসেন নরেন্দ্র মোদি।
ভারতের গণমাধ্যম মানিকনট্রোল জানায়, ২০১৫ সালে ভারত ছিল ইরানের দ্বিতীয় প্রধান বাণিজ্য অংশীদার। সে বছর দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু ২০২৩ সাল আসতে আসতে ষষ্ঠ অবস্থানে নেমে যায় ভারত। ওই বছর বাণিজ্যের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় মাত্র ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে।
স্বাধীন ফিলিস্তিনের সমর্থক ভারত যেভাবে ইসরায়েলের 'বন্ধু' হলো
নরেন্দ্র মোদি সরকার যেভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন জানাচ্ছেন তাতে বোঝা যায়—এক সময় ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামে সমর্থক ভারত আর বিজেপির ভারত সম্পূর্ণ আলাদা।
ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার দুই দশক আগে ১৯৩৮ সালে ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী ফিলিস্তিন সম্পর্কে বলেছিলেন, 'ফিলিস্তিন ঠিক সেভাবেই আরবদের, যেভাবে ইংল্যান্ড ইংরেজদের এবং ফ্রান্স ফরাসিদের।'
ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ভারত ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরোধিতা করেছে এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। তবে ভারতের ভেতরে সক্রিয় হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো সব সময়ই ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
সময়ের পরিক্রমায় ভারতের মোদি সরকার এখন ইসরায়েলের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে বিবেচিত। ২০১৭ সালে ইসরায়েল সফরে যাওয়ার পর থেকে নেতানিয়াহুর সঙ্গে মোদির সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করে। বিমানবন্দরে আলিঙ্গন করে মোদিকে 'বন্ধু' বলেও সম্বোধন করেছেন নেতানিয়াহু।
শুরুর দিকের কথা: ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ইউরোপে নিপীড়নের শিকার ইহুদিদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। তবে ফিলিস্তিন সমস্যাকে তিনি জাতীয়তাবাদী সমস্যা হিসেবেই প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। ফিলিস্তিন তখন ব্রিটিশ শাসনাধীন ছিল। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী জনগণ ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের পথ বেছে নিলেও ইহুদিরা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য ব্রিটেনের পক্ষ নেয়।
ভারত স্বাধীন হওয়ার আগে ও পরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রশ্নে ভারতের সমর্থন ছিল দ্ব্যর্থহীন। ফিলিস্তিন নিয়ে জাতিসংঘের বিশেষ কমিটির নির্বাচিত সদস্য ছিল ভারত। ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ডে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে যে ১৩ দেশ বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল তার একটি ভারত।
জাতিসংঘে ভারতের তৎকালীন প্রতিনিধি স্যার আব্দুর রহমান বলেছিলেন, ফিলিস্তিনের জনগণ আজ এমন এক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যখন তাদের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে আর বিলম্ব করা যায় না। ফিলিস্তিনিরা এশিয়ার অন্যান্য স্বাধীন দেশের তুলনায় কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই।
তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ব্যর্থ হলে ওই অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত তৈরি হবে।
বিশ্বের শক্তিধর বিভিন্ন দেশ ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর ১৯৫০ সালে ভারত এক প্রকার বাধ্য হয়েই দেশটিকে স্বীকৃতি দেয়। এর পর যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে চলা স্নায়ুযুদ্ধের পুরো সময়টা ভারত মস্কোর পক্ষে ছিল। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকায় আরব মিত্রদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার নীতি ছিল নয়াদিল্লির।
মিসর ১৯৫৬ সালে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের হাত থেকে সুয়েজ খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর সংঘাতে জড়ায় ইসরায়েল। সে সময় ভারত সরকার মিসরের গামাল আবদেল নাসেরকে সমর্থন দেয়। ১৯৭৪ সালে, ফিলিস্তিনি জনগণের একমাত্র ও বৈধ প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনকে (পিএলও) স্বীকৃতি দেয় ভারত। আরব বিশ্বের বাইরে পিএলওকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম দেশ ছিল ভারত। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বীকৃতি হিসেবে ভারত সরকার ১৯৭৫ সালে পিএলওকে নয়াদিল্লিতে কার্যালয় খোলার অনুমতি দেয়। ১৯৮৮ সালে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয় ভারত এবং ১৯৯৬ সালে ফিলিস্তিনে কূটনৈতিক কার্যক্রম শুরু করে।
ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন: ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাসের বাঁক বদল ঘটে। ভারতও অর্থনৈতিক উদারীকরণের পথ নিয়ে বিশ্বজুড়ে নতুন মিত্রদের খোঁজ শুরু করে। ১৯৯২ সালে প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিংহ রাওয়ের নেতৃত্বে ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে ভারত। তবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রশ্নে ভারত তখনও বিচ্যুত হয়নি। অর্থনৈতিক স্বার্থে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গেও ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করে চলে নয়াদিল্লি।
২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতের সঙ্গে ইসরায়েলের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার। ভারতের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ ২৫ এ-ও ইসরায়েলের অবস্থান নেই। সেই তুলনায় রাজনৈতিক ও কৌশলগত দিক থেকে ইসরায়েলকে এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে ভারত।
তবে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সবসময়ই ভারত ও ইসরায়েলের সম্পর্কের মূল ভিত্তি ছিল এবং এখনও তাতে কোনো পরিবর্তন হয়নি।
গণমাধ্যমসূত্রে জানা যায়, ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার তিন দশক আগে ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের সময় ইসরায়েল ভারতকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেছিল। ১৯৬৮ সালে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) প্রতিষ্ঠার পর প্রথম গোয়েন্দা প্রধান আরএন কাওকে ইসরায়েলের মোসাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী।
রাজনৈতিকভাবে কোনো শর্ত ছাড়াই বিভিন্ন সময় ভারতকে সামরিক সহায়তা দিয়েছে ইসরায়েল। ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধের সময় এরকম একটি পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যায় ভারত। এক বছর আগেই পোখরানে পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা করায় ভারতের ওপর সামরিক ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেয় ক্লিনটন প্রশাসন। তখনও ভারতের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে নিরবতা বজায় রাখে ইসরায়েল। কার্গিল যুদ্ধের সময় অস্ত্র ও নজরদারির প্রযুক্তি দিয়ে ভারতকে সহায়তা করে ইসরায়েল।
ভারত এখন ইসরায়েলি অস্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। ভারতে অস্ত্র সরবরাহকারী দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে দেশটি। ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ইসরায়েল থেকে অস্ত্র আমদানি ১৭৫ শতাংশ বাড়িয়েছে ভারত। বর্তমানে ভারতে প্রতি বছর প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রপ্তানি করে ইসরায়েল। ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা (ডিআরডিও) এবং ইসরায়েলি অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (আইএআই) এখন ভারতের জন্য 'সারফেস টু এয়ার মিসাইল সিস্টেম' তৈরিতে কাজ করছে।
ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীতে ইসরায়েলি ড্রোন, রাডার সিস্টেম, নজরদারি প্রযুক্তি, বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র যুক্ত হয়েছে। ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে দায়িত্ব দেওয়া বহু পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ইসরায়েলের ন্যাশনাল পুলিশ একাডেমিতে।
ভারত এতদিন প্রকাশ্যে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সমর্থন এবং অন্তরালে ইসরায়েলের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার নীতিতে চললেও ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলার পর সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলি কৌশল গ্রহণ করার ঘোষণা দেয় নয়াদিল্লি।
যদিও, মুম্বাই হামলার অনেক আগে থেকেই ইসরায়েলকে সমর্থনে বিজেপির মধ্যে কোনো কুণ্ঠা ছিল না। অটল বিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ২০০০ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এল কে আদভানি ভারতের প্রথম কোনো মন্ত্রী হিসেবে তেলআবিব সফর করেন। এক বছর পর যশবন্ত সিং ভারতের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে পশ্চিম এশিয়ার দেশটি সফরে যান। ২০০৩ সালে প্রথম ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল শ্যারন ভারত সফর করেন।
মোদির সঙ্গে নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠতার কথা কারও অজানা নয়। ভারত ও ইসরায়েলের দ্বিপাক্ষিক স্বার্থের বাইরেও নেতানিয়াহু-মোদির সম্পর্ককে দুজন ডানপন্থী নেতার ঘনিষ্ঠতা হিসেবে দেখার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। দুজনই নিজেদের দেশকে শত্রু পরিবেষ্ঠিত এবং ইসলামী সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিজেদের অপরিহার্য হিসেবে দেখাতে আগ্রহী।
যেকোনো পরিস্থিতিতে ইসরায়েলকে সমর্থন করে যাওয়ার ব্যাপারে বিজেপির নীতি প্রথম সামনে আসে ২০১৫ সালে। সে বছর ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে মাত্র পাঁচ দেশ ভোটদানে বিরত ছিল। ভারত ছিল এর অন্যতম। ২০১৭ সালে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদি ইসরায়েল সফর করেন। সফরে তিনি ফিলিস্তিনি কোনো প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। তখনই বিজেপি সরকার পরিষ্কার ইঙ্গিত দেয় যে তারা ইসরায়েলের পক্ষে। আর এ জন্যই কি হাজারের বছরের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক থাকার পারও ভারতকে পাশে পাচ্ছে না ইরান? উৎস: ডেইলি স্টার।