ফোনে কাউকে অশ্লীল, অশোভন বার্তা পাঠালে হতে পারে দুই বছরের কারাদণ্ড ও দেড় কোটি টাকা জরিমানা। আর কাউকে টেলিফোনে বিরক্ত করার সাজা হতে পারে ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং তা অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড। ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়ায় এসব কথা বলা হয়েছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ গতকাল এই খসড়া প্রকাশ করেছে। সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও সাধারণ নাগরিকদের মতামত নেওয়ার জন্য খসড়াটি বিভাগের ওয়েবসাইটে রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়ার ধারা ৭০-এ টেলিফোনে বিরক্ত করা সম্পর্কে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে যদি এমনভাবে বারবার ফোন করেন যে তা ওই ব্যক্তির জন্য বিরক্তিকর হয় বা অসুবিধার সৃষ্টি করে, তাহলে বিষয়টি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
অধ্যাদেশে অশ্লীল, অশোভন বার্তা পাঠালে হতে পারে দুই বছরের জেল, দেড় কোটি টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ধারা ৬৯-এ বলা হয়েছে অশ্লীল, অশোভন ইত্যাদি বার্তা পাঠানোর অপরাধ ও এর সাজা বিষয়ে। এতে বলা হয়েছে, টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি বা বেতার যন্ত্রপাতির সাহায্যে কোনো অশ্লীল, ভীতি প্রদর্শনমূলক বা গুরুতরভাবে অপমানকর কোনো বার্তা, ছবি বা ছায়াছবি পাঠালে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট যন্ত্র পরিচালনাকারী ব্যক্তির কাছে এ কাজের প্রস্তাবকারী বা প্রেরণকারী কিংবা ক্ষেত্রমতো, উভয়েই অনধিক দুই বছর কারাদণ্ড বা অনধিক দেড় কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। আইনের দফা (গ)-এর ক্ষেত্রে প্রেরণকারী অনধিক পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে এবং অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সাইবার সুরক্ষা আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা প্রযোজ্য হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
বেআইনিভাবে আড়ি পাতলে দুই বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক দেড় কোটি টাকা জরিমানা কিংবা উভয় সাজার বিধান রাখা হয়েছে।
অধ্যাদেশের খসড়া অনুযায়ী, ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা—যেমন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অনলাইন মেসেজিং ও ভিডিও স্ট্রিমিং অ্যাপ—সবই সরকারের অনুমোদনের আওতায় আসবে। এসব সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকে এখন থেকে বাংলাদেশে নিবন্ধন নিতে হবে এবং প্রয়োজনে নিরাপত্তা সংস্থাকে তথ্য সরবরাহ করতে হবে।
খসড়া অধ্যাদেশ অনুযায়ী, এই খাতে একটি স্বাধীন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কমিশন গঠন করা হবে, যা লাইসেন্স প্রদান, নীতিনির্ধারণ, স্পেকট্রাম বণ্টন ও প্রযুক্তিগত মান নিয়ন্ত্রণ করবে। কমিশন হবে পাঁচ সদস্যের, যার একজন চেয়ারম্যান ও একজন ভাইস চেয়ারম্যান থাকবেন।
খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, অনুমতিহীনভাবে টেলিযোগাযোগ সেবা পরিচালনা বা বিদেশি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম পরিচালনা করা হলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ছাড়া, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলার স্বার্থে সরকার প্রয়োজনে যেকোনো প্ল্যাটফর্ম স্থগিত বা বন্ধ করতে পারবে।
অধ্যাদেশের খসড়ার বিষয়ে মতামত পাঠানো যাবে secretary@ptd.gov.bd ই-মেইল ঠিকানায় অথবা ডাকযোগে সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা ঠিকানায়। ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত মতামত দেওয়া যাবে।