নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের জাতীয় খেলা কাবাডির প্রতি এক সময় অবহেলার দৃষ্টি ছিলো খোদ ক্রীড়া পরিষদের। তাদের দেয়া আর্থিক সহযোগিতায় চলতো না কাবাডি ফেডারেশনের বাৎসরিক কার্যক্রম। অর্থের টানাপোড়েনে শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থার মধ্য দিয়ে চলতে হয়েছে এই ফেডারেশনকে।
ফেডারেশনের সৃষ্টি থেকেই এই টানাপোড়েন, যা এখনো অনেকটা চলমান। খেলাধুলা চালানোর জন্য ক্রীড়া পরিষদ থেকে মোটা দাগের আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হয় না। তবে কাবাডি ফেডারেশনকে একটি অত্যাধুনিক ৫ তলা কমপ্লেক্স গড়ে দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।
এই ফেডারেশনে অনেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক আসেন আর যান, কিন্তু খেলার উন্নয়নে সাক্ষী হতে পারেননি কেউই। অত্যাধুনিক ভবনে গত বছর ফেডারেশনের কার্যালয় স্থানান্তর হওয়ার পর থেকে খেলায়ও যেনো চাকচিক্য বেড়ে যায় । বিশেষ করে ফ্যাসিবাদ সরকার বিদায় নেয়ার পর আমূল পরিবর্তন ঘটতে থাকে দেশের জাতীয় খেলা কাবাডির ।
অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা সার্চ কমিটি ও ক্রীড়া পরিষদ এমন একজনকে কাবাডি ফেডারেশনের এডহক কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছে, তিনি প্রকৃত পক্ষে কাবাডির সংগে যুক্ত ছিলেন না। ক্রিকেটের সংগে যুক্ত ছিলেন। সেখান থেকেই মূলত তার পদচাড়না ক্রীড়াঙ্গনে।
অবাক হওয়ার বিষয়, কাবাডি ফেডারেশনে যারা অতীতে দায়িত্ব পালন করে গেছেন, তারা শুধু খেলার উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। ফেডারেশনের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এস এম নেওয়াজ সোহাগ যেনো আলাদিনের চেরাগ নিয়ে চলছেন। রাজনৈতিক পরিচয়হীন সোহাগ ২০২৪ সালের ১৪ নভেম্বর ফেডারেশনে দায়িত্ব প্রাপ্ত হওয়ার পর কাবাডি খেলাকে জয় করে নিয়েছেন। ক্রীড়া পরিষদের যতসামান্য বাৎসরিক অনুদান আর নিজ উদ্যোগে পৃষ্ঠপোষক থেকে আনা অর্থ দিয়ে গত ৯ মাসে কাবাডিকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়।
সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়ার আগে এস এম নেওয়াজ সোহাগ ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সালের দেশের পট পরিবর্তনের পূর্ব পর্যন্ত নির্বাচিত যুগ্ন সম্পাদক ছিলেন। এ টুকুই ছিলো তার কাবাডিতে সংগঠক হিসেবে পূর্ব অভিজ্ঞতা। তার আরো একটি পরিচয় হলো তিনি বিজ্ঞাপনী সংস্থা এ্যাড টাচ্ কোম্পানির কর্ণধার। ২০১৭ সালে অফিসিয়াল পার্টনার হিসাবে এ্যাড টাচ্ স্পোর্টস এন্ড লাইভ ইভেন্টের মাধ্যমে কাবাডিতে যুক্ত হন।
দায়িত্ব নেয়ার পর গত ৯ মাসে খেলা বিরামহীন মাঠে রেখেছেন। পাশাপাশি ফেডারেশনের ক্যাশবাক্স ভারী করার প্রত্যয় নিয়ে চলেছেন সোহাগ। অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি, বর্তমানে ফেডারেশনের নামে ৫ কোটি টাকার এফ ডি আর রয়েছে। গত ১০ মাসে তিনি ইরানে অনুষ্ঠিত চলতি বছরের মার্চে এশিয়ান নারী চ্যাম্পিয়ন শিপে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ প্রথমবার ব্রোঞ্জ পদক লাভ করে। ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত নেপালের বিরুদ্ধে কাবাডি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ ৪-১ এ বিজয়ী হয়। এপ্রিলে নেপালে অনুষ্ঠিত মেয়েদের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর ২-৩ এ হেরে যায়।
জাতীয় প্রতিযোগীতার মধ্যে সারা দেশে তারুণ্য উৎসব উপলক্ষে যুব কাবাডি অনূর্ধ্ব ১৮ (বর্তমানে চলছে) ও জাতীয় প্রতিযোগিতা, বিজয় দিবস, স্বাধীনতার দিবস টুর্নামেন্ট, জুনিয়র সার্ভিসেস লিগ ও রেফারিদের ব্যাসিক ট্রেনিং কোর্স সম্পন্ন হয়েছে।
সাধারণ সম্পাদকের লক্ষ্য, অক্টোবরে বাহরাইনে অনুষ্ঠিতব্য ইয়থ এশিয়ান গেমস কাবাডি (পুরুষ-মহিলা) প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া। আর জানুয়ারিতে (২০২৬) পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য এসএ গেমসে নারী ও পুরুষ দল অংশ নিবে। সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিকেএসপিতে জাতীয় দলের (নারী + পুরুষ) প্রশিক্ষণ ক্যাম্প শুরু হয়েছে।
সাধারণ সম্পাদক বলেন, বড় টুর্নামেন্ট আয়োজনে আমাদের সাধ আছে, কিন্তু সাধ্য নেই। তার পরেও দেশের জাতীয় খেলা বহির্বিশ্বে তুলে ধরতে চাই। সেই লক্ষ্যে আমরা ১৪টি দেশের অংশগ্রহণে নারী বিশ্বকাপ আয়োজন করতে যাচ্ছি আগামী নভেম্বরে। ইতোমধ্যে দলগুলোকে চিঠি পাঠানো হয়েছে, তারা ইতিবাচক সারা দিয়েছে। দলগুলো হচ্ছে- ভারত, জাপান, কেনিয়া, কোরিয়া, নেপাল, থাইল্যান্ড, ইরান, জার্মানি, উগান্ডা, জানজিবার, চাইনিজ তাইপে, আর্জেন্টিনা, হল্যান্ড ও বাংলাদেশ।
স্ট্যান্ডবাই : পাকিস্তান ও পোল্যান্ড।
প্রতিটি দল পাঁচতারা হোটেলে অবস্থান করবে। খেলা হবে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামে।
এস এম নেওয়াজ সোহাগ আরো কলেন, এই বিশাল আয়োজনে প্রায় ১১ কোটি টাকার প্রয়োজন। আশা করি সফল হবো। কাবাডিকে অবহেলা করার সুযোগ নেই। যতদিন ফেডারেশনে থাকবো কাবাডিকে দেশের খেলাধুলার সর্বাগ্রে রাখার চেষ্টা করবো।