এল আর বাদল : ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি গত ২৪ ঘণ্টায়। এই অবস্থাকে স্থিতিশীল মনে করছেন চিকিৎসকরা।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে বুধবার খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সহায়তায় যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড বিল ঢাকায় পৌঁছে এরই মধ্যে চিকিৎসক দলের সাথে যুক্ত হয়েছেন বলেও জানিয়েছে বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রেস উইং।
এর আগে মঙ্গলবারই সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন ব্রিটিশ এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ঢাকায় আসার কথা জানিয়েছিলেন। --- বিবিসি বাংলা
গত দুই দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য অবস্থা নিয়ে নানা ধরনের তথ্য শেয়ার করতে দেখা গিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে তার শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ পরিস্থিতি জানিয়ে মঙ্গলবার ডা. জাহিদ হোসেন ব্রিফিং করে জানিয়েছিলেন, খালেদা জিয়াকে যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে সেটি গ্রহণ করতে পারছেন তিনি।
মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার বিষয়ে আর কোনো ব্রিফিং করা হয়নি।
গত ২৪ ঘণ্টায় খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নে বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, গতকালের মতোই স্থিতিশীল অবস্থায়ই আছেন তিনি।
'সংকাটাপন্ন' অবস্থা থেকে ওষুধ গ্রহণের বিষয়টিকে আপাতত ইতিবাচক হিসেবেই দেখা হচ্ছে জানিয়ে মি. ইসলাম বলছিলেন, "যেহেতু ওষুধে রেসপন্স করছে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই আমি মনে করি এটা একটা গুড সাইন"।
দুপুরে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে দুপুরে হাসপাতালে যান মৎস্য ও পানিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। সন্ধ্যায় সেখানে যান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রাতে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
গত ২৩শে নভেম্বর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে যাওয়ার পর ওইদিন থেকেই ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন খালেদা জিয়া। ২৭শে নভেম্বর তার অবস্থা সংকটাপন্ন হলে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে নিয়ে নিবিড় চিকিৎসা দিচ্ছে মেডিকেল বোর্ড।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখন কেমন?
গত ২৩ নভেম্বর থেকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়া ভর্তি হওয়ার পর তার ফুসফুসে সংক্রামণে অবস্থার অবনতি হলে গত ২৭শে নভেম্বর থেকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট বা সিসিইউতে নিয়ে চিকিৎসকরা তাকে বিশেষ ব্যবস্থায় নিবিড়ভাবে চিকিৎসা দিচ্ছেন।
মঙ্গলবার দুপুরের সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, তাকে যে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে সেটি তিনি গ্রহণ করতে পারছেন।
মি. জাহিদ এর আগে জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র, লিভার, কিডনি ও ফুসফুসের জটিলতা রয়েছে।
ডা. রফিকুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, "একজন রোগী যখন ওষুধ গ্রহণ করেন তার মানে আমরা ধরে নেই এটা একটা ইতিবাচক দিক। চিকিৎসকরা তখন মনে করেন রোগীর শরীর এটাকে অ্যাডজাস্ট করে নিচ্ছে"।
এমন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার পরবর্তী চিকিৎসা কী হবে সেই প্রশ্নও সামনে আসছে। এর জবাবে বিএনপির এই চিকিৎসক জানান, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল টিমের বৈঠক শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার পর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া হবে কি-না সেটি নিয়েও এখন নানা আলোচনা চলছে।
জবাবে ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড যদি মনে করে তাকে এই অবস্থায় দেশের বাইরে নিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব সেটি বোর্ডই সিদ্ধান্ত নেবে।
এদিকে রাতেই চীনের একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলও বাংলাদেশে আসছে বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান।