মনিরুল ইসলাম : ‘বাংলাদেশে কেউ সম্প্রদায় নন, সকলেই নাগরিক’ বলে মন্তব্য করেছেন সালাহ উদ্দিন আহমদ।সোমবার রাতে ঢাকেশ্বরী পুজামন্ডপে পুণ্যার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘‘ আমরা কেউ সম্প্রদায় নই, বাংলাদেশের সবাই সিটিজেন। এদেশের সবাই যার যার, নিজ নিজ ধর্ম চর্চা স্বাধীনভাবে করবে। হয়ত কেউ একেক ধর্মের অবলম্বন করতে পারেন বা ধর্মাবলম্বী হতে পারেন। নিজেরা যেন কেউ সম্প্রদায় হিসেবে পরিচয় না দেই, সিটিজেন হিসেবে পরিচয় দেই।”
তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নীতি হচ্ছে, ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার, ধর্ম যার যার, নিরাপত্তা পাবার অধিকার সবার। সেই নিরাপত্তাটাই আমাদেরকে বাস্তবায়ন করতে হবে।”
সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘ অতীতে আমরা দেখেছি, রাজনৈতিকভাবে বিভিন্ন কারণে গত ফ্যাসিবাদী শক্তি আপনাদেরকে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে, ভোটের বাক্স হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে… সেখান থেকে সবাইকে বেরিয়ে যেতে হবে।‘নির্বাচনকে বিলম্বিত করবে তাদেরকে জনগণ চিহ্নিত করে রাখবে’
তিনি বলেন, আমরা ইদানিং লক্ষ্য করছি, একটি গোষ্ঠী, একটি রাজনৈতিক দল ধর্মের ভিত্তিতে জাতিতে বিভাজন সৃষ্টি করতে চায়, অনৈক্য সৃষ্টি করতে চায়। আপনারা আমরা সবাই যেন সে ব্যাপারে সজাগ থাকি। আমরা লক্ষ্য করেছি, বিভিন্ন রকমের ইস্যু সৃষ্টি করে এই দেশে সামনে সুষ্ঠ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়।আমরা আপনাদের সামনে স্পষ্ট একটি উচ্চারণ করি, বাংলাদেশে এখন নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে,বাংলাদেশের মানুষ ভোটের প্রচারে নেমে গিয়েছে, সকল প্রার্থী যারা ইলেকশন করবেন বলে আশা করছেন সবাই গণসংযোগে নেমে গিয়েছে।এখন যারাই নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করবে, যারা বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করার মধ্য দিয়ে নির্বাচনকে বিলম্বিত করার চেষ্টা করবে তাদেরকে এ দেশের জনগণ চিহ্নিত করবে।
তিনি বলেন, ‘‘আমরা ১৬ বছর সংগ্রাম করছি আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য, ভোটের অধিকার প্রয়োগ করার জন্য। যেই নির্বাচনের দিন তারিখ ঘোষণা এখনো হয়নি, যে নির্বাচনের একটা সময়সীমা ঘোষণা হয়েছে তারপর থেকে আমরা লক্ষ্য করলাম এই নির্বাচন যাতে বিলম্বিত হয় সেই প্রচেষ্টা চালু আছে কোন কোন মহল থেকে, এই নির্বাচন যাতে বাধাগ্রস্ত হয় সেই প্রচেষ্টাও চালু আছে কোন কোন মহল থেকে।”
‘আপনাদের যৌক্তিক দাবি বিএনপির ইশতেহারে থাকবে’
হিন্দুদের বিভিন্ন দাবি বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহারে থাকবে উল্লেখ করে সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘আপনাদের কিছু দাবি দেওয়া আমাদের সামনে আগেও দেয়া হয়েছিল, আমরা এগুলো বিশ্লেষণ করেছি, আগেও আপনাদের সাথে এ নিয়ে কথা হয়েছে। বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের সময়ে আপনাদের নেতৃবৃন্দের সাথে আমরা আলোচনা করে আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে আপনাদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়াগুলো আমরা ধারণ করবো।”
‘‘ যেমন দেবত্তর সম্পত্তি, অর্পিত সম্পত্তি সংখ্যালঘু কমিশন এবং ফাউন্ডেশন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করা যায় কিনা, দেবোত্তর সম্পত্তি এবং অর্পিত সম্পত্তির বর্তমান অবস্থা বিশ্লেষণ করে সেগুলো উদ্ধার করে মালিকানা ফিরিয়ে দিয়ে যায় কিনা এগুলো সবই সম্ভব। আমরা সেগুলো আমাদের ইশতেহার ধারণ করব। এই ইশতেহার প্রণয়নের সময় আপনাদের সাথে আবার আলোচনা হবে।”
তিনি বলেন. ‘‘ আমরা বাংলাদেশে হিন্দু,বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলিম-অমুসলিম, পাহাড়ি-সমতলে সকল নাগরিকের সমন্বয়ে আমরা একটি ঐক্যবদ্ধ সমন্বয়ের রাজনীতি করি এবং এই সমন্বয়ের রাজনীতিকে আমরা রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করি।”
‘‘সুতরাং বিএনপি আমরা যারা করি, যারা বাংলাদেশে জাতিতাবাদে বিশ্বাস করি, আমরা ধর্মের ভিত্তিতে জাতিতে কোন বিভক্তি চাই না। আমরা ধর্মের ব্যবহার করে ধর্মকে রাজনৈতিক খাতিয়ার হিসেবে আমরা ব্যবহার করতে চাই না, কখনো চাইনি। আমরা বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে ধর্মের ভিত্তিতে।আমরা এই দেশের সবাই নাগরিক, সাংবিধানিকভাবে আমরা সবাই সিটিজেন। সিটিজেনের সমস্ত অধিকার সাংবিধানিকভাবে যা উল্লেখ করা হয়েছে সেটা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করাই হবে আমাদের লক্ষ্য। আমাদের সংবিধানে ধর্মের ভিত্তিতে কোন বৈষম্য নাই আর্টিকেল ২৮ এবং সমস্ত ধর্মের উপাসনালয় কার্যক্রম এবং প্রচার স্বাধীনতা আছে আর্টিকেল ৪১। কিন্তু কার্যকরভাবে এটার প্রয়োগ আমরা নিশ্চিত করব।”
‘বিএনপি আপনাদের পাশে থাকবে’
সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘‘ আমি আপনাদের শারদীয় শুভেচ্ছা জানাই এবং আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমাদের দলের সকল নেতাকর্মীকে আহ্বান জানাই যতদিন পর্যন্ত এই দুর্গা উৎসব পরিচালিত হবে, দুর্গা উৎসব অনুষ্ঠিত হবে সারা বাংলাদেশে আমাদের সকল নেতাকর্মী এই অনুষ্ঠানকে পাহারা দিবে, নিরাপত্তা দিবে।”
‘‘বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের জন্য বিভিন্ন রকমের ষড়যন্ত্র তৎপর চালু আছে। আমরা সেই ষড়যন্ত্রকে অতীতেও কার্যকর হতে দেইনিম সামনেও এই ষড়যন্ত্র সফল হতে দেবো না।
এই অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম বক্তব্য রাখেন। পরে রাতে বনানীর পূজামন্ডপও পরিদর্শন করেন সালাহউদ্দিন আহমদসহ বিএনপির নেতৃবৃন্দ।