শিরোনাম
◈ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে নেতানিয়াহু, ইসরা‌য়েল আ‌গের চে‌য়ে অ‌নেক শ‌ক্তিশালী, যুদ্ধ কন্ধ কর‌তে ইরান‌কে আহবান ◈ ভারত, পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একই গ্রুপে ◈ হত্যার অস্ত্র এক পার্ক করা গাড়ি: যেভাবে হত্যা করল ইরানের পরমাণু কর্মসূচির প্রধানকে ◈ চার লাখ কোটির খেলাপি: ১০ ব্যাংকেই আটকে তিন লাখ কোটি ◈ ১১ মাসে তৈরি পোশাক রফতানি ৩৬.৫৬ বিলিয়ন ডলার, প্রবৃদ্ধি ১০.২০% ◈ ইরানের দিকে যাচ্ছে মার্কিন রণতরী ◈ জামায়াতের অবস্থানে হঠাৎ পরিবর্তন কেন? ◈ মেয়রের শপথ: ইশরাক-আসিফ বাকযুদ্ধ, এর সমাধান কি? ◈ 'আমি করতেও পারি, নাও পারি', ইরানে হামলায় যোগ দেওয়ার বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প ◈ ইসরাইল লক্ষ্য করে এবার হাইপারসনিক ছুড়েছে ইরান

প্রকাশিত : ১২ অক্টোবর, ২০২৩, ১২:৫৭ রাত
আপডেট : ১২ অক্টোবর, ২০২৩, ১২:৫৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিশ্ব কি কোনোদিন ইহুদি, খ্রিস্টান, মুসলিম কিংবা হিন্দুর ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের হবে?

মোহাম্মদ আব্দুল বাতেন

মোহাম্মদ আব্দুল বাতেন: স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন আমার এক সহপাঠি ছিলো, আভিটাল ডুবো নাম। বেশ হাসি-খুশি প্রাণবন্ত। গ্রুপ ওয়ার্কে যে সবচেয়ে বেশি কাজ করতো। কিন্তু ক্রেডিট নিতে চাইতো না। একদিন দেখি অনেক মন খারাপ, কারণ জিজ্ঞেস করতে বললো, গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে ব্রেকআপ হয়ে গেছে। আমি তখন মাত্র স্টকহোমে গিয়েছি। এসব বয় গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড-লিভ টুগেদার। এসব পশ্চিমা সংস্কৃতি সম্পর্কে সিনেমায় যা দেখেছি, এর বাইরে আলাদা কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তাছাড়া এ ধরনের মুহূর্তে কীভাবে সান্ত্বনা দিতে হয় জানি না। আমাদের দেশে তো দেখতাম, বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড সারারাত ঝগড়া করে ব্রেকআপ করতো, পরেরদিন আবার রিকশা করে ঘুরতো। এরকম কিছু একটা ভেবেছিলাম।

কিন্তু আভি খুব ভেঙে পড়েছে। কোর্স ড্রপ দিয়ে দিলো। আমাদের ডিসিপ্লিনে একেকটা কোর্স টানা দুইমাস করে পড়াতো। একটা পাস করলে পরেরটা শুরু হতো। দুই মাস পর আভি পরের কোর্সে ক্লাস শুরু করলো। দুই মাস কী করেছে জানি না। এবার সে আমার গ্রুপে। ভালোই বন্ধুত্ব জমে উঠলো। জানতাম না সে আসলে কোন ধর্মানুসারী। কোন দেশ থেকে এসেছে, এটাও জানি না। শুধু জানতাম সুইডেনে থাকে। একদিন কথা প্রসঙ্গে বললো, সে ইহুদী। ইসরায়েল তার অরজিনাল বাড়ি। সুইডেনেও নাগরিকত্ব আছে। কিন্তু ক্রিসমাস কিংবা অন্য বড় ছুটিতে ইসরায়েল যায়। কেমন যেন এটা জানার পর থেকে মন খচ খচ করতো। এমন একটা প্রাণবন্ত ছেলে কেন ইসরায়েলের নাগরিক হবে? কেন ইহুদি হবে?

কারণ ছোটবেলা থেকে আমরা ইসরায়েলকে এক ভয়ঙ্কর দেশ হিসাবে জানি। আর মুসলমানদের সঙ্গে ইহুদীদের সংঘাত, তাদের কূটকৌশল, এসব শুনে শুনে বড় হয়েছি। তাই কেউ ইসরায়েলের অধিবাসী কিংবা ইহুদী শুনলেই কেন যেন একটা আড়ষ্টতা চলে আসতো। আভি মনে হয় আগের মতো আন্তরিকতা দিয়ে মিশি না, এটা বুঝতে পেরেছিলো। একদিন সরাসরি জিজ্ঞেস করলোÑ বাতেন আমি কি ইসরায়েলি নাগরিক আর ইহুদী হওয়ায় আমাকে ঘৃণা করো? আমি এমন প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। থতমত খেয়ে মিথ্যা করে বললাম, না না, তা কেন? আভি আমার বাক্য পুরোটা শেষ করার আগেই বলে উঠলো, আমি বুঝেছি আমার ধর্মীয় পরিচয় পাওয়ার পর থেকে তুমি আমার সঙ্গে আগের মতো প্রাণখুলে কথা বলো না। কিন্তু দেখো আমি প্রথম থেকেই জানি, তোমার নাম মোহাম্মদ (আমার নামের প্রথম অংশ) তাই তুমি মুসলিম। কিন্তু আমি তো তোমার সঙ্গে ধর্ম পরিচয় হিসাবে মিশিনি, আমি সহপাঠি ও মানুষ হিসাবেই দেখেছি তোমাকে। আমি বুঝেছি ফিলিস্তিনে আমাদের সরকারের ভূমিকা নিয়ে তোমরা হয়তো আমাদের ঘৃণা করো। কিন্তু সেটা রাজনীতি। আমরাও ফিলিস্তিনিদের প্রতি অন্যায়কে সমর্থন করি না। 

একটু দম নিয়ে বললো, আমি সুইডেনে ইমিগ্রান্ট হয়েছি তার একটা বড় কারণ আমার সন্তানকে আমি ইসরায়েলে বড় করতে চাইনি। এতো হত্যা, নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা যায় না। আমার বাবা-মা আসতে চায়নি ইসরায়েল ছেড়ে, তাই তাদের দেখতে যাই। তাছাড়া আমি ধর্ম সেভাবে পালন করি না। ইহুদী ঘরে জন্মগ্রহণ করেছি বলেই আমি ইহুদী। কিন্তু আমি তো মানুষ হিসাবে পৃথিবীতে বাঁচতে চাই। এটা বলে সে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। আমিও চুপ, কী বলবো খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তারপর একটা কাজ আছেÑ এটা বলে সেদিন চলে গেলো। কিন্তু এরপর থেকে আভি আগের সেই প্রাণবন্ততা নিয়ে মিশতে দেখিনি। হয়তো আমার আড়ষ্টতা কিংবা মুসলিম ফিলিস্থিনিদের প্রতি তার দেশ ইসরায়েলের যে অত্যাচারী ভূমিকা সেটার জন্য অনুশোচনা আমি জানি না। তবে সুইডেন থেকে দেশে ফেরার পরেও ফেসবুকে টুকটাক দু’একবার আভির সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিলো। সে পরে আবার প্রেমে পড়ে এক সুইডিশ মেয়ের। বিয়েও করে। তার দুটি সন্তানের ছবি দেখেছিলাম ফেসবুকে। 

একটা কথা মনে পড়ে, আমাদের বিদায়ী ডিনারে সবাইকে রিফ্লেকশন দিতে বললো। সেখানে আভিটাল ডুবোর কথাটা এখনো মনে পড়ে- পৃথিবী যখন ইহুদী, খ্রিস্টান, মুসলমান, হিন্দুর না হয়ে মানুষের হবে সেদিন হয়তো শিক্ষার ও জ্ঞানের স্বার্থকতা আসবে। অনেকদিন আভির সঙ্গে যোগাযোগ নেই। ফেসবুকে মাঝখানে ডিএক্টিভেটেড থাকায় পরে অ্যাক্টিভ করে খুঁজে পাইনি। বলা যায় খুঁজিনি। আবার ইসরায়েল ফিলিস্তিন সংঘাতের প্রাক্কালে আমার সহপাঠী (বন্ধু) আভির কথা মনে পড়লো। প্রশ্নটা এখন আমার মনেও জাগছে, বিশ্ব কি কোনোদিন ইহুদি, খ্রিস্টান, মুসলিম কিংবা হিন্দুর ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের হবে? লেখক: শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান, ইউনিভার্সিটি অব মেইন। যুক্তরাষ্ট্র।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়