শিরোনাম
◈ হত্যার অস্ত্র এক পার্ক করা গাড়ি: যেভাবে হত্যা করল ইরানের পরমাণু কর্মসূচির প্রধানকে ◈ চার লাখ কোটির খেলাপি: ১০ ব্যাংকেই আটকে তিন লাখ কোটি ◈ ১১ মাসে তৈরি পোশাক রফতানি ৩৬.৫৬ বিলিয়ন ডলার, প্রবৃদ্ধি ১০.২০% ◈ ইরানের দিকে যাচ্ছে মার্কিন রণতরী ◈ জামায়াতের অবস্থানে হঠাৎ পরিবর্তন কেন? ◈ মেয়রের শপথ: ইশরাক-আসিফ বাকযুদ্ধ, এর সমাধান কি? ◈ 'আমি করতেও পারি, নাও পারি', ইরানে হামলায় যোগ দেওয়ার বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প ◈ ইসরাইল লক্ষ্য করে এবার হাইপারসনিক ছুড়েছে ইরান ◈ লন্ডন বৈঠকের পর বিএনপি-জামায়াত সম্পর্কে ফাটল: হতাশা, বিরক্তি ও রাজনীতির নতুন সমীকরণ ◈ পরিবেশের ক্ষতি করে কোনো উন্নয়ন নয়: প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশিত : ১৯ জুন, ২০২৫, ০১:৪৯ রাত
আপডেট : ১৯ জুন, ২০২৫, ০৫:০০ সকাল

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

মেয়রের শপথ: ইশরাক-আসিফ বাকযুদ্ধ, এর সমাধান কি?

মহসিন কবির: বিএনপি নেতা ইশরাকের শপথকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ সিটি প্রায় অচল। প্রতিদিনই বিক্ষোভ করছে ইশরাকের সমর্থকরা। তারা বিভিন্ন শ্লোগান দিচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোন কথাই বলছে না। অন্য উপদেষ্টাও এটা নিয়ে কোন কথা বলছেন না। কিন্তু সুফল পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ।  

এদিকে আন্দোলনের পাশাপাশি চলমান নাগরিক সেবাও মশক নিধন অভিযানের জন্য প্রস্তুত স্প্রে-ম্যানরা। ইশরাক হোসেন নিজেই এ কর্মসূচির উদ্বোধন করলেন। বুধবার (১৮ জুন) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

উপদেষ্টা আসিফ বলেন, সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এবং নির্বাচন কমিশনের গেজেট অনুযায়ী শপথের মেয়াদও শেষ হয়ে যাওয়ায়, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ নেয়ার আইনি কোনো সুযোগ নেই।
 
এ সময় ইশরাক ও তার অনুসারীদের আন্দোলনে সিটি করপোরেশনের নাগরিক সেবাদানে বিঘ্ন ঘটছে বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৫ শতাংশ নাগরিক সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। ইশরাক হোসেনের কারণে সৃষ্ট অচলাবস্থায় সম্পূর্ণ নাগরিক সেবা ভেঙে পড়ারও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
 
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার মতে, ইশরাক হোসেন আইন ভঙ্গ করেছেন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই এটি করা হচ্ছে।

এদিকে ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার দাবিতে নগর ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসুচি পালন করছেন ইশরাক সমর্থকরা। প্রতিদিনের মতো আজ বুধবার বেলা ১১টা থেকে এ কর্মসুচি শুরু হয়।

এর আগে সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে নগর ভবনে আসছেন ঢাকাবাসি। মিছিল থেকে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার পদত্যাগে নানা শ্লোগান দিতে থাকেন। একই সাথে ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতেও শ্লোগান দেন তারা।

সোমবার (১৬ জুন ) নগর ভবনের কনফারেন্স রুমে একটি সভা করেছেন ইশরাক হোসেন। নগরভবনে এটিই তার প্রথম সভা। যেই সভার ব্যানারে ইশরাক হোসেনের নামের সঙ্গে ‘মাননীয় মেয়র’ লেখা ছিলো।

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন বলেছেন, নগরভবনে ঢুকে ফৌজদারি অপরাধ করলে আমাকে গ্রেপ্তার করুন। বুধবার দুপুরে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে উদ্দেশ্য করে তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন, উপদেষ্টা আসিফকে নগরভবন থেকে ঢাকাবাসী বের করে দেয়ায় সে আমার উপর প্রতিশোধ নিচ্ছে। আন্দোলনকে ষড়যন্ত্র করে দমানোর চেষ্টা করছে। আবার জনদুর্ভোগ তৈরি করে আমাদের উপর দায় চাপাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা নগরবাসীর সেবা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, অথচ সরকার থেকেই সেই সেবায় বিঘ্ন ঘটানো হচ্ছে।

ইশরাক বলেন, আমাদের আন্দোলন চলমান থাকা অবস্থাতেও আমরা জরুরি সেবাগুলো চালু রেখেছি কিন্তু সরকার থেকে বিশেষ করে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের কাজ করতে নিষেধ করেছেন বলে শুনতে পেরেছি।' 

তিনি আরও বলেন, গতকাল জানতে পেরেছি, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা ও সচিব আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন যেন তারা জন্ম নিবন্ধন বা নাগরিক সনদে স্বাক্ষর না করেন। একটা ন্যাক্কারজনক কাজ করতে যাচ্ছে। তারা চাচ্ছে সেবায় বিঘ্ন ঘটিয়ে আমাদের ওপর দায় চাপানোর।' 

ইশরাক বলেন, 'গতকাল আসিফ মাহমুদ বলেছেন, আমি নাকি আইন লঙ্ঘন করেছি এবং ফৌজদারি অপরাধ করেছি। আমি তাকে বলতে চাই আমি যদি অপরাধই করে থাকি তাহলে আপনারা সরকারে থেকেও কেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন না?' 

স্থানীয় সরকারবিশেষজ্ঞ ও নগর–পরিকল্পনাবিদেরা বলছেন, শপথ না নিয়ে আইনকানুন ও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ইশরাক হোসেন যেভাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন, এটি বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। গায়ের জোরে এভাবে নগর ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার বিষয়টি নজিরবিহীন। এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার বিশেষ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনের কারণে এক মাসের বেশি সময় ধরে নগর ভবনে অচলাবস্থা চলছে। এর মধ্যেই গত সোমবার থেকে তিনি ‘মেয়রের দায়িত্ব পালন’ শুরু করেছেন। সেদিন নগর ভবন মিলনায়তনে প্রায় ৭০ জন পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শকের সঙ্গে বৈঠক করে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এ নিয়ে নানা মহলে তীব্র সমালোচনা হলেও গতকাল ওয়ার্ড সচিব ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন তিনি।

ইশরাক মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিলে কত মাস দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাবেন- সেই প্রশ্নে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা এর আগে বলেছেন, বাকি মেয়াদের জন্য (তিন মাস) নাকি নতুন যোগ দেওয়ার পর থেকে মেয়াদ শুরু হবে- সেটি ইসির গেজেট প্রকাশ, আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত ও স্থানীয় সরকার বিভাগের পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘নির্বাচন ইস্যুতে লন্ডনে ফলপ্রসূ বৈঠকের পর আমরা এখন আর এই আন্দোলনের পক্ষে না। এতে ইশরাকের যেমন ইমেজ ক্ষুণ্ন হচ্ছে, তেমনি বিএনপিরও ইমেজ নষ্ট হচ্ছে। বিএনপির লক্ষ্য এখন জাতীয় নির্বাচন।’ ‘লন্ডন বৈঠকের’ পর রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির এই বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সূত্র মতে, বৈঠকে ‘লন্ডন বৈঠক’ ছাড়াও ইশরাকের শপথ ইস্যু এবং আগামী নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

নির্দিষ্ট সময়ে ইশরাককে শপথ না পড়ানো ভুল সিদ্ধান্ত: শপথ নিয়ে চলমান সংকটের সমাধান আদালত থেকে আসতে পারে বলে মনে করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান। জানতে চাইলে কালবেলাকে তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এখন শপথ নেওয়ার সুযোগ নেই বলে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, এই ব্যাখার আইনগত দিক নিয়ে আলোচনা হবে। যখন এই মামলাটি আদালতে চলছিল তখন সরকারের পক্ষ থেকে কেন আদালতে যাওয়া হয়নি? তখন আদালতে গিয়ে সরকারের পক্ষে ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত ছিল। এখন সরকারের পক্ষ থেকে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, সেটি সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া উচিত।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান তোফায়েল আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এখন কাউকে শপথ পড়ানোর কোনো অবকাশ নেই। করপোরেশনের মেয়াদ থাকতে শপথ পড়ানো হয়নি। এটা ভুল করেছে। সে সময় শপথ পড়ালেও মেয়াদ ছিল এক বা দেড় মাস। এখন শপথ পড়ানো হবে কীভাবে?’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়