রাজিক হাসান: সুমনের জনপ্রিয় একটা গান আছে, ‘ইচ্ছা হলো একধরনের গঙ্গা ফড়িং, অনিচ্ছাতেও লাফায় যেন তিরিং বিরিং’, পবন দাশ বাউলেরও জনপ্রিয় একটি গান হলো, ‘চঞ্চল মন আমার শোনে না কথা’ সবার মতো গান দুটি আমারও খুব প্রিয়। সত্যিই তাই এতো ধর্মীয় অনুশাসন আর সামাজিক রীতি-নীতির মাঝেও মন বসে নেই, চলছে আপন গতিতে। সত্যি, চঞ্চল মনকে বশে রাখা যায় না। কৌতুক করে অনেকে বলেন, ‘ওরে মন হলো বাঁদরের মত , সে কী কারো বশে থাকে’? মনের সাথে বাঁদরের তুলনা। অবাক ব্যাপার তাই না?
বইয়ে পড়েছি, বানর দেখে মুখে ভেংচি কাটেনি এমন মানুষের সংখ্যা নিতান্তই বিরল। শৈশবে যখন চিড়িয়াখানায় গিয়েছি তখন দেখেছি বানরের খাঁচার মুখোমুখি হয়েই দিব্যি ভেংচি কাটা শুরু করে দর্শনার্থীরা। না, পাশাপাশি কলা ছুঁড়ে দেবার কাজটাও বাদ যায়নি কিন্তু ভেংচি কেটেছে ঠিকই। অথচ মজার ব্যাপার বাঘ, সিংহ, ভাল্লুক বা অন্য কোনো প্রাণীর মুখোমুখি হলে ভেংচি কাটার এই ঝোঁক এতোটা দেখা যায় না যতটা দেখা যায় বানরের বেলায়। সার্কাসেও বানর দেখেছি। পথে হাটে ঘাটে বাজারেও আগে বানরের খেলা দেখিয়ে মানুষ পয়সা রোজগার করতো। আজকাল উঠে যাচ্ছে বানর নিয়ে খেলা।
ডুগডুগি বাজিয়ে বানরের খেলা দেখিয়ে বেড়াত যে লোকগুলো আজকাল তেমন আর চোখে পড়েনা ওদের। বানরের সমাগম ছিল এমন বহু জনপদ জনমানুষের ভিড়ে আজ বানরশূন্য। একসময় প্রতিবেশী ছিল, তাড়িয়ে দিয়েছি ওদের। তারপরও বানরের প্রতি সহজাত ও আলাদা একটা টান মানুষের কিন্তু ঠিকই রয়েছে। এই যেমন ভাগ্য ফেরানোর তাবিজ বেচবে বলে বানর সাথে নিয়ে পথে ঘাটে আসর জমিয়ে তোলা হকার, তারাও কিন্তু বেশ বোঝে পথচারীরা জমায়েত হবে বানর দেখার টানে। তারপর কিন্তু ভাগ্য ফেরানোর তাবিজ কিনে বাড়ি ফিরবে ঠিক। এখানে মানুষকে ডাকছে কে? বানর। বানর কিন্তু সেই মানুষকে ভোলাবে না। কারণ বানর ভোলাতে জানে না, ঠকাতেও না। বানরকে নিয়ে মানুষ যে প্রতিক্রিয়া দেখায় তা কিন্তু বানর মানুষের মতো দেখতে বলে। কথাটা বেকন সাহেবের। কথাটা কিন্তু সত্যি। অথচ বানর কিন্তু বানরের মতোই, ঠিক যেমন হরিণ হরিণের মতো কিংম্বা হাতি হাতির মতো। কিন্তু মানুষ বানর দেখা মাত্র অবচেতন মনে বানরের সাথে তার নিজের আকৃতি ও বৈশিষ্টগত মিল খুঁজে পায় এবং তখন যত রাগ গিয়ে পড়ে বানরের উপর, প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে আর পারে কি? বানর মানুষের মতো হয়ে বুঝি মানুষের সকল গৌরব ধূলায় লুটিয়ে দিল। হতচ্ছাড়া বানর।
মানুষের মতো হওয়াটা যেন মস্ত অপরাধ হয়েছে বানরের। আসলে মানুষের মতো হওয়াটা বানরের কী গর্ব হয় নাকি লজ্জা সেটাও জানা দরকার। বানর যখন মানুষের মতোই এক্ষেত্রে তখন তাদের মতামতটাও জানা জরুরি। লেখাটি শুরু হল মানুষের মন নিয়ে আর লিখে গেলাম বানর নিয়ে- এবার তার কারণটি বলি। আমাদের অর্থাৎ মানুষদের ভেতরে থাকা ‘মন’ নামক জিনিসটা প্রকৃতিগতভাবেই হুবহু বানরের বৈশিষ্ট্য পেয়েছে। চঞ্চল বানর যেমন কিছুতেই বশে থাকে না। আমাদের মন হলো বাঁদরের মতো চঞ্চল, সেও কারো বশে থাকে না। তবুও প্রতিনিয়ত এর লাগাম টেনে ধরার চেষ্টায়রত আমরা। যদিও ভাবুকরা বলেন, বশ মানিয়ে লাভ কী, থাকুক না লাগাম ছাড়া! ফেসবুক থেকে