শিরোনাম
◈ যুদ্ধবিরতির পর গাজায় ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় হামলা, নিহত অন্তত ২০ ফিলিস্তিনি ◈ অনুমতি ছাড়াই সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার ক্ষমতা পাচ্ছে দুদক ◈ ঘুমন্ত স্ত্রী-সন্তানসহ ৬ জনের শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন, দুজনের মৃত্যু ◈ ভেস্তে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে যুদ্ধবিরতি: গাজায় ‘শক্তিশালী’ হামলা চালানোর নির্দেশ নেতানিয়াহুর ◈ সোনার দাম একলাফে কমলো সাড়ে ১০ হাজার টাকা ◈ ইতালিতে রেসিডেন্স পারমিট পাওয়ায় শীর্ষ তিনে বাংলাদেশিরা ◈ গাজায় ইসরাইলপন্থী পক্ষপাতের অভিযোগে নিউইয়র্ক টাইমস বয়কটের ঘোষণা ১৫০-রও বেশি লেখক ও শিল্পীর ◈ বিপুলসংখ্যক জামিন প্রশ্নে তিন বিচারপতির কাছে কোনো ব্যাখ্যা নয়, তথ্য চাওয়া হয়েছে: সুপ্রিম কোর্ট ◈ ক্ষোভে জ্বলছে ভারতীয়রা : পাক জেনারেলকে ড. ইউনূসের দেওয়া উপহারের মানচিত্রে ভারতের সাত রাজ্য! ◈ জটিলতা কাটেনি গণভোটের সময় নিয়ে, দুই মেরুতে বিএনপি-জামায়াত

প্রকাশিত : ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ০৮:৩২ রাত
আপডেট : ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ১০:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কতটুকু জায়গা ছাড়তে হয় বাড়ি করার সময়, জেনে নিন আইনে কী আছে

বাড়ি নির্মাণ শুধু ইট-পাথরের কাজ নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনুমোদন প্রক্রিয়া, আইনি বাধ্যবাধকতা, নিরাপত্তা ও পরিবেশের বিষয়ও। বাড়ি নির্মাণের সময় জমি থেকে কতটুকু জায়গা ছাড়তে হয়, না ছাড়লে কী হয়—এসব বিষয়ে অনেকেরই স্পষ্ট ধারণা নাও থাকতে পারে।

বাড়ি করার সময় কতটুকু জায়গা ছাড়তে হয়, না ছাড়লে কী হয়, এই বিষয়ে আইনে কী আছে এবং বাড়ি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী ইশরাত হাসান।

১. বাড়ি করার সময় কোন বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ যা বিবেচনায় রাখা উচিত
আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, বাড়ি নির্মাণের আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো জমির আইনগত অবস্থা যাচাই করা, দলিল, খতিয়ান, নামজারি ও খাজনা দাখিলা সব কিছু সঠিক আছে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এরপর ভবনের নকশা অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। ভবনের কাঠামো তৈরি করতে একজন অনুমোদিত স্থপতি বা প্রকৌশলীর সহায়তা নেওয়া উচিত, যাতে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডের (বিএনবিসি ২০২০) নিরাপত্তা, আলো-বাতাস, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, অগ্নি প্রতিরোধ ও ভূমিকম্প সহনশীলতার নিয়মগুলো মানা হয়। এ ছাড়া পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ড্রেনেজ ও সেপটিক ট্যাংকের পরিকল্পনাও আগে থেকেই ঠিক করা জরুরি।

২. গ্রাম ও শহরে কি একই নিয়ম প্রযোজ্য?
না, পুরোপুরি একই নয়। রাজধানীতে রাজউক, চট্টগ্রামে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), রাজশাহীতে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) এরকম অন্যান্য শহরাঞ্চলে পৌরসভা কঠোরভাবে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ভবন নির্মাণের অনুমতি দেয়। সেখানে নির্দিষ্ট সেটব্যাক, ওপেন স্পেস, উচ্চতা, রাস্তা বরাবর দূরত্ব ও নিরাপত্তা বিধান বাধ্যতামূলক। অন্যদিকে, গ্রামাঞ্চলে বাড়িঘর নির্মাণ করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের অনুমতি নিতে হয়। এ ছাড়া ন্যূনতম খোলা জায়গা রাখা, প্রতিবেশীর জমিতে অনধিকার প্রবেশ না করা, পানি ও নিকাশ ব্যবস্থার সুষ্ঠু পরিকল্পনা করা আবশ্যক। শহরে নিয়ম ভাঙলে জরিমানা বা ভবন ভেঙে ফেলার মতো শাস্তির বিধান রয়েছে।


৩. বাড়ি করার সময় কতটুকু জায়গা ছাড়তে হয়, আইন কী বলে?
আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি ২০২০) অনুযায়ী বাড়ি নির্মাণের সময় নির্দিষ্ট পরিমাণ খোলা জায়গা বা 'সেটব্যাক' রাখা বাধ্যতামূলক। সাধারণত সামনের রাস্তার দিকে ৫ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত জায়গা ফাঁকা রাখতে হয়, পেছনে ৪ থেকে ৬ ফুট এবং দুই পাশে ৩ থেকে ৫ ফুট খোলা জায়গা থাকতে হবে।

বহুতল ভবনের ক্ষেত্রে এই দূরত্ব আরও বেশি হতে পারে। মোট জমির অন্তত ৩০ শতাংশ খোলা জায়গা রাখতে হয়, যাতে আলো-বাতাস চলাচল, ড্রেনেজ ও অগ্নি নিরাপত্তা বজায় থাকে। এই নিয়ম শুধু শহরেই নয়, গ্রামাঞ্চলেও প্রযোজ্য, যদিও তদারকি তুলনামূলক কম।


৪. জায়গা না ছেড়ে বাড়ি করলে কী সমস্যা হতে পারে?
জায়গা না ছেড়ে বা অনুমোদন ছাড়া বাড়ি নির্মাণ করলে সেটি আইনের দৃষ্টিতে 'অবৈধ নির্মাণ' হিসেবে গণ্য হয়। এতে রাজউক, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশন ভবনটির বর্ধিত ভেঙে দিতে পারে, এমনকি মালিকের বিরুদ্ধে মামলা, জরিমানা বা বিদ্যুৎ পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার মতো পদক্ষেপও নেওয়া হয়। প্রতিবেশীর জমিতে অনধিকার প্রবেশ বা আলো-বাতাস বাধাগ্রস্ত হলে প্রতিবেশী আদালতে মামলা করতে পারে। তা ছাড়া অগ্নি বা ভূমিকম্পের সময় পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা না থাকলে উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হয় এবং মানুষের জীবনের ঝুঁকি বাড়ে। ফলে, জায়গা ছেড়ে আইন মেনে নির্মাণ করাই নিরাপদ, স্থায়ী ও ঝামেলামুক্ত উপায়।

৫. অনুমোদন ছাড়া বাড়ি করলে কি বৈধ করা যায়?
হ্যাঁ, কিছু ক্ষেত্রে পরে রেগুলারাইজেশন প্রক্রিয়ায় বৈধ করা সম্ভব, তবে এটি খুব সীমিত পরিসরে। এজন্য জরিমানা দিয়ে এবং স্থপতি বা প্রকৌশলীর মাধ্যমে নকশা পুনরায় জমা দিতে হয়। কিন্তু যদি ভবনটি রাস্তার ওপর, সরকারি জমিতে বা সেটব্যাক না রেখে তৈরি হয়, তবে রেগুলারাইজ করা যায় না, বরং ধ্বংস করা হয়।

৬. বাড়ির উচ্চতা বা তলা সংখ্যার কোনো নির্দিষ্ট সীমা আছে কী?
হ্যাঁ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) অনুযায়ী এলাকার ধরন, রাস্তার প্রস্থ ও জমির আকার অনুসারে ভবনের উচ্চতা নির্ধারিত হয়, যেমন:

সরু রাস্তায় সাধারণত চারতলার বেশি নয়।

বড় রাস্তার পাশে বা বাণিজ্যিক এলাকায় ১০-তলা বা তার বেশি হতে পারে।

তবে প্রতিটি ভবনের জন্য রাজউক বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) অনুযায়ী তলা নির্ধারণ হয়।

৭. পানি ও নিকাশ ব্যবস্থার আইনগত বাধ্যবাধকতা কী?
আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, নগর বা শহর এলাকায় প্রতিটি ভবনে সেপটিক ট্যাঙ্ক, সোক ওয়েল ও রেইন ওয়াটার ড্রেনেজ সিস্টেম বাধ্যতামূলক। শহরে ওয়াসা বা পৌর ড্রেনের সঙ্গে সংযোগ নিতে হয়। এসব না থাকলে ভবনের অনুমতি বাতিল বা পরিবেশ অধিদপ্তর জরিমানা করতে পারে।

৮. ভবন নির্মাণের সময় কোন কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হয়?
শ্রমিকদের জন্য সেফটি হেলমেট, জুতা, বেল্ট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

ভবনে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, ফায়ার এক্সিট, ও জরুরি সিঁড়ি রাখতে হয়।

কাজের সময় আশপাশের মানুষের নিরাপত্তা ও রাস্তা অবরুদ্ধ না করা নিশ্চিত করতে হবে।

নিয়ম ভঙ্গ করলে শ্রম আইন ও বিল্ডিং কোড অনুযায়ী মামলা হতে পারে।

৯. পরিবেশগত দিক থেকে কী বিষয় খেয়াল রাখা উচিত?
বাড়ির ডিজাইনে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের প্রবেশ, সবুজ জায়গা, রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং এবং সোলার সিস্টেম রাখলে ভবনটি পরিবেশবান্ধব হয়। বিএনবিসি ও পরিবেশ অধিদপ্তর এখন টেকসই ভবন নির্মাণকে উৎসাহিত করে, যা ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ বিল কমানো ও শীতল পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক। উৎস: ডেইলি স্টার।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়