শিরোনাম

প্রকাশিত : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১:০৮ দুপুর
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

পুলিশের কাজে গতি বাড়াতে নির্মাণ হচ্ছে থানা-ফাঁড়ি 

মহসিন কবির: পুলিশের কাজে গতি ফেরাতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় নতুন থানা ও ফাঁড়ি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ১৪০টি নতুন থানা ও ফাঁড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

নতুন থানা ও ফাঁড়ি নির্মাণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৭০৭ কোটি ৫৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকার এই প্রকল্পের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে। তবে নির্মাণব্যয় বেশি হওয়ায় কমিশন যৌক্তিক ব্যয় নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছে। সংশোধিত ব্যয় প্রস্তাব শিগগিরই কমিশনে পাঠানো হবে, যা অনুমোদনের পর একনেকে চূড়ান্ত অনুমোদন হলে ২০২৮ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ হওয়ার আশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ পুলিশের থানা-ফাঁড়ির একটি বড় অংশ চলছে ভাড়া বাড়ি ও জরাজীর্ণ ভবনে। আবাসন সংকটও প্রকট। দাপ্তরিক কাজও ব্যাহত হচ্ছে। এই বাহিনীকে আরও কার্যক্ষম ও দাপ্তরিক কাজে গতি আনতে ১৪০ থানা-ফাঁড়ি নির্মাণ করতে চায় পুলিশ। এ জন্য ৭০৭ কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয় ধরে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পরিকল্পনা কমিশন এক বৈঠকে কর্মকর্তা বলছেন, পুলিশের থানা-ফাঁড়ির প্রকল্পে স্থাপত্য নকশা ২৮ লাখ টাকা এবং প্রাক্কলন, দরপত্র, ডিপিপি ছাপানোর ২৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ বিভাগে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রকল্প পর্যালোচনায় উক্ত ব্যয় দ্বিগুণ বলে প্রতীয়মান হয়। ফলে থানা-ফাঁড়ির নির্মাণ ব্যয় যৌক্তিকভাবে কমানো যাবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পুলিশের থানা-ফাঁড়ি অধিকাংশই ভাড়া বাড়িতে অথবা জরাজীর্ণ ভবনে পরিচালিত হচ্ছে। এতে নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। এই সমস্যার সমাধানে ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে ফাঁড়ি তদন্তকেন্দ্র, ক্যাম্প, নৌ-পুলিশ কেন্দ্র, রেলওয়ে পুলিশ থানা ও আউটপোস্ট, ট্যুরিস্ট পুলিশ সেন্টার এবং হাইওয়ে পুলিশের জন্য থানা/আউটপোস্ট নির্মাণ’ প্রকল্প হাতে নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয়ের প্রস্তাব রাখা হয়েছে ৭০৭ কোটি ৫৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। এ ব্যয়ের পুরোটাই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে মেটানো হবে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। নতুন ব্যয় নির্ধারণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নতুন করে ব্যয় সংশোন করে কমিশনে পাঠাবে। এরপর আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে (্একনেক) বৈঠকে পাঠানো হবে। একনেক চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে চলতি ২০২৫ সালের জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২০২৮ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ করবে বাংলাদেশ পুলিশ (ডেলিগেটেড ওয়ার্ক-গণপূর্ত অধিদপ্তর)। প্রকল্পটি সারাদেশে বাস্তবায়িত হবে।

প্রকল্পের বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, হাইওয়ে পুলিশ-সড়ক দুর্ঘটনা, সড়কে অপরাধজনিত বিভিন্ন কার্য (ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি), ফিটনেসবিহীন ও অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন চলাচল প্রভৃতি ঘটনাকে নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং করতে হাইওয়ে পুলিশকে ২৪ ঘণ্টা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। কিছু যথাযথ ভৌত অবকাঠামো, অফিস ও যানবাহনের অপ্রতুলতার কারণে কাক্সিক্ষত সেবাদানে বিঘ্ন ঘটছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা অবশ্যই বাড়াতে হবে।

কমিশন বলছে, নৌ-পুলিশ নদীতে চলাচলের নিরাপত্তা সম্পর্কিত যাবতীয় নিরাপত্তা কার্যক্রম দেখভাল করে। তারা ছিনতাই, ডাকাতি থেকে যাত্রী ও মালামাল রক্ষা করা, অধিক যাত্রী ও মালামাল বোঝাইয়ের বিরুদ্ধে টহল দেয়। এ ছাড়া ফিটনেসবিহীন নৌঘানগুরোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং করে আসছে। কিন্তু যথাযথ অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে। বিশেষ করে অফিস যানবাহন ও অন্য লজিস্টিক এ স্বল্পতার কারণে কাক্সিক্ষত সাফল্য পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য হচ্ছে। এ জন্য নৌপুলিশের অবকাঠামোগত সংস্কার ও উন্নয়নের বিকল্প নেই। রেল পুলিশের থানা ও ফাঁড়িগুলো জরাজীর্ণ। এগুলোর নতুন নির্মাণ ও সংস্কার খুবই অত্যাবশ্যক। ট্যুরিস্ট পয়েন্টগুলোয় আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে ট্যুরিস্ট পুলিশ সেন্টার নির্মাণ করা এখন সময়ের দাবি। এসব বিবেচনা করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

রেলওয়ে পুলিশের বিষয়ে কমিশন বলছে, রেলওয়ে পুলিশ থানা নির্মাণের বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের সম্মতিপত্র ডিপিপিতে সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে তা অস্পষ্ট এবং গঠনযোগ্য নয়। এ সংক্রান্ত সুস্পষ্ট পত্র ব্যাখ্যাসহ উপস্থাপন করতে হবে।

প্রস্তাবিত নির্মাণ কাজের মধ্যে রয়েছে- চারতলা ভিতের ৪ হাজার ২শ বর্গফুট আয়তনের দোতলা ফাঁড়ি ও ক্যাম্প, নৌ-পুলিশ, রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি। চারতলা ভিতবিশিষ্ট ৫ হাজার ৫শ বর্গফুট আয়তনের দোতলা রেলওয়ে পুলিশ থানা ও চারতলা ভিতবিশিষ্ট ৪২শ বর্গফুট আয়তনের ট্যুরিস্ট পুলিশ সেন্টার, চারতলা ভিতবিশিষ্ট ৫ হাজার ৫৫০ বর্গফুট আয়তনের হাইওয়ে পুলিশ সদর দপ্তর, ১০তলা ভিতবিশিষ্ট ১৫ হাজার বর্গফুট আয়তনের ছয়তলা ট্যুরিস্ট পুলিশ সদর দপ্তর।

পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়, পুলিশ, নৌ-পুলিশ, রেল পুলিশ ফাঁড়ি/তদন্ত কেন্দ্র/আউটপোস্টের জন্য আট হাজার ৪শ বর্গফুটের দোতলা ভবন, রেল পুলিশ থানার জন্য ১১ হাজার বর্গফুটের দোতলা ভবন, হাইওয়ে থানা/আউটপোস্টের জন্য ২২ হাজার ২শ বর্গফুটের চারতলা ভবন এবং ট্যুরিস্ট পুলিশ থানার জন্য ১২ হাজার ৬শ বর্গফুট ভবনের প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) কোন অফিসে কোন পর্যায়ের কতজন অনুমোদিত জনবল রয়েছে তার বিবরণ নেই। এ ছাড়া ফ্লোর ইউজ প্ল্যান ডিপিপিতে সংযুক্ত নেই। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রাধিকার নীতিমালার প্রাপ্যতা অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস ও আবাসন স্পেস নির্ধারণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

১৪০ থানা-ফাঁড়ি নির্মাণ প্রস্তাবের ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন- এ প্রসঙ্গে পুলিশ অধিদপ্তর জানায়, বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট ১৪০টি স্থাপনা নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। পিইসি সভায় ভৌত অবকাঠামো বিভাগের প্রধান বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশ স্টেশন নির্মাণের বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের সম্মতিপত্র ডিপিপিতে সংযুক্ত করা প্রয়োজন।

কমিশন জানায়, একাধিক ভবনের কাজ একই ঠিকাদার করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণে অনেক সময় কাজে বিলম্ব হয়। আলাদাভাবে প্যাকেজ করলে দ্রুততার সঙ্গে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। প্রস্তাবিত ক্রয় পরিকল্পনায় প্যাকেজ সংখ্যা কেন্দ্র, সেন্টার, থানাভিত্তিক না করে জেলাভিত্তিক করে প্যাকেজ সংখ্যা কমানোর সুপারিশ করে কমিশন।

পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়, প্রকল্প দপ্তরের জন্য আসবাবপত্র ও তৈজসপত্র বাবদ ৩৬ লাখ টাকা, মাটি পরীক্ষা বাবদ ২ কোটি ১০ লাখ, রাজস্ব খাতে ছাপানো বাঁধাই কোডে মোট ১ কোটি ১০ লাখ, সম্মানী ১ কোটি ২৭ লাখ, ওয়াসা, সিটি করপোরেশন, টিঅ্যান্ডটি, পল্লী বিদ্যুৎ, পিডিবি, ডেসা, ডেসকোর সার্ভিস চার্জ বাবদ ৪ কোটি ২০ লাখ, প্রকল্প দপ্তরের জন্য টেলিফোন বিল বাবদ ১৮ লাখ টাকা রাখা হয়েছে, যা অনেক বেশি। এসব ব্যয় কমানোর সুপারিশ করেছে কমিশন।

অর্থ বিভাগের প্রতিনিধি বলেছেন, প্রকল্পের আওতায় মোট আটজন জনবল সরাসরি নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু জনবল কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করা হয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়।

এ প্রসঙ্গে জননিরাপত্তা বিভাগের প্রতিনিধি বলেন, জনবল কমিটির সুপারিশ গ্রহণের জন্য প্রস্তাব ইতোমধ্যে অর্থ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। সুপারিশ পাওয়া গেলে তা পুনর্গঠিত ডিপিপিতে সংযুক্ত করা হবে। অর্থ বিভাগের জনবল কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করে তা পুনর্গঠিত ডিপিপিতে সংযুক্ত করা এবং সে অনুযায়ী জনবলের সংখ্যা ও এ খাতের ব্যয় নির্ধারণের বিষয়ে উপস্থিত সবাই একমত পোষণ করেন।

পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রস্তাবিত প্রকল্পে দোতলা পুলিশ ফাঁড়ি নির্মাণ বাবদ বর্গফুটপ্রতি খরচ ৫ হাজার ২২১ টাকা, তিনতলা ট্যুরিস্ট পুলিশ সেন্টারের বর্গফুটপ্রতি ব্যয় প্রায় ৪ হাজার ৪৪৩ টাকা, চারতলা ফাউন্ডেশনে দোতলা নৌ-পুলিশ কেন্দ্রের বর্গফুটপ্রতি নির্মাণ খরচ ৫ হাজার ২২১ টাকা, চারতলা ফাউন্ডেশনের দোতলা রেল পুলিশ থানার বর্গফুটপ্রতি নির্মাণ খরচ ৫ হাজার ২৪ এবং চারতলা ফাউন্ডেশনে চারতলা হাইওয়ে পুলিশ থানার বর্গফুটপ্রতি নির্মাণ খরচ ৪ হাজার ২৩৬ টাকা। এ নির্মাণব্যয় অনেক বেশি। ব্যয় কমাতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়