শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগ থেকে তো প্রচুর যোগাযোগ হচ্ছেই, আমাকে বলে দলের হাল ধরতে: তাজউদ্দীন আহমদের বড় মেয়ে ◈ এপস্টাইন কী ভাবে ‘শিকার’ ধরতেন? কী করতেন প্রেমিকা? আমেরিকা থেকে স্মৃতিচারণ ভুক্তভোগীর, চ‌লে আস‌লো ট্রাম্পের নাম  ◈ শয়ে শয়ে মুসলমানকে বেআইনিভাবে বাংলাদেশে তাড়াচ্ছে ভারত: হিউমান রাইটস ওয়াচ এর প্রতি‌বেদন ◈ নিম্নচাপ ও অমাবস্যার জোড়া প্রভাবে উপকূল প্লাবিত, দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে ◈ শর্ট বল খেলতে না পারলে টেস্ট খেলার দরকার কী? : সু‌নিল গাভাস্কার ◈ ভারতের ফুটবল কোচ হতে চান জাভি হার্না‌ন্দেজ, আবেদনে সারা দেয়নি ফেডারেশন ◈ এন‌সি‌পি কী আওয়ামী লীগ বিরোধিতাকে পুঁজি করে রাজনীতি করতে চায়? ◈ দশম গ্রেডে প্রধান শিক্ষকদের বেতন কার্যকরে প্রস্তুত সরকার, সহকারী শিক্ষকরা চায় ১১তম গ্রেড ◈ বাংলাদেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ ◈ কী ঘটেছিল? কেন নিষেধাজ্ঞায় পড়তেই হলো লিওনেল মেসি ও জর্দি আলবাকে?

প্রকাশিত : ২৫ জুলাই, ২০২৫, ০৩:২৩ দুপুর
আপডেট : ২৬ জুলাই, ২০২৫, ১১:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গণভবন হবে জাদুঘর, হেয়ার রোডে প্রধানমন্ত্রীর নতুন বাসভবনের প্রস্তাব, নতুন মন্ত্রীদের জন্য খোঁজা হচ্ছে আবাসন

নির্বাচিত নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রীরা কোথায় থাকবেন, সে বিষয়ে সুপারিশ করতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ৭ জুলাই উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি করেছিল। ছয় সদস্যের এই কমিটির প্রধান ছিলেন একজন অতিরিক্ত সচিব। এই কমিটি রাজধানীর বেশ কিছু এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন শেষে ২০ জুলাই মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

আগামী জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঘোষণা করা না হলেও নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীদের জন্য রাজধানীতে বাসা খোঁজার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের জন্য হেয়ার রোডকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সূত্র: প্রথম আলো

কমিটির একজন সদস্য বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। নির্বাচনের পর নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা কোথায় থাকবেন, সেটি নির্ধারণের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এর কারণ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা তিন মেয়াদে গণভবনে থেকেছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর গণভবনকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ করার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। সেখানে এখন জাদুঘর নির্মাণকাজ চলছে। আগামী ৫ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে এই জাদুঘর উদ্বোধন করা হবে।

এর ফলে ভবিষ্যতে কোনো সরকারপ্রধান বা প্রধানমন্ত্রীর আর গণভবনে থাকার সুযোগ নেই।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা এবং হেয়ার রোডের ২৪ ও ২৫ নম্বর বাংলো বাড়িকে সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে নতুন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের জন্য বিবেচনা করা যেতে পারে। যমুনা এখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

গণপূর্ত গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩০ হেয়ার রোডে অবস্থিত যমুনার আয়তন প্রায় সোয়া তিন একর (৫০২ কাঠার মতো)। যমুনার পাশের ২৪ ও ২৫ নম্বর—এই দুটি বাংলো বাড়ি এখন প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তায় নিয়োজিত একটি বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা থাকছেন।

নতুন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের জন্য আরেকটি জায়গা নিয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা আছে। গণভবনের পেছনে যেখানে আগে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা হতো, শেরেবাংলা নগরের সেই জায়গাকেও বিবেচনা করা হচ্ছে। বাণিজ্য মেলা পূর্বাচলে চলে যাওয়ার পর থেকে জায়গাটি এখন খালি পড়ে আছে। এই খালি জায়গা সরেজমিন পরিদর্শন করেছে মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি। তবে কমিটি তাদের প্রতিবেদনে এই জায়গায় নতুন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন করার বিষয়ে কোনো সুপারিশ করেনি।

এ বিষয়ে কমিটির একাধিক সদস্য বলেন, শেরেবাংলা নগর এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন করতে গেলে দুটি জটিলতা তৈরি হবে। প্রথমত সংসদ ভবনসংলগ্ন ওই এলাকা মার্কিন স্থপতি লুই আই কানের নকশার আলোকে গড়ে উঠেছে। তাই সেখানে নতুন করে বড় কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা ঠিক হবে না। আবার সেখানে নতুন নকশা করে স্থাপনা করার বিষয়টি বেশ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হবে। সব দিক বিবেচনা করে হেয়ার রোডে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা ও এর আশপাশ মিলে নতুন সরকারপ্রধানের বাসভবন ঠিক করাই উপযুক্ত হবে।

মন্ত্রীদের জন্য কেন নতুন বাসা খুঁজতে হচ্ছে?
রাজধানীর মিন্টো রোড ও হেয়ার রোডে মন্ত্রীদের জন্য বাংলো বাড়ি আছে ১৫টি। এ ছাড়া বেইলি রোডে ‘মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্ট’ নামে তিনটি ভবন রয়েছে। সেখানে ৩০ জন মন্ত্রীর থাকার ব্যবস্থা (ফ্ল্যাট) আছে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন প্রায় ৫ হাজার বর্গফুট। এ ছাড়া গুলশানের একটি সরকারি বাংলো বাড়িতে বিভিন্ন সময় কোনো না কোনো মন্ত্রী থেকেছেন। সে হিসাবে ৪৬ জন মন্ত্রীর থাকার ব্যবস্থা আছে। এরপরও নতুন সরকারের মন্ত্রীদের জন্য কেন বাড়ি খুঁজতে হচ্ছে, সে প্রশ্ন উঠেছে।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত ৩০টি ফ্ল্যাটের মধ্যে এখন ১২টিতে থাকছেন সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিরা। বাকি ১৮টির মধ্যে ১৪টিতে থাকছেন দুজন উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার চারজন বিশেষ সহকারী, চারজন নির্বাচন কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশনের দুজন কমিশনারসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ে কর্মকর্তারা।

যদিও বিচারপতি ও আমলাদের জন্য নির্ধারিত ফ্ল্যাট আছে। সেগুলোর অনেকগুলো খালি পড়ে আছে। ‘মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্ট’-এ বিচারপতিসহ উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের থাকার বিষয়টি বেআইনি নয় বলে জানিয়েছে সরকারি আবাসন পরিদপ্তর। কিন্তু সাবেক একজন বিচারপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, বিচারপতিরা মন্ত্রীদের (এখন উপদেষ্টা) সঙ্গে একই ভবনে, একই কমপ্লেক্সে থাকবেন, এটা অনৈতিক।

রাজধানীর কাকরাইলে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের জন্য ২০ তলা আবাসিক ভবন রয়েছে। দেড় একর জায়গার ওপর নির্মিত ওই ভবনে মোট ৭৬টি ফ্ল্যাট রয়েছে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন সাড়ে তিন হাজার বর্গফুট। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সেখানে ২৪টি ফ্ল্যাট এখনো খালি।

অন্যদিকে ইস্কাটন রোডে সচিবদের জন্য বহুতল ভবন ও ফ্ল্যাট রয়েছে। সেখানেও খালি ফ্ল্যাট রয়েছে। এরপরও সচিব পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা কেন মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্টে থাকছেন, তা নিয়েও কথা উঠেছে।

মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্টের প্রতিটি ফ্ল্যাটে রয়েছে চারটি বড় শয়নকক্ষ বা বেডরুম, একটি বসার ঘর বা ড্রয়িংরুম, একটি অফিস কক্ষ, একটি বিশ্রাম নেওয়ার ঘর বা লিভিং রুম, একটি খাবার ঘর, একটি রান্নাঘর ও ছয়টি শৌচাগার (টয়লেট)। অভ্যর্থনাকক্ষে সার্বক্ষণিক পাহারা দেন পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা পালা করে দায়িত্ব পালন করেন।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, যেহেতু মিনিস্টার্স অ্যাপার্টমেন্ট খালি পড়ে আছে, তাই বিচারপতিসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ে কর্মকর্তাদের সেখানে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নতুন সরকার গঠনের পর এসব ফ্ল্যাট থেকে সাংবিধানিক পদে থাকা ব্যক্তিদের বা সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সরানো বিব্রতকর হবে। সে কারণে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে মন্ত্রীদের জন্য নতুন বাসভবন খোঁজা হচ্ছে।

এখন সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকারের
গণপূর্ত মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, মিন্টো রোডের ৩৩ নম্বর বাংলোবাড়ির আয়তন ৯০ কাঠা, ৩৪ নম্বর বাড়িটির আয়তন ৯৭ কাঠা। আগামী নতুন সরকারের মন্ত্রী ও সমপর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য এই দুটি বাংলোবাড়ি নিয়ে আধুনিক ভবন নির্মাণ করা যেতে পারে।

এখন ৩৩ নম্বর বাংলোবাড়ি বরাদ্দ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেনটেটিভ খলিলুর রহমানের নামে। আর ৩৪ নম্বর বাংলোবাড়ি বরাদ্দ শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারের নামে।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটির একজন সদস্য বলেন, ৩৩ ও ৩৪ নম্বর বাংলোবাড়ি মিলিয়ে ছয়তলা একটি ভবন করা গেলে অন্তত ১২ জন মন্ত্রীর থাকার ব্যবস্থা করা যাবে।

একইভাবে বেইলি রোডের ২০ ও ২১ নম্বর বাংলোবাড়িতে আধুনিক ভবন নির্মাণ করা গেলে সেখানেও ১২ জন মন্ত্রী ও সমপর্যায়ের ব্যক্তিদের থাকার ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন কমিটির ওই সদস্য।

এখন বেইলি রোডের ২০ নম্বর বাংলোবাড়ি বরাদ্দ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যানের নামে। আর ২১ নম্বর বাংলোবাড়ি বরাদ্দ খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের নামে। এই দুটি বাংলোবাড়ির আয়তন ১২১ কাঠা।

মিন্টো রোড ও হেয়ার রোডের বাংলাবাড়িগুলোর রাজনৈতিক এবং ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে। ঐতিহ্যবাহী এসব বাংলোবাড়ি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করা কতোটা যৌক্তিক হবে সে প্রশ্নও উঠেছে। এ বিষয়ে কমিটির একজন সদস্য বলেন, ওই সব জায়গায় নতুন ভবন করতে গেলে বাংলোবাড়ি ভাঙতে হবে। তবে বাংলোবাড়িগুলোর ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে। স্থাপত্য অধিদপ্তর ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নিয়েই সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।

এর বাইরে গুলশান ও ধানমন্ডিতে দুটি পরিত্যক্ত বাড়িতে মন্ত্রী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করেছে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি। এর মধ্যে ধানমন্ডি ২ নম্বর সড়কের ১২০ নম্বর (পুরাতন) বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি। এখানে ২০ কাঠা জায়গা রয়েছে। আর গুলশানের ১১৩ নম্বর সড়কের ২০ নম্বর বাড়িটিও সরকারের পরিত্যক্ত সম্পত্তি। সেখানে ২১ কাঠা জমি রয়েছে। সরকার চাইলে সেখানেও মন্ত্রীদের জন্য বাসভবন করতে পারে বলে কমিটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে।

কমিটির প্রধান ও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফারুক আহম্মেদ ২০ জুলাই মুঠোফোনে বলেন, নির্বাচিত নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের আবাসনের জন্য কী করণীয়, সে বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। এখন সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়