সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তিন ধরনের ব্যক্তিকে পাসপোর্ট দেওয়া বন্ধ করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন বিভাগে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের মূল ভিত্তি মানবতাবিরোধী অপরাধ, পলাতক থাকা ও ফৌজদারি মামলার প্রসঙ্গ।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ব্যক্তি, দেশ-বিদেশে পলাতক থাকা ব্যক্তি এবং ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পাসপোর্ট সুবিধা পাবেন না। গত ৪ মে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভার আলোচনায় বলা হয়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় পতিত সরকারের সহযোগী ও সংশ্লিষ্ট যারা দেশের আইনি ব্যবস্থা এড়িয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ অন্য দেশে পলাতক রয়েছেন, তাদের মধ্যে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত এবং যারা পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করেছেন বা ভবিষ্যতে আবেদন করতে পারেন, তাদের আবেদন মঞ্জুর করা যাবে না। এ ধরনের অনুমোদন দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, আইন শৃঙ্খলা ও ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।
মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের তালিকা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে সংগ্রহ করা হবে, আর দেশ-বিদেশে পলাতক ও ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্তদের নামের তালিকা আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে পাঠিয়ে পাসপোর্ট নবায়ন ও নতুন পাসপোর্ট ইস্যু বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক-২ শাখা ১৫ মে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে পাঠানো চিঠিতে কোর কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পলাতকদের নামের তালিকা দ্রুত প্রেরণের জন্য অনুরোধ করা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, এই সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়িত হবে। বৈঠকে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা হয়েছে। কেউ বলেছেন, আদালতে দোষী প্রমাণিত হলে পাসপোর্ট না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত, আবার কেউ এ বিরোধিতা করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত আদালতে দোষী প্রমাণিত হলে পাসপোর্ট দেওয়া বন্ধ করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকার এর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কী হবে, দেখা যাক।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৩ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠির মাধ্যমে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত হওয়ায় ওই সংসদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, চিফ হুইপ, সংসদ সদস্য, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, উপনেতা ও উপদেষ্টা পদমর্যাদার ব্যক্তিদের দেওয়া কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করা হয়। উৎস: দেশ রুপান্তর।