ইসলামে মৃত্যু-পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। দাফন প্রক্রিয়া বা জানাজা শুধুমাত্র সামাজিক রীতি নয়, বরং এটি সুন্নাহ ও শরিয়তের অংশ।
রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে জানাজায় অংশগ্রহণ করেছেন, কবর খনন করেছেন এবং মাটি দিয়েছেন। তাই মুসলিমদের জন্য এ বিষয়টি জানা ও সঠিকভাবে পালন করা জরুরি।
কবর দেওয়ার নিয়ম
দাফন প্রক্রিয়ার মূলনীতি হলো:
১. মৃতদেহকে গোসল করানো, কাফন দেওয়া ও জানাজা পড়ানো।
২. কবর যথেষ্ট গভীর করা যাতে মৃতদেহ নিরাপদ থাকে।
৩. মৃতদেহকে ডান দিকে কিবলামুখী করে রাখা।
৪. কবর ঢেকে দেওয়া ও মাটি চাপা দেওয়া।
নবীজি (সা.) বলেছেন: “তোমরা মৃতদেহকে সম্মানের সাথে দাফন করো।” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৩২২১)
কবরে মাটি দেওয়ার নিয়ম
কবর ঢাকতে গিয়ে প্রথমে সাধারণত ৩ মুঠো করে মাটি দেওয়া সুন্নাহ। প্রত্যেকে পালাক্রমে মৃতের দিকে মুখ করে কবরের ভেতর প্রথম তিন মুঠো মাটি দেন। প্রতিবার মুঠো খোলার সময় সুরা ত্বাহার ৫৫ নম্বর আয়াতের একটি করে অংশ পড়তে হয়।
*প্রথম মুঠোয় পড়তে হয়: “মিনহা খালাক্না–কুম।” অর্থ: “আমি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি।”
*দ্বিতীয় মুঠোয় পড়তে হয়: “ওয়া ফীহা নু‘ঈদুকুম।” অর্থ: “এবং আমি তোমাদেরকে তাতে ফিরিয়ে দেব।”
*তৃতীয় মুঠোয় পড়তে হয়: “ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তারাতান উখরা।” অর্থ: “এবং সেখান থেকে আবার তোমাদেরকে একবার বের করব।”
এটি রাসুল (সা.) ও সাহাবিদের আমল। (তাফসির ইবন কাসির, সুরা ত্বাহা. আয়াত ৫৫ এর ব্যাখ্যা)
দাফনের পর দোয়া
দাফন শেষে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা সুন্নাহ। নবীজি প্রতিবার দাফনের পর সাহাবিদের বলতেন: “তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং তার জন্য স্থিরতার দোয়া করো, কারণ এখন তাকে প্রশ্ন করা হচ্ছে।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৩২২১; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৫৩১)
এ সময় সাধারণত বলা হয়:
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মাগ্ফির লাহু, আল্লাহুম্মা সাব্বিতহু, আল্লাহুম্মাজ্‘আল কবরাহু রাওযাতান মিন রিয়াযিল জান্নাহ।”
অর্থ: “হে আল্লাহ, তাকে ক্ষমা করুন, তাকে স্থির রাখুন এবং তার কবরকে জান্নাতের বাগানসমূহের একটি বাগানে পরিণত করুন।”
কবরের মাটি দেওয়ার নিয়ম ও দোয়া ইসলামি শিষ্টাচারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এতে রয়েছে মৃতের প্রতি সম্মান, আখিরাতের স্মরণ এবং জীবিতদের জন্য শিক্ষা। আমাদের উচিত নবীজির (সা.) প্রদর্শিত এ সুন্নাহ যথাযথভাবে পালন করা। উৎস: প্রথম আলো