হরিয়ানার পানিপথের একটি গ্রামে বিয়ের সানাই বাজছিল। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সবে শেষ হতে শুরু করেছে, তখনই বাড়িতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল। বিয়েবাড়িতে শোরগোল পড়ে গেল, ছয় বছর বয়সী এক শিশু নিখোঁজ। মুহূর্তেই উৎসবের পরিবেশ বদলে যায় বিষাদে। দিন শেষে পুলিশ এক নৃশংস হত্যারহস্য উন্মোচন করে, যেখানে মূল অভিযুক্ত ব্যক্তির কার্যকলাপ জার্মান রূপকথা স্নো হোয়াইটের সেই দুষ্ট রানির কথা মনে করিয়ে দেয়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি স্থানীয় পুলিশের বরাতে জানিয়েছে, চার শিশুকে হত্যার দায়ে এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যার পেছনের কারণটি ভয়ংকর। অভিযুক্ত নারী চাননি কেউ তাঁর চেয়ে ‘বেশি সুন্দর’ হোক।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত ওই নারী পুনম তাঁর ভাতিজি বিধিসহ (৬) পরিবারের সবাইকে নিয়ে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে আসেন। সেখানে ভাতিজিকে দেখে পুনমের মনে হয়, সে তাঁর চেয়েও বেশি সুন্দরী। এরপর পুনম তাঁকে পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করেন।
বিধি তার দাদু পাল সিং, দাদি ওমবতী, বাবা সন্দীপ, মা ও ১০ মাসের ছোট ভাইকে নিয়ে পানিপথের ইজরানা এলাকার নৌলথা গ্রামে এক আত্মীয়ের বিয়েতে এসেছিল। গত সোমবার বেলা ১টা ৩০ মিনিটের দিকে বরযাত্রী নৌলথায় পৌঁছালে তার পরিবারও সেখানে যায়। কিছুক্ষণ পরে সন্দীপের ফোনে খবর আসে, বিধি হারিয়ে গেছে। পরিবার তখনই খোঁজাখুঁজি শুরু করে।
প্রায় এক ঘণ্টা পর দাদি ওমবতী বাড়ির প্রথম তলার একটি স্টোররুমে যান। দরজাটি বাইরে থেকে আটকানো ছিল। দরজা খুলে তিনি দেখেন, পানিভর্তি একটি চৌবাচ্চায় শিশুটির মাথা ডুবানো। বিধিকে দ্রুত স্থানীয় এনসি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে সন্দীপ থানায় গিয়ে হত্যা মামলা করেন।
পুলিশ তদন্তে জানতে পারে, শিশু বিধির খুনের পেছনে ছিলেন তার ফুফু পুনম। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের পর উঠে আসে ভয়ংকর তথ্য। তিনি আগে আরও তিনটি শিশুকে একইভাবে পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করেছেন।
পুলিশ বলছে, পুনমের হত্যার ধরন একই—প্রতিবার পানিভর্তি চৌবাচ্চায় শিশুকে ডুবিয়ে মারা। কারণ, সুন্দর শিশুদের প্রতি তাঁর তীব্র ঈর্ষা, বিশেষ করে, ছোট ও সাজগোজ করা মেয়েদের প্রতি।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, পুনম ২০২৩ সালে প্রথম তাঁর ননদের মেয়েকে হত্যা করেন। ওই ঘটনা দেখে ফেলায় একই বছর তিনি নিজের ছেলেকেও হত্যা করেন। চলতি বছরের আগস্টে তিনি সিওয়া গ্রামে আরও একটি মেয়েকে ‘নিজের চেয়ে সুন্দর’ মনে হওয়ায় হত্যা করেন।
বিধির হত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের সময় পুনম সত্য স্বীকার করার আগপর্যন্ত এই শিশুদের মৃত্যুগুলো দুর্ঘটনাজনিত বলেই ধরে নেওয়া হয়েছিল।