আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে হতাহতের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই চলেছে। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) এক ত্রাণ সংস্থা জানায়, এখন পর্যন্ত এক হাজার ১০০ জনের বেশি নিহত এবং তিন হাজারের বেশি মানুষ আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
আফগান রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানায়, এখন পর্যন্ত অন্তত এক হাজার ১২৪ জন মানুষের প্রাণহানি নিশ্চিত করা গেছে। এছাড়া, আহত হয়েছেন তিন হাজার ২৫১ জন। ছয় মাত্রার ওই ভূমিকম্পে আট হাজারের বেশি বাড়ি ধসে গেছে।
ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থল হিন্দুকুশ পর্বতমালা অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় আফগানিস্তান অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। রবিবার গভীর রাতে দেশটির পূর্বাঞ্চলে ছয় মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর উৎপত্তিস্থল ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কুনার ও নানগারহার প্রদেশ।
দেশটির পাহাড়ি অঞ্চলে যাতায়াত কষ্টসাধ্য হওয়ায় উদ্ধারকাজে ব্যাঘাত ঘটছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। উদ্ধারকর্মীরা বলেছেন, ধ্বংসস্তুপের নিচে আরও অনেক মানুষ চাপা পড়ে থাকতে পারেন। সেক্ষেত্রে হতাহতের সংখ্যা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আফগানিস্তানে দায়িত্বরত জাতিসংঘের কর্মকর্তারা।
এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলোর দুর্গম অবস্থান, রাস্তাঘাটের ক্ষতি এবং পরাঘাতের কারণে ত্রাণ সরবরাহে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। সংস্থাটির তথ্যমতে, ভূমিকম্পে অন্তত ১২ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কুনার প্রদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান ইহসানুল্লাহ ইহসান জানিয়েছেন, সোমবার কুনারের চারটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামে উদ্ধারকাজ চালানো হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে পাহাড়ি দুর্গম এলাকাগুলোতে অভিযান চালানো হবে।
তিনি বলেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও আটকে থাকা মানুষের সংখ্যা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। আমাদের লক্ষ্য যত দ্রুত সম্ভব উদ্ধার অভিযান সম্পন্ন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর কাছে সহায়তা পৌঁছে দেওয়া।
পাকিস্তান সীমান্তবর্তী দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় কাদামাটি দিয়ে তৈরি শত শত ঘরবাড়ি ধসে পড়ায় সেখানকার সরু রাস্তা দিয়ে যান চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ইহসান জানান, রাস্তা পরিষ্কার করতে ভারী যন্ত্রপাতি আনা হচ্ছে।
রয়টার্স প্রতিনিধিকে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, মঙ্গলবার কুনারের গ্রামগুলোতে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স যাওয়ার চেষ্টা করছিল। পাশাপাশি, আহতদের হাসপাতালে নেওয়া এবং ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার জন্য হেলিকপ্টারও ব্যবহার করা হয়।
কয়েকজন আহত ব্যক্তিকে কাবুল এবং পার্শ্ববর্তী নানগারহার প্রদেশে স্থানান্তর করা হয়েছে। ইউনিসেফ মঙ্গলবার সতর্ক করেছে যে, হাজার হাজার শিশু ঝুঁকির মুখে রয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টায় তারা ওষুধ, উষ্ণ পোশাক, তাঁবু, ত্রিপল এবং স্বাস্থ্যবিধি সামগ্রী যেমন সাবান, জীবাণুনাশক, তোয়ালে, স্যানিটারি প্যাড এবং পানির বালতি সরবরাহ করছে। এছাড়া, দূষণ থেকে পানির উৎস রক্ষা করতে মৃতদেহ দ্রুত সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানায় জাতিসংঘ।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত ও সহায়তার জন্য তালেবান সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।