ইকোনমিক টাইমসের রিপোর্ট: ভারতের তিরুপুর, নয়ডা ও সুরাতের টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট রপ্তানিকারকরা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য চলমান অর্ডারগুলোর উৎপাদন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রপ্তানিকারকরা বলছেন, শুল্কবৃদ্ধির ফলে অস্থিরতা বহুগুণ বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশ করার পর এমন প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ইকোনমিক টাইমস।
এতে আরও বলা হয়, নতুন শুল্ক হার ভারতের টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট খাতকে প্রতিযোগিতার দিক থেকে পিছিয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার তুলনায় ভারত অনেক পিছিয়ে পড়ছে। এসব দেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক অনেক কম। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে এই খাতের ওপর শুল্ক হার হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য শতকরা ২০ ভাগ। ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়ার জন্য ১৯ ভাগ। ভিয়েতনামের জন্য ২০ ভাগ। আর এখন ভারতের জন্য তা বেড়ে হয়েছে ৫০ ভাগ।
তিরুপুর এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান এ. সাকথিভেল বলেন, ভারতীয় রপ্তানিকারকরা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অর্ডার তৈরির কাজ আপাতত বন্ধ রাখছেন। এই শুল্কবৃদ্ধির ফলে আগামী ৩০-৪০ দিন টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট রপ্তানি মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোনও ইতিবাচক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি হয়, ততক্ষণ এ অবস্থা বিরাজ করবে।
কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির (সিআইটিআই) সাবেক সভাপতি সঞ্জয় জৈন বলেন, এই মুহূর্তে রপ্তানির জন্য পর্দা নেমে গেছে। নতুন অর্ডার আসবে না। পুরনো অর্ডারগুলো ক্ষতি জেনেই পাঠাতে হবে। ফলে শ্রমনির্ভর খাত যেমন টেক্সটাইল ও লেদার সেক্টরে ব্যাপক বেকারত্ব দেখা যাবে।
চীন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট রপ্তানিকারক দেশ। এর পরেই আছে ভিয়েতনাম, ভারত ও বাংলাদেশ। সিআইটিআইয়ের চেয়ারম্যান রাকেশ মেহরা বলেন, শুল্ক দ্বিগুণ হওয়া ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য বিরাট ধাক্কা। আমরা যে প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম তা আরও জটিল হয়ে গেছে। অন্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার ক্ষমতা মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র হল ভারতের গার্মেন্ট ও টেক্সটাইল রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার।
সিআইটিআই জানায়, জুন মাসে ভারতের টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট রপ্তানি পরপর তৃতীয় মাসের মতো কমেছে, যদিও বার্ষিক ভিত্তিতে তা ৩.৩ ভাগ বেড়েছে। এটি একটি স্পষ্ট বিপরীত চিত্র। কারণ ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে ভারতের টেক্সটাইল ও গার্মেন্ট রপ্তানি ১৫-২৫ ভাগ পর্যন্ত বার্ষিক বৃদ্ধির হার দেখিয়েছিল। তবে এপ্রিলে শুল্ক আরোপের ঘোষণা আসার পর থেকেই রপ্তানি কমতে শুরু করে। অন্যদিকে, একই সময়ে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশে বিপরীত চিত্র দেখা গেছে। ভিয়েতনামে জুনে ২৬.২ ভাগ বার্ষিক বৃদ্ধির হার দেখা গেছে। বাংলাদেশে ৪৪.৬ ভাগ বৃদ্ধি হয়েছে। এই পার্থক্য ভারতের জন্য আরেকটি বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনুবাদ: মানবজমিন