পার্সটুডে: গাজায় গণহত্যা অব্যাহত রয়েছে। এবার ইহুদিবাদীরা তাদের বোমার সাহায্যে এই ট্র্যাজেডি সম্পন্ন করার জন্য অনাহার নামক একটি অস্ত্র ব্যবহার করছে।
গাজায় ক্ষুধা চরমে পৌঁছেছে, মানুষ খাদ্যের তীব্র সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে, অবশ্যই শিশুরা এর প্রধান শিকারৃে পরিণত হয়েছে। চরম দুর্বলতা থেকে অজ্ঞান হয়ে গাজার রাস্তায় পড়ে থাকা একটি সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে,এবং সবাই খাওয়ার জন্য এক টুকরো কিছু খুঁজছে। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা যখন খাবার খুঁজতে যায় তখন হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া ছাড়া তাদের ভাগ্যে কিছুই জোটছে না। বুধবার জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস ঘোষণা করেছে যে গত মে মাস থেকে গাজায় খাবার গ্রহণের সময় দখলদার বাহিনীর হাতে এক হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন যাদের বেশিরভাগই ইসরায়েলি সরকার সমর্থিত আমেরিকান সাহায্য বিতরণ কেন্দ্রের কাছে। এই অপরাধের মধ্যে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদের দ্বারা গাজার ক্ষুধার্ত মানুষের কঠিন পরিস্থিতির বর্ণনা এই উপত্যকায় গণহত্যার ইন্ধন জোগানোর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলি প্রচেষ্টার আরেকটি নমুনা। এই বিষয়ে ইরনার বরাত দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, একজন মার্কিন নিরাপত্তা কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন যে মার্কিন সৈন্যরা গাজার সাহায্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্যবস্তু করেছিল।
ওই ব্যক্তি যার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি, তিনি বলেছেন যে মার্কিন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে সাহায্য চাইতে আসা ফিলিস্তিনিদের গুলি করে এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছিলেন। ইসরায়েলি চ্যানেল ১২-এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে,আমেরিকান সৈন্য বলেছেন যে ত্রাণ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা গাজার বাসিন্দাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন এবং তাদের ঝুঁকিতে ফেলেন।
২৫ বছর ধরে মার্কিন সেনাবাহিনীতে কর্মরত তিনি আরও বলেন যে তিনি নিজের চোখে মার্কিন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মাটি থেকে খাবার সংগ্রহকারী একজন ফিলিস্তিনিকে মরিচ স্প্রে করতে দেখেছেন,যদিও ফিলিস্তিনি মার্কিন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জন্য কোনও হুমকি ছিলেন না।
মার্কিন নিরাপত্তা কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, অন্য একটি ঘটনায়, একটি স্টান গ্রেনেড সরাসরি একজন ফিলিস্তিনি মহিলাকে আঘাত করে যার ফলে তিনি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যান।
মৃত্যু অঞ্চলে খাবারের সন্ধানে
এদিকে, ক্ষুধার রাজনীতি প্রকাশের অভিযানের একজন কর্মী "মোহাম্মদ আল-সিকলি" আল-আলম নিউজ নেটওয়ার্কের প্রতিবেদককে বলেছেন: একবিংশ শতাব্দীতে, গাজায় যে ক্ষুধা গ্রাস করেছে তাতে আমরা অবাক। তীব্র ক্ষুধা এক অভূতপূর্ব পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং এই দুর্ভিক্ষের ফলে কয়েক ডজন মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। গাজার মানুষ, যার মধ্যে নারী, বৃদ্ধ এবং শিশু রয়েছে, খাদ্যের অভাবে রাস্তায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে এবং শিশু, মহিলা এবং বৃদ্ধদের মধ্যে তীব্র অপুষ্টি দেখা দিচ্ছে। ক্ষুধার কারণে শিশুরা ঘুমাতে পারছে না এবং বৃদ্ধ এবং তরুণরা বাজারে মারা যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, "মানুষকে এমন এলাকায় যেতে বাধ্য করা হচ্ছে যেখানে ইহুদিবাদী সামরিক বাহিনী খাবার পেতে মোতায়েন রয়েছে তাই সর্বোত্তম পরিস্থিতিতে তারা শহীদ হন অথবা আহত হন।"
ঘাস থেকে রুটি এবং পশুখাদ্য
গাজায় আল জাজিরার সংবাদদাতা তারিক আবু আসসুম আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী যিনি বলেছেন যে মায়েরা তাদের বাচ্চাদের জন্য রুটির মতো কিছু তৈরি করার জন্য শুকনো শস্য, পশুখাদ্য এবং এমনকি ঘাস পিষে নিচ্ছেন; এগুলি এমন চিত্র যা একটি নীরব কিন্তু মারাত্মক বিপর্যয়ের কথা বলে। তিনি আরও বলেন, আমি মায়েদের তাদের বাচ্চাদের জন্য রুটি তৈরির জন্য শিম এবং পশুখাদ্য পিষতে দেখেছি। গাজার বাসিন্দারা বলছেন যে যা ঘটছে তা কেবল একটি মানবিক সংকট নয়, বরং এই অঞ্চলের মানুষকে অনাহারে রাখার জন্য ইসরায়েলের সামরিক নীতির সরাসরি ফলাফল।
গাজায় মানুষকে শিকার
গাজার মেয়র ফার্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আরো বলেন: ইসরায়েলি বাহিনী গাজার ক্ষুধার্ত মানুষকে খাবারের জন্য কিলোমিটার দূরে হেঁটে যেতে বাধ্য করছে; কিন্তু খাবারের পরিবর্তে,তাদের ইসরায়েলি গুলি করা হচ্ছে। এটি এখন কেবল অবরোধ নয়; এটি একটি মানুষকে শিকার করার কেন্দ্র পরিণত হয়েছে।
শরীরে কেবল "চামড়া ও হাড়" দৃশ্যমান
খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের একজন ব্রিটিশ স্বেচ্ছাসেবক সার্জন ড. নিক মেইনার্ড আরও বলেন, 'গাজার মানুষের,বিশেষ করে শিশুদের পরিস্থিতি খুবই অমানবিক এবং বিপর্যয়কর। ক্ষুধার কারণে এই এলাকার শিশুরা তাদের বয়সের তুলনায় অনেক ছোট দেখায়; এমনকি তারা কেবল 'চামড়া ও হাড়' বলেও বলা বর্তমান পরিস্থিতির সঠিক বর্ণনা নয়।