শিরোনাম

প্রকাশিত : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২:৪৬ দুপুর
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৪:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পেটের নীচের অংশে চুলকানি: কেন হয়, কমানোর উপায় কী?

দেহের অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি অংশ কুঁচকি। সাধারণত এই স্থানটি আর্দ্র থাকে এবং ত্বকের সঙ্গে ঘন ঘন ঘর্ষণ হয়। কুঁচকিতে র‍্যাশ, চুলকানির মতো সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। তবে লজ্জায় এড়িয়ে যান। বিষয়টিকে না এড়িয়ে সমাধানের চেষ্টা করা জরুরি। 

কুঁচকি কী? 
কুঁচকি (Groin) হলো মানুষের শরীরের ধড় ও উরুর সংযোগস্থলের একটি অংশ। এটি পিউবিক টিউবারকলের উভয়পাশে পেটের প্রাচীরের নীচের অংশ ও উরুর মিলিত স্থানে একটি ভাঁজ বা ক্রিজ তৈরি করে। কুঁচকিতে টান বা হার্নিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

কুঁচকিতে র‌্যাশ ও চুলকানি হওয়ার কারণ: 
বিভিন্ন কারণে শরীরের এই অংশটিতে চুলকানি হতে পারে। দেখা দিতে পারে ফুসকুড়ি। সম্ভাব্য কিছু কারণ চলুন জানা যাক- 

ছত্রাক সংক্রমণ: কুঁচকিতে চুলকানি হওয়ার পেছনে দায়ী থাকতে পারে জক ইচ (Tinea cruris) নামের একটি সাধারণ ছত্রাক। এর সংক্রমণে কুঁচকিতে চুলকানি সৃষ্টি হয়। 
 
একজিমা: এটি একটি ত্বকের প্রদাহ যা চুলকানি এবং ফুসকুড়ি সৃষ্টি করতে পারে।

সুগন্ধি পণ্য: লোশন বা সাবানে ব্যবহৃত সুগন্ধি র‌্যাশ তৈরি অন্যতম কারণ। এসব পণ্যে থাকে কড়া রাসায়নিক উপাদান বা সুগন্ধি যা ত্বকের সংবেদনশীল অংশে জ্বালা সৃষ্টি করে। ফলে লালচেভাব, চুলকানি ও ফুসকুড়ি দেখা দেয়।

ঘর্ষণ: ঘর্ষণের কারণেও উরুর ভেতরের অংশে অর্থাৎ কুঁচকিতে র‌্যাশ দেখা দেয়। বিশেষ করে যারা আঁটসাঁট পোশাক পরেন কিংবা ঘন ঘন চলাফেরা করেন তাদের এ সমস্যা বেশি হয়। আর্দ্রতা যেমন- ঘাম এই পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে নিয়ে যায়। এতে ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ বাড়ে।

সংবেদনশীল ত্বক: সংবেদনশীলতার কারণেও কুঁচকিতে র‌্যাশ দেখা দেয়। বিশেষ করে আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। তাপমাত্রার ওঠানামা ও আর্দ্রতা ত্বকের সুরক্ষা স্তরে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে ত্বকে জ্বালা সৃষ্টি হয়। যাদের ত্বক সংবেদনশীল তারা সাধারণত গরম অথবা আর্দ্র আবহাওয়াতে ঘনঘন র‌্যাশের সমস্যায় ভোগেন।

অপরিষ্কার রেজর ব্যবহার: অপরিষ্কার রেজর দিয়ে দেহের অবাঞ্ছিত লোম অপসারণ করলে ত্বকে ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য অণুজীবের সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়। ফলে ত্বকে ছোট ছোট ‘বাম্প’ বা রক্তস্ফোট দেখা দেয়। কুঁচকিতে চুলকানির কারণ হতে পারে এটি। 

আঁটসাঁট পোশাক: আঁটসাঁট পোশাক পরলে ত্বকে ঘর্ষণের সৃষ্টি হয়। এটি আর্দ্রতা ধরে রাখে। ফলে অণুজীবের বিস্তার ঘটে এবং জ্বালা ও র‌্যাশ দেখা দেয়। সিন্থেটিক তন্তু যেমন- পলেস্টার বা নাইলনের কাপড় ব্যবহারে ত্বকে আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে না। ফলে সমস্যার তীব্রতা বাড়ে।

কুঁচকিতে চুলকানি থেকে রক্ষা পাওয়ার ঘরোয়া উপায়
কিছু ঘরোয়া উপাদান কুঁচকির চুলকানি কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। চলুন এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই- 

অ্যালোভেরা জেল: ব্যাকটেরিয়া ও প্রদাহনাশক উপাদান সমৃদ্ধ অ্যালোভেরা জেল চুলকানি ও যন্ত্রণা কমিয়ে আরাম প্রদানে সাহায্য করে। অ্যালোভেরা জেল মাখলে ত্বকে স্বস্তি মেলে। দ্রুত সমাধান পাওয়া যায়। 

নারিকেল তেল: এই তেলে আছে অ্যান্টিসেপ্টিক এবং আর্দ্রতা রক্ষাকারী উপাদান। এটি ত্বকের জ্বালা ও অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে। আক্রান্ত স্থানে আলতোভাবে অল্প পরিমাণে নারিকেল তেল মালিশ করে নিন। আরাম পাবেন। 

বেকিং সোডা: পরিমাণমতো বেকিং সোডা আর পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। আক্রান্ত স্থানে এই পেস্ট লাগান এবং কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন। বেকিং সোডায় আছে ব্যাকটেরিয়া-নাশক উপাদান যা ত্বকের চুলকানি ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

টি ট্রি অয়েল: ত্বকের প্রদাহ কমাতে ভরসা রাখতে পারেন অ্যাসেনসিয়াল অয়েলে। টি ট্রি অয়েলের সঙ্গে মিশিয়ে নিন নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল। এই মিশ্রণ চুলকানি হওয়া স্থানে লাগান। এই তেলে আছে ব্যাকটেরিয়া-নাশক উপাদান যা ত্বকের জ্বালা ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

আরও কিছু উপায়: 
বরফের প্যাকেট তোয়ালে দিয়ে পেঁচিয়ে আক্রান্ত স্থানে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ঠান্ডা সেঁক দিন। এতে চুলকানি ও অস্বস্তি হ্রাস পাবে। 

পর্যাপ্ত পানি পান করুন। এতে ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা পাবে, কমবে চুলকানি। 

মাইল্ড সাবান দিয়ে আক্রান্তস্থান নিয়মিত পরিষ্কার করে তোয়ালে দিয়ে আলতোভাবে মুছে ফেলুন। 

ঢিলেঢালা ও বায়ু চলাচল করে এমন কাপড়, যেমন- সুতির পোশাক পরুন। এতে জ্বালা ও চুলকানি কম হবে। 

গোসলের পরে ট্যালকম পাউডার ব্যবহার বা কর্নস্টার্চ ব্যবহারে বাড়তি আর্দ্রতা শোষণ করে এবং ঘর্ষণের পরিমাণ কমাতে পারে।

‘অ্যান্টিফাঙ্গাল’ বা ‘হাইড্রোকর্টিজন’ ক্রিম ব্যবহারে চুলকানি কমতে পারে। তবে কোন ক্রিম ব্যবহার করবেন তা চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিন। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়