চলতি মৌসুমে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, করোনা বা সাধারণ ভাইরাস জ্বরে অনেকেই ভুগছেন। জ্বরের সময় শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং খাবারের প্রতি তীব্র অনীহা তৈরি হয়। বিশেষ করে শিশুদের কিছুই খেতে না চাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। জ্বর সেরে গেলেও মুখের তেতো ভাব সহজে কাটে না।
অসুস্থ শরীরকে দ্রুত সারিয়ে তুলতে এবং হারানো শক্তি ফিরে পেতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত জরুরি। এই সময়ে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ক্যালরির প্রয়োজন হয়। মুখের রুচি ফিরিয়ে আনতে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করতে নিচের পরামর্শগুলো অনুসরণ করতে পারেন।
অল্প পরিমাণে বারবার খান: একবারে বেশি না খেয়ে খাবারকে কয়েকটি ছোট ভাগে ভাগ করে নিন। দুই থেকে তিন ঘণ্টা পরপর অল্প পরিমাণে খান।
সঠিক সময়ে পানি পান: খাওয়ার আগে বা মাঝখানে বেশি পানি পান করলে পেট ভরে যায় এবং খাওয়ার ইচ্ছা কমে। তাই খাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট পর পানি পান করুন।
সহজপাচ্য খাবার বেছে নিন: তেলে ভাজা, অতিরিক্ত মসলাযুক্ত ও গুরুপাক খাবার এড়িয়ে চলুন। এর বদলে সেদ্ধ বা কম তেলে রান্না করা সহজপাচ্য খাবার খান।
কার্যকরী পানীয় স্যুপ: মুখের রুচি বাড়াতে স্যুপ দারুণ কার্যকর। লেমন করিয়্যান্ডার, টমেটো, সবজি বা চিকেন স্যুপ খেতে পারেন। বিশেষ করে চিকেন স্যুপে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে শরীরকে ভেতর থেকে শক্তি জোগায়।
ভিটামিন সি-যুক্ত খাবার: ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মুখের তেতো ভাব কাটাতে সাহায্য করে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় লেবু, আমড়া, আমলকী, কমলা, মাল্টা, আনারস, ব্রকলি বা টমেটোর মতো খাবার রাখুন।
জিংক সমৃদ্ধ খাবার: জিঙ্কের অভাবেও খাবারে অরুচি দেখা দেয়। ডিম, দুধ, পনির, বাদাম, মাশরুম, পালংশাক ইত্যাদি জিংকযুক্ত খাবার রুচি বাড়াতে সাহায্য করে।
ডাবের পানি: জ্বরের সময় কচি ডাবের পানি খুবই উপকারী। এটি শরীরে গ্লুকোজ ও প্রয়োজনীয় ইলেকট্রোলাইটের জোগান দেয়।
সামুদ্রিক মাছ: এতে রয়েছে প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন ডি, যা প্রদাহ কমিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার: দুধ খেতে না পারলে দই, পনির, মিল্কশেক বা আইসক্রিম খেতে পারেন। এগুলো শক্তি জোগানোর পাশাপাশি রুচিও বাড়াতে পারে।
আদা ও রসুন: খাওয়ার আগে এক টুকরো আদা চিবিয়ে নিলে রুচি বাড়ে। এছাড়া স্যুপ বা ঝোলে রসুন যোগ করতে পারেন। রসুনের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
লেবু ও পুদিনা পাতা: প্রতিবেলার খাবারের সঙ্গে লেবুর রস বা টমেটোর চাটনি রাখতে পারেন। মুখে এক-দুটি পুদিনা পাতা রাখলে তেতো ভাব অনেকটাই কেটে যায়।
মধু: মধুর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে এবং এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। বিশেষ করে শিশুদের কাশির সমস্যায় মধু বেশ উপকারী।
লবণ-পানির কুলকুচি: হালকা গরম পানিতে সামান্য লবণ মিশিয়ে দিনে ২-৩ বার কুলকুচি করলে মুখের বিস্বাদ ভাব দূর হয় এবং গলাব্যথাও কমে।
অনেক সময় শরীরে জিংক বা ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন) এর অভাব হলে ক্ষুধা কমে যায়। যদি দীর্ঘ দিন যাবৎ অরুচি ভাব না কাটে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মাছের তেল, জিংক বা ভিটামিনের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে।
সূত্র: বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিষয়ক জার্নাল ও পুষ্টিবিদদের পরামর্শ অবলম্বনে।