জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। এ আর ধ্রুব নামের ওই শিক্ষার্থী রসায়ন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের (১৬ ব্যাচ)। তার বাড়ি রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দিতে।
গতকাল শুক্রবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টের মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার বিষয়টি জানান ওই শিক্ষার্থী। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর এখন তার নাম আব্দুর রহমান ধ্রুব। তিনি ঢাকা দায়রা জজ থেকে হলফনামার মাধ্যমে তার নাম পরিবর্তন করেছেন।
হলফনামাতে তিনি ঘোষণা করেছেন ‘আমি জন্মসূত্রে বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক এবং আমি আইনত যে কোনো হলফ করার উপযুক্ত বটে। আমি একজন প্রাপ্ত বয়স্ক। আমি আমার বর্তমান ও ভবিষ্যত জীবনের যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম ও ক্ষমতাবান।আমি জাতীতে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলাম। যদিও হিন্দু গোত্রে আমার জন্ম হয়েছে, কিন্তু আমি স্কুলে অধ্যায়ণকাল থেকেই আমার হিন্দু ধর্মের প্রতি অনীহা সৃষ্টি হয় এবং ইসলাম ধর্মের প্রতি আনুগত্য ও বিশ্বাস সৃষ্টি হয়।
আমি হিন্দু পরিবারের সন্তান হইয়াও আমার অনেক মুসলমান বন্ধু-বান্ধবের সহিত অধিক উঠা বসা এবং চলাফেরা ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অব্যাহত যাতায়াত চলতে থাকে। বিধায় হিন্দু ধর্মের সাথে আমার কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়। হিন্দু ধর্মের নিয়মকানুন আমার ভালো লাগে না। আমি ইসলামী বই-পুস্তক ও হিন্দু ধর্মাবলীর বই-পুস্তক পড়ে অনেক ভেবে চিন্তে দেখেছি যে, ইসলাম ধর্ম হলো একটি পূর্ণাঙ্গ ইহকাল ও পরকালের ধর্ম। ইসলাম ধর্মের মধ্যে পার্থিব শান্তি ও কল্যাণ রয়েছে।’
ধ্রুব নিজের দীর্ঘ আত্মঅনুসন্ধান ও মানসিক সংগ্রামের কথা শেয়ার করে জানান, তিনি ঢাকা দায়রা জজ আদালত থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ২৩ তারিখে ইসলাম গ্রহণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। তার এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সংবিধানসম্মত অধিকার বলেও তিনি জানিয়েছেন।
সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা সত্য খুঁজছেন, আমি শুধু বলব-একবার কুরআন পড়ুন খোলা মন নিয়ে। সত্য চাইলে, নিশ্চয়ই আল্লাহ পথ দেখাবেন। আমি সেই পথেই শান্তি পেয়েছি।’
ধ্রুব জানান, বহুদিন ধরে তিনি মানসিক বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন এবং জীবনের নানা সংকটে পড়েছিলেন। সেই সময়গুলোতে তিনি একাধিকবার জীবনের আশা হারিয়ে ফেললেও প্রতিবারই এক অদৃশ্য শক্তি তাকে রক্ষা করেছে। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি ধর্ম ও সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে প্রশ্ন করতে শুরু করেন, যার উত্তর তিনি খুঁজে পান ইসলাম ধর্মে।
তিনি বলেন, ‘আমি একসময় বহু দেব-দেবীতে বিশ্বাস করতাম, কিন্তু গভীরভাবে শান্তি খুঁজে পাইনি। কুরআন পড়েই আমি প্রথম সেই প্রশ্নগুলোর জবাব পেয়েছি-কেন জন্মেছি, জীবনের উদ্দেশ্য কী?’
নিজের পরিবার ও পরিচিতজনদের উদ্দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা পোস্টটিতে ধ্রুব বলেন, ‘আমি জানি, সবাই এই সিদ্ধান্ত সহজভাবে নেবে না। তবে আমি চাই, আপনারা অন্তত একবার কুরআন পড়ুন-তর্কের জন্য নয়, সত্য জানার জন্য।’