মহসিন কবির: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চায় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এজন্য তারা সময়ও বেধে নিয়েছেন। সুস্থ রাজনীতি চর্চার লক্ষ্যে দ্রুত নির্বাচন চান শিক্ষার্থীরা।
আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ অথবা ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে ঐক্যমতে পৌঁছেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ ক্রিয়াশীল ৩০ টি ছাত্র সংগঠন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই শিক্ষার্থীরা এ দাবি জানিয়ে আসছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে প্রশাসন। ছাত্রদল ছাড়া অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোও ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের বিষয়ে ঐক্যে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে।
দীর্ঘ ২৮ বছর অচল থাকার পর ২০১৯ সালের মার্চে নির্বাচনের মাধ্যমে সচল হয় ডাকসু। ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালের মার্চে। এরপর করোনা মহামারী এবং প্রশাসনের অনীহার কারণে চার বছর ধরে বন্ধ আছে ডাকসু নির্বাচন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে এই নির্বাচন ঘিরে আমেজ লক্ষ করা গেছে। ইতিমধ্যে ডাকসু নিয়ে তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজও করছে তারা। ক্যাম্পাসে বেশ কিছু সাংগঠনিক ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে ছাত্রদল এক ধরনের নীরব ভূমিকা পালন করছে। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের আলোচনা আসার পর থেকেই প্রকাশ্যে এ সময়ের মধ্যে নির্বাচনের বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করতে দেখা যায় ছাত্রদল শীর্ষ নেতাদের। শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ মনে করছেন, তাহলে কী ছাত্রদল ডাকসু নির্বাচনের বিপক্ষে?
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শীর্ষ নেতারা বলছেন ভিন্নকথা। তারা বলছেন, ছাত্রদল কোনোভাবেই ডাকসুর বিপক্ষে নয়। বরং তারা চান সংস্কারের মধ্য দিয়েই এই নির্বাচন হোক। তাড়াহুড়ো করে নির্বাচন দিলে হিতে বিপরীত হবে বলে মনে করেন তারা। ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধন, সিনেট পুনর্গঠন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানসহ গত ১৫ বছরে যারা হামলায় জড়িত ছিলেন, তাদের বিচার নিশ্চিত এবং যৌক্তিক সময় পর্যন্ত ক্যাম্পাসে স্বাধীনভাবে কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগের দাবি জানান ছাত্রনেতারা।
কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা ডাকসুর পক্ষে। কোনো দলীয় সংগঠন ডাকসুর বিকল্প হতে পারে না। আমরা ২০১০ সাল থেকে আজকে পর্যন্ত ক্যাম্পাসে কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারিনি। সুতরাং ডাকসুর আগে আমাদের একটা যৌক্তিক সময় পর্যন্ত ক্যাম্পাসে স্বাধীনভাবে কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ দিতে হবে। ন্যাচারাল জাস্টিস অনুসারেও এই সুযোগ পাওয়া আমাদের ন্যায্য দাবি।’
এদিকে জুলাই-আগস্টের আন্দোলন শুরু হয়েছিল সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে। তবে ধীরে ধীরে এই আন্দোলন রূপ নেয় সরকার পতনের কঠোর কর্মসূচিতে। অবশেষে সফলতা আসে। এরপর আলোচনায় আসে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রসঙ্গ।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীরে ধীরে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হবে এবং জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে। এ অবস্থায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এবার নিজেদের অবস্থান ভোটের ময়দানে দেখতে চান। তারা নির্বাচনী লড়াইয়ে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
জানা গেছে, আগামী দুই মাসের মধ্যে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল। বিদ্যমান দলগুলোর তুলনায় এটি বেশ ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের হবে বলে জানা গেছে। ছাত্রনেতারা জানিয়েছেন, নতুন দলের মূল লক্ষ্য হবে জনগণের আস্থা অর্জন করা।
প্রতিষ্ঠার ৫৮ বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন হয়েছে মাত্র ছয়বার। সর্বশেষ ১৯৯০ সালে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের অন্যতম দাবি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চাকসু নির্বাচনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
আগামী ৪ জানুয়ারির সিন্ডিকেট সভায় বিষয়টি অনুমোদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এজেন্ডা হিসেবে রেখেছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোও চায় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হোক।