শিরোনাম
◈ তফসিল ঘোষণা ডাকসু নির্বাচনের ◈ কিছু দল পণ করেছে পিআর ছাড়া নির্বাচনে যাবে না: ফখরুল ইসলাম ইসলাম ◈ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে জুলাই গণহত্যার বিচার: চিফ প্রসিকিউটর ◈ পেহেলগাম হামলার ‘মূল পরিকল্পনাকারীসহ’ নিহত ৩ ◈ প্রাথমিকের ৩৪ হাজার শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ ও পদোন্নতি ◈ অভিনেতা রাজকুমার রাও এর বিরুদ্ধে ‘জামিন অযোগ্য’ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি! ◈ ভুয়া র‍্যাবকে ধাওয়া দিল আসল র‍্যাব, পথে দুই পক্ষকেই পেটাল জনতা! ◈ যুক্তরাষ্ট্রে ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থানে থাকলে ভবিষ্যৎ ভ্রমণে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ঝুঁকি ◈ এনসিপির কাছে নীলা ইস্রাফিলের প্রশ্ন— আপনারা এতদিন আমাকে কিসের ভিত্তিতে ব্যবহার করেছেন? ◈ ক্ষমতাচ্যুত হাসিনার অডিওতে এখনো প্রতিশোধপরায়ণতা: ড. আসিফ নজরুল

প্রকাশিত : ২৮ জুলাই, ২০২৫, ০৮:৩৩ রাত
আপডেট : ২৯ জুলাই, ২০২৫, ০৫:০৪ বিকাল

প্রতিবেদক : মনজুর এ আজিজ

ক্ষতিপূরণ পেতে অপেক্ষার প্রহর গুণছে ছাতক গ্যাসক্ষেত্র!

মনজুর এ আজিজ : ২০০৫ সালে ছাতক গ্যাস ফিল্ডে বিষ্ফোরণ হয়, এর পনের বছর পর ২০২০ সালে বাংলাদেশের পক্ষে রায় দেয় আন্তর্জাতিক সালিসি আদালত (ইকসিড)। সেই রায়ের পর আরও ৫ বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত প্রাইস অ্যাওয়ার্ড পায়নি ছাতক গ্যাসক্ষেত্র। যদিও প্রাইস অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার কথা ছিল ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্ষতিপূরণ যেমন প্রাপ্য তেমনি ফিল্ডটির অবশিষ্ট মজুদ গ্যাস উত্তোলন বাংলাদেশের জন্য খুবই জরুরি। তাদের মতে, প্রতিদিনই কমতে থাকা গ্যাস উৎপাদনে অনেকটা স্বস্তি এনে দিতে পারে এ ফিল্ডটি। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছাতকে পাইপলাইন বিদ্যমান, গ্যাস তুলে দ্রুত সরবরাহ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া প্রমাণিত মজুদও অনেক থাকায় ফিল্ডটি এই সময়ে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিবেচনা করা হচ্ছে।

বাপেক্স সুত্র জানিয়েছে, লন্ডনে বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সালিসি আদালত (ইকসিড) থেকে প্রথমে গত জানুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে অ্যাওয়ার্ড সংক্রান্ত আদেশ পাওয়ার বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। পরে সেটি জুনে পাওয়ার কথা জানায় আমাদের কৌশলীরা। বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী ফজলুল হক গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমাদের লিগ্যাল শাখায় এ বিষয়ে কোন আপডেট নেই। পেট্রোবাংলা সচিব বিষয়টি দেখছেন, তিনি আপডেট জানাতে পারবেন।

পেট্রোবাংলার সচিব আমজাদ হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, জুন মাসে প্রাইস অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার কথা ছিল। না পাওয়ায় জুলাই মাসে আইনজীবীদের মাধ্যমে মেইল করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন রিপ্লাই পাওয়া যায়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ছাতক গ্যাসক্ষেত্রটি আবিষ্কৃত ১৯৫৯ সালে। পরের বছর গ্যাসক্ষেত্রটিতে প্রথম কূপ খনন করে ১০৯০ মিটার থেকে ১৯৭৫ মিটারের মধ্যে নয়টি গ্যাস স্তর আবিষ্কার করা হয়। সেখান থেকে গ্যাস উত্তোলন করে ছাতক সিমেন্ট ও পেপার মিলে সরবরাহ করা হতো। ২৬ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করার পর পানি আসতে শুরু করায় কূপটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিছুদিন বন্ধ থাকার পর ২০০৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি গ্যাসক্ষেত্রটি কানাডিয়ান কোম্পানির নাইকোর হাতে তুলে দেওয়া হয়। নাইকো কর্তৃক অনুসন্ধান কূপ খননকালে ২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন দুই দফায় মারাত্মক বিস্ফোরণ ঘটে। এতে একটি স্তরের গ্যাস পুড়ে যাওয়ার ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির পর ফিল্ডটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বিস্ফোরণের ঘটনায় ক্ষতিপুরণ চেয়ে নাইকোর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পেট্রোবাংলা। হাইকোট বাংলাদেশে থাকা নাইকোর সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও সম্পাদিত চুক্তি বাতিলের আদেশ দেয়। এরপর সুপ্রিম কোর্টে যায় নাইকো, সেখানেও বাংলাদেশের পক্ষে রায় হয়। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর আন্তর্জাতিক সালিসি আদালতে (ইকসিড) যায় নাইকো।

গ্যাসক্ষেত্র বিস্ফোরণের ঘটনায় তারা দায়ী নয় মর্মে ঘোষণা চেয়ে সালিসি মোকদ্দমা দায়ের করে। অন্যদিকে ২০১৬ সালে বাপেক্স আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে গঠিত একটি কমিটির মাধ্যমে সমীক্ষা পরিচালনা করেন। এতে নাইকোর কাছে বাপেক্স ১১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং বাংলাদেশ সরকার ৮৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে ইকসিডে নালিশ করে। ইকসিড ট্রাইব্যুনাল বিস্ফোরণের জন্য যৌথ উদ্যোগ চুক্তির অধীন শর্তসমূহ ভঙ্গের জন্য নাইকোকে অভিযুক্ত করে ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেন।

নাইকোকে অভিযুক্ত করে ওই ঘটনা থেকে যাবতীয় ক্ষয়ক্ষতির জন্য বাপেক্সকে ক্ষতিপূরণ দিতে ট্রাইব্যুনাল আদেশ প্রদান করে। সেই সঙ্গে ওই ঘটনায় ছাতক গ্যাসক্ষেত্র থেকে নির্গত গ্যাসের জন্যও বাপেক্সকে ক্ষতিপূরণ দিতে নাইকোর প্রতি ট্রাইব্যুনাল নির্দেশ প্রদান করেন। পরিবেশসহ অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ইকসিডে উত্থাপনের র্নিদেশ প্রদান করা হয়। সেই ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে (প্রাইস অ্যাওয়ার্ড) অপেক্ষায় কেটে গেছে ৫ বছর। বাংলাদেশের পক্ষে লবিং ও তদবিরে ঘাটতির কারণেই বিলম্বিত হচ্ছে বলে মনে করেন অনেকেই।

সম্ভাবনাময় এই গ্যাস ফিল্ডটি ছাতক পূর্ব ও ছাতক পশ্চিম (টেংরাটিলা) নামে বিভক্ত। অগ্নিকাণ্ডে ছাতক পশ্চিমের একটি স্তুরের গ্যাস পুড়ে যায়, অন্যান্য স্তর এবং ছাতক পুর্বের মজুদ অক্ষত রয়েছে। সম্ভাব্য মজুদ ২ থেকে ৫ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট) বিবেচনা করা হয়। সেখানে গ্যাস পাওয়া গেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরবরাহ করা সম্ভব।

জানা যায়, দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোর মজুদ ফুরিয়ে আসছে, এতে প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে উৎপাদন। এক সময় দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে দৈনিক ২৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেতো এখন ১৮০০ মিলিয়ন ঘনফুটে (২৬ জুলাই) নেমে এসেছে। প্রতিদিনই এক থেকে দুই মিলিয়ন পর্যন্ত গ্যাসের উৎপাদন কমছে।

বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডে কমছে আরও বেশি। যে কোন সময়ে উৎপাদনে বড় ধরণের ধ্বসের শঙ্কা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। সেই ঘাটতি সামাল দেওয়ার মতো উপযুক্ত বিকল্প নেই পেট্রোবাংলার হাতে। দেশের চাহিদা ও সরবরাহের ঘাটতির মোকাবিলায় এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। বিদ্যমান দু’টি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের সর্বোচ্চ সক্ষমতা (১১০০ মিলিয়ন) ব্যবহার করা হচ্ছে। চাইলেও আর বাড়ানোর কোন সুযোগ নেই।

পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, দেশে দৈনিক ৮টি গ্রাহক শ্রেণিতে অনুমোদিত লোডের পরিমাণ রয়েছে ৫ হাজার ৩৫৬ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে চাহিদা ৩৮০০ থেকে ৪০০০ মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদার বিপরীতে দৈনিক ২৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। ফলে দৈনিক ঘাটতি পড়ছে ১২০০ মিলিয়নের মতো। এছাড়া প্রতিনিয়ত বাড়ছেই গ্যাসের চাহিদা।

গ্যাস সংকটে দেশের অনেক শিল্প কল-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর অনেক কারখানার উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। দেশের এ পরিস্থিতিতে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যথাযথ পরিকল্পনা নেওয়া গেলে দেশীয় উৎস থেকে আরও উৎপাদন বাড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। বিগত সরকারের দেশীয় গ্যাসের অনুসন্ধান ও উৎপাদনে ঢিলেমির কারণে আজকের এই পরিণতি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়