আধুনিক বিশ্বের তেলনির্ভর অর্থনীতি, মধ্যপ্রাচ্যের অস্থির ভূরাজনীতি এবং পরাশক্তির দ্বন্দ্ব এই তিনের সন্ধিক্ষণে এখন দাঁড়িয়ে আছে হরমুজ প্রণালী। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র, অপরদিকে ইরান। দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা ও হুমকির জেরে স্নায়ুযুদ্ধের অবস্থা এখন আর গোপন নয়, বরং প্রকাশ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক কূটনীতির টেবিল থেকে রণক্ষেত্র পর্যন্ত।
সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের এক ভয়ঙ্কর সামরিক অভিযান ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে আঘাত হানে। এমন নজিরবিহীন হামলার লক্ষ্য ছিল ইরানের পরমাণু সক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা।
কিন্তু তেহরান যে কেবল চুপ করে বসে থাকার দেশ নয়-সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে, তারা নিজেদের রক্ষায় সবকিছু করতে প্রস্তুত। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম প্রেস টিভি জানায়, দেশটির সংসদ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে, হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়া হবে। এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, কেঁপে উঠবে গোটা বিশ্ব।
এই পরিস্থিতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক নাটকীয় কূটনৈতিক পদক্ষেপে আহ্বান জানিয়েছেন চীনের প্রতি। ফক্স নিউজের এক অনুষ্ঠানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি বেইজিং সরকারকে উৎসাহ দিচ্ছি যেন তারা ইরানের সঙ্গে কথা বলে এবং হরমুজ প্রণালী বন্ধ না করার বিষয়ে বোঝায়। চীন তো নিজের তেলের জন্য এই পথের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল।”
রুবিওর সতর্কবার্তা স্পষ্ট। তিনি বলেন, “যদি ইরান প্রণালী বন্ধ করে দেয়, তাহলে সেটি হবে তাদের জন্য অর্থনৈতিক আত্মহত্যা। এটি একটি ভয়ঙ্কর ভুল। আমাদের হাতে এর মোকাবিলার জন্য অনেক বিকল্প রয়েছে, কিন্তু বিশ্বের বহু দেশের অর্থনীতিই আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
এখানেই শেষ নয়। রুবিও আরও বলেন, “হরমুজ প্রণালী বন্ধ করার মতো পদক্ষেপ একটি ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি করবে, যা আমাদের এবং অন্য অনেক দেশের পক্ষ থেকে কঠিন প্রতিক্রিয়ার দাবি রাখবে।” তার ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্র এখনও কূটনৈতিকভাবে কথা বলার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু যদি ইরান প্রতিশোধের পথ বেছে নেয়, তবে তা হবে “তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভুল।”
এদিকে, চীনা দূতাবাস এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। তবে বিষয়টি যে বেইজিংয়ের কূটনৈতিক টেবিলে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে, তা প্রায় নিশ্চিত। কারণ ইরান চীনের তেলের বড় যোগানদাতা, আর চীন বিশ্বব্যাপী শক্তি ভারসাম্যে এক ক্রমবর্ধমান প্রভাবশালী দেশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হরমুজ এখন কেবল একটি প্রণালী নয়, এটি পরিণত হয়েছে যুদ্ধ ও শান্তির সীমারেখায়। যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু হামলা ছিল একটি সরাসরি উস্কানি, আর ইরানের প্রতিক্রিয়া হয়তো আরও বিস্ফোরক হতে পারে। তাই আন্তর্জাতিক কূটনীতি এখন এক অগ্নিসংকট মোকাবিলা করছে, যেখানে একটি ভুল সিদ্ধান্তই হতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা।
