শিরোনাম
◈ ছয় দেশে ভ্রমণ করতে পারবেন এক ভিসায় ◈ আমরা জানি খামেনি কোথায়, তাকে এখনই মারছি না— ট্রাম্পের পোস্টে উত্তেজনা ◈ শহীদ পরিবার ও যোদ্ধাদের অধিকার রক্ষায় জুলাই অধ্যাদেশ: প্রতারকদের জন্য কারাদণ্ডের বিধান ◈ ট্রাম্পের নতুন বার্তা ইরান-ইসরাইল সংঘাত নিয়ে ◈ বিএনপি-এনসিপি অংশ নিলেও জামায়াত সংলাপে অনুপস্থিত: যা বললেন প্রেস সচিব ◈ আমাদের বাঁচান, আমার বাসা পুরোপুরি গুঁড়িয়ে দিয়েছে' বিবিসিকে বললেন তেহরানে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা ◈ সরকারি কাজে বাধাদান 'ক্রিমিনাল অফেন্স' করেছেন বলে অভিযোগ স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার ◈ খালেদা জিয়া, ফখরুল, মোশাররফ, গয়েশ্বর ও হাফিজের আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী যারা! ◈ কুমিল্লায় প্রেমিকের খোঁজে বেরিয়ে গণধর্ষণে শিকার তরুণী, গ্রেপ্তার ৩ ◈ ইসরায়েলি হামলায় ইরানে নিহত ৪৫২, আহত ৬৪৬

প্রকাশিত : ১৭ জুন, ২০২৫, ০৮:৩২ রাত
আপডেট : ১৮ জুন, ২০২৫, ০২:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কোন ব্যাংকে ডিপিএস (DPS) করলে সবচেয়ে বেশি লাভ পাবেন?

বাংলাদেশে কোন নির্দিষ্ট একটি ব্যাংকে ডিপিএস (DPS) করলে 'সবচেয়ে বেশি' লাভ পাওয়া যাবে, তা নিশ্চিত করে বলা বেশ কঠিন। কারণ ব্যাংকগুলো বিভিন্ন সময় তাদের নীতি পরিবর্তন করে এবং সুদের হার বা মুনাফার হার ওঠানামা করে।

তবে, একটি সাধারণ ধারণা এবং কিছু বিষয় বিবেচনা করে আপনি নিজের জন্য সেরা ব্যাংকটি বেছে নিতে পারেন। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

সাধারণ প্রবণতা:
সাধারণত, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর (যেমন: সোনালী, জনতা, অগ্রণী) তুলনায় বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক (Private Commercial Banks) এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে (Non-Bank Financial Institutions - NBFIs) সুদের হার কিছুটা বেশি থাকে।
ব্যাংক ভেদে লাভের হারের তুলনা:

১. বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক (Private Commercial Banks):
এই ব্যাংকগুলো গ্রাহক আকৃষ্ট করার জন্য প্রায়ই আকর্ষণীয় সুদের হার অফার করে। বর্তমানে কিছু বেসরকারি ব্যাংকের ডিপিএস-এ সুদের হার ৭% থেকে ৯% বা তারও বেশি হতে পারে (শর্ত সাপেক্ষে)।

উদাহরণ: ব্র্যাক ব্যাংক (BRAC Bank), দি সিটি ব্যাংক (The City Bank), ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (EBL), ডাচ্-বাংলা ব্যাংক (DBBL) ইত্যাদি।

সুবিধা: উচ্চ সুদের হার, ভালো গ্রাহক সেবা এবং আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা (অনলাইন অ্যাপ, এসএমএস ব্যাংকিং)।

২. ইসলামী ব্যাংক (Islamic Banks):
ইসলামী ব্যাংকগুলো 'সুদ' এর পরিবর্তে 'মুনাফা' প্রদান করে, যা শরিয়াহ্‌সম্মত। এই মুনাফার হার সাধারণত বেশ আকর্ষণীয় হয় এবং অনেক সময় বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছাকাছি বা তার চেয়েও বেশি হতে পারে।

উদাহরণ: ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (IBBL), আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংক (AIBL), সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (SIBL) ইত্যাদি।

সুবিধা: যারা শরিয়াহ্‌সম্মতভাবে সঞ্চয় করতে চান, তাদের জন্য এটি সেরা বিকল্প। মুনাফার হারও বেশ ভালো।

৩. রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক (State-Owned Commercial Banks):
এই ব্যাংকগুলোতে সুদের হার সাধারণত বেসরকারি ব্যাংকগুলোর চেয়ে কিছুটা কম থাকে। তবে এগুলো সরকারের মালিকানাধীন হওয়ায় মানুষ বেশি নিরাপদ বোধ করে।

উদাহরণ: সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক।
সুবিধা: সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও নির্ভরযোগ্যতা। দেশব্যাপী বিশাল নেটওয়ার্ক।

৪. আর্থিক প্রতিষ্ঠান (Non-Bank Financial Institutions - NBFIs):
ব্যাংকের বাইরে কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ডিপিএস স্কিম অফার করে এবং তাদের সুদের হার অনেক সময় ব্যাংকগুলোর চেয়েও বেশি হয়।

উদাহরণ: আইডিএলসি ফাইন্যান্স (IDLC Finance), লংকাবাংলা ফাইন্যান্স (LankaBangla Finance) ইত্যাদি।

সুবিধা: সাধারণত সর্বোচ্চ সুদের হার পাওয়া যায়।

বিবেচ্য বিষয়: এগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হলেও, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রতিষ্ঠানের নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত।

আপনার জন্য সেরা ব্যাংক কোনটি, তা কীভাবে বুঝবেন?
কোনো একটি ব্যাংকের নাম সুপারিশ করার চেয়ে, আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হলো কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে নিজের গবেষণা করা:

১. বর্তমান সুদের/মুনাফার হার তুলনা করুন: কয়েকটি পছন্দের ব্যাংকের ওয়েবসাইটে যান অথবা সরাসরি তাদের শাখায় ফোন করে বা ভিজিট করে বর্তমান ডিপিএস-এর সুদের হার জেনে নিন।

২. শর্তাবলী পড়ুন: শুধু সুদের হার দেখলেই হবে না। ডিপিএস ভাঙানোর নিয়ম, দেরিতে قسط জমা দেওয়ার জরিমানা, এবং অন্যান্য লুকানো চার্জ আছে কি না তা জেনে নিন।

৩. ব্যাংকের নির্ভরযোগ্যতা ও গ্রাহক সেবা: ব্যাংকের সুনাম, গ্রাহক সেবার মান এবং আপনার বাসার কাছাকাছি শাখা বা এটিএম বুথ আছে কি না, তা বিবেচনা করুন।

৪. আপনার প্রয়োজন: আপনি কি সর্বোচ্চ লাভ চান, নাকি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা? আপনি কি ইসলামী পদ্ধতিতে সঞ্চয় করতে আগ্রহী? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আপনাকে সঠিক ব্যাংক বেছে নিতে সাহায্য করবে।

সারসংক্ষেপ:
সর্বোচ্চ লাভের জন্য: বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক অথবা কোনো নির্ভরযোগ্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান (NBFI) বেছে নিতে পারেন।
সর্বোচ্চ নিরাপত্তার জন্য: রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোই সেরা।
শরিয়াহ্‌সম্মত সঞ্চয়ের জন্য: ইসলামী ব্যাংকগুলো আপনার জন্য সঠিক পছন্দ।

ট্রিপল এ (AAA) রেটিংপ্রাপ্ত ব্যাংকগুলো
এই শ্রেণির ব্যাংকগুলো সবচেয়ে স্থিতিশীল ও নিরাপদ ধরা হয়।

ইস্টার্ন ব্যাংক:

১-৬ বছর: ৯.২৫%,
৭-২০ বছর: ৯%
৫ বছরে লাভ: ৳৭৬,৫০০,
১০ বছরে লাভ: প্রায় ৳১,৯৪,৯৬০
ডাচ-বাংলা ব্যাংক:

সুদের হার: ৭%
৫ বছরে লাভ: ৳৭০,০০০,
১০ বছরে লাভ: ৳১,৬৪,১২৮
ব্র্যাক ব্যাংক:

৩-১০ বছর: ৯%
৫ বছরে লাভ: ৳৭৫,৯৯০,
১০ বছরে লাভ: প্রায় ৳১,৯৪,৯৬৬
প্রিমিয়ার ব্যাংক:

১০ বছর: ৯.৭৫%,
১২ বছর: ১০%
১০ বছরে লাভ: ৳২,০০,৫৭৮
ডাবল এ (AA) এবং এ-প্লাস (A+) রেটিংপ্রাপ্ত ব্যাংক
উচ্চ গ্রেডের ব্যাংক হলেও কিছুটা কম স্থিতিশীল।

প্রাইম ব্যাংক:

সব মেয়াদে ৯% ইন্টারেস্ট
১০ বছরে লাভ: প্রায় ৳১,৯৪,০০০
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (MTB):

১০ বছরে লাভ: ৳১,৮৭,৯২১
ওয়ান ব্যাংক:

১০ বছর: ১১% ইন্টারেস্ট
১০ বছরে লাভ: প্রায় ৳২,১৪,০০৪
IFIC ব্যাংক:

সব মেয়াদে ১০% ইন্টারেস্ট
১০ বছরে লাভ: প্রায় ৳১,৯৯,১০৯
মার্কেন্টাইল ব্যাংক:

১০ বছর: ১২% ইন্টারেস্ট
১০ বছরে লাভ: প্রায় ৳২,৩২৩৯
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
একই সুদের হারের পরও মেয়াদ শেষে প্রাপ্ত অর্থ ব্যাংকভেদে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। এর কারণ হতে পারে:

কম্পাউন্ড ইন্টারেস্ট ব্যবস্থায় পার্থক্য
ট্যাক্স কাটা বা না কাটা
বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাব পদ্ধতির ভিন্নতা
সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে কী বিবেচনা করবেন?

ব্যাংকের ক্রেডিট রেটিং (Triple A, Double A ইত্যাদি)
সুদের হার (ইন্টারেস্ট বা প্রফিট)
কত বছর মেয়াদে করতে চান
ব্যাংকের স্থায়িত্ব ও সুনাম
আপনার প্রয়োজন—মুনাফা বেশি না নিরাপত্তা বেশি?

শেষ কথা: সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, কমপক্ষে ৩-৪টি ভিন্ন ধরনের ব্যাংকের (যেমন: একটি বেসরকারি, একটি ইসলামী, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত) ডিপিএস স্কিম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে একটি तुलनाমূলক চার্ট তৈরি করুন। এরপর আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সেরা সিদ্ধান্তটি নিন। ইন্টারন্টে।

সূত্র: বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রেডিট রেটিং, ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, হিসাব বিভাগ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়